ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ডিঙি নৌকাই এখন একমাত্র ভরসা 

সাজিদুর রহমান রাসেল, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২২ ঘণ্টা, জুলাই ২৫, ২০২০
ডিঙি নৌকাই এখন একমাত্র ভরসা  যাত্রী পার করছেন মৌসুমি মাঝি। ছবি: বাংলানিউজ

মানিকগঞ্জ: বাড়ির চারপাশে থৈ থৈ করছে পানি, প্রতিদিন পদ্মার পানি বেড়ে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। পানি বাড়ায় এ অঞ্চলের রাস্তা-ঘাট পানির নিচে তলিয়ে গেছে, আর এ সব পানিবন্দি মানুষের চলাচলের জন্য এখন একমাত্র ভরসার বাহন হয়ে দাঁড়িয়েছে ডিঙি নৌকা।

 

আন্ধারমানিক এলাকার মহিদুর রহমান মহিদ বলেন, নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য আনা-নেওয়ার জন্য নৌকার উপর ভরসা করে থাকতে হচ্ছে আমাদের। হরিরামপুরের পদ্মার পানি হু হু করে বেড়েই চলেছে, ফলে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে কয়েক হাজার মানুষ। পায়ে হাঁটা পাঁচ মিনিটের পথ পারি দিতে বর্তমানে সময় লাগছে প্রায় আধা ঘণ্টা, আবার অনেক সময় নৌকা না পেলে ঘণ্টার উপরেও অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে।

আঞ্চলিক পিচঢালা পাকা রাস্তায় এখন হাঁটু পানি। অনেক স্থানে তীব্র স্রোতের কারণে রাস্তা ভেঙে পড়ায় চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এসব রাস্তায় চলাচলের জন্য মৌসুমি নৌকা চালকরা বাড়তি আয়ের উৎস হিসেবে বেছে নিয়েছেন নৌকায় যাত্রী পারাপার।  

সরেজমিনে দেখা যায়, জেলার হরিরামপুর উপজেলা নিম্নাঞ্চলগুলোতে বর্ষার পানি প্রবেশ করায় প্রায় সব কয়টি ইউনিয়নের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এ সব মানুষের জেলা শহর কিংবা উপজেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম হয়ে পড়েছে নৌকা। খাবার সংগ্রহের জন্য মানুষকে বাজারে আসতে হয় নৌকায় করে। অথচ বর্ষার আগে যে রাস্তা পার হতে সময় লাগতো পাঁচ মিনিট এখন সেই রাস্তা নৌকায় পার হতে সময় লাগছে আধা ঘণ্টারও বেশি। আবার অনেক সময় পার হতে নৌকার জন্য ঘণ্টার উপরে অপেক্ষা করতে হচ্ছে।  

অসুস্থ কিংবা অন্তঃসত্ত্বা মায়েদের স্বাস্থ্যসেবা নিতে হলে আসতে হচ্ছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে, কিন্তু পানিবন্দি হওয়ায় ওই সব অসুস্থ মানুষগুলোকে চিকিৎসাসেবা নিতে আসতে হলে নানান বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। হরিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চারপাশ পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় স্বাস্থ্যসেবা নিতে আসতে হয় নৌকায় করে।  

হরিরামপুরে পাটনি সুশিল মাঝি বাংলানিউজকে বলেন, আগে নদী থেকে মাছ ধরে বিক্রি করে সংসার চালাতাম। বর্ষার পানি আসায় মাছ ধরা বাদ দিয়ে নৌকায় যাত্রী পার করছি। আন্ধারমানিক মোড় থেকে হাসপাতাল পর্যন্ত যাত্রী আনা নেওয়া করছি। যাত্রী প্রতি ভাড়া নিচ্ছি ১০ টাকা, তাতে যে টাকা আয় হয় সেই টাকা দিয়েই বর্ষার মধ্যে কোনোমতে সংসারের চাহিদা মিটাচ্ছি।  

রবি সূত্রধর নামে আরো এক মৌসুমি মাঝি বলেন, আমি আগে লেদ মেশিনে কাজ করতাম, করোনায় কাজ-কাম বন্ধ, আবার এখন বর্ষা, বাড়িতে বসে আছি। তাই দুটা টাকা আয়ের জন্য নৌকায় যাত্রী পারাপার করছি। খুব একটা বেশি সময় নৌকা চালাতে পারি না কারণ পানিতে তীব্র স্রোত।  

হরিরামপুর উপজেলার দিয়াবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল কাদের মোল্লা বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের হরিরামপুর গ্রামটা নিম্ন অঞ্চল হওয়ায় প্রতি বছর বর্ষার পানি প্রবেশ করে লোকালয় তলিয়ে যায়। তবে এ বছর অনেক আগেই বর্ষার পানিতে লোকালয় প্লাবিত হয়েছে। বর্ষার পানি প্রবেশ করায় ফসলি জমির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অধিকাংশ জায়গা পানির নিচে তলিয়ে থাকায় চলাচলের সমস্যা দেখা দিয়েছে। নৌকা ছাড়া চলাচল করা যায় না, আবার নৌকা সব সময় পাওয়াও যায় না, নৌকার জন্য অপেক্ষা করতে হয় অনেকটা সময়। নৌকায় করে চলাচলে সুবিধার চেয়ে ভয় বেশি শিশু, বৃদ্ধ ও অন্তঃসত্ত্বা নারীদের জন্য।  

জেলা প্রশাসক এস এম ফেরদৌস বাংলানিউজকে বলেন, বর্ষার পানিতে জেলার ২৩১ বর্গ কিলোমিটার এলাকা প্লাবিত হয়েছে, কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে এবং ৯১৯৬ হেক্টর ফসলি জমির ক্ষতি হয়েছে। ত্রাণ সহায়তা হিসেবে ১৩০ মেট্রিক টন চাল, ১৭০০ প্যাকেট শুকনো খাবার, ১,৫০,০০০ হাজার টাকার শিশু খাদ্র, ১,৫০,০০০ হাজার টাকার গো-খাদ্য পাওয়া গেছে। মজুদকৃত ত্রাণ সামগ্রী জিআর ২০ মেট্রিক টন, জিআর ক্যাশ ২,৫০,০০০ হাজার, ৩০০ প্যাকেট শুকনো খাবার, ৫০ হাজার শিশু খাদ্য, ৫০,০০০ হাজার টাকার গো-খাদ্য রয়েছে।  

এছাড়া অতিরিক্ত ত্রাণ যদি প্রয়োজন হয় সেজন্য আরো জিআর ১ হাজার মেট্রিক টন, জিআর ক্যাশ ৫০ লাখ টাকা, ঢেউটিন ৫০০ বান্ডিল এবং ৩৫০০ প্যাকেট শুকনো খাবার প্রস্তুত রয়েছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।      
 
বাংলাদেশ সময়: ১৭২০ ঘণ্টা, জুলাই ২৫, ২০২০
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।