ঢাকা, রবিবার, ১১ কার্তিক ১৪৩১, ২৭ অক্টোবর ২০২৪, ২৩ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

রাজশাহীতে চোখ রাঙাচ্ছে কীর্তিনাশা পদ্মা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১৯ ঘণ্টা, জুলাই ১৬, ২০২০
রাজশাহীতে চোখ রাঙাচ্ছে কীর্তিনাশা পদ্মা

রাজশাহী: উত্তরাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি ক্রমেই অবনতি হচ্ছে। শ্রাবণী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে এরইমধ্যে যমুনার পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে লোকালয়ের মধ্যে ঢুকে পড়েছে বন্যার পানি। আর রাজশাহীতে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে কীর্তিনাশা পদ্মার পানিও। 

রাজশাহীতে পদ্মার পানির বিপৎসীমা নির্ধারণ করা আছে ১৮ দশমিক ৫০ মিটার। বৃহস্পতিবার (১৬ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টায় পদ্মায় পানির উচ্চতা মাপা হয়েছে ১৬ দশমিক ৩০ মিটার।

অর্থাৎ বর্তমানে রাজশাহীতে বিপৎসীমার ২ দশমিক ২০ মিটার (২২০ সেন্টিমিটার) নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে রাজশাহীর পবা, বাঘা-চারঘাট ও গোদাগাড়ীসহ নদী তীরবর্তী এলাকায় ভাঙনের আশঙ্কা করা হচ্ছে।

রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) গেজ রিডার এনামুল হক বাংলানিউজকে জানান, গত ১২ জুলাই সন্ধ্যা ৬টায় রাজশাহী পয়েন্টে পদ্মার পানির উচ্চতা মাপা হয়েছিল ১৫ দশমিক ২৬ মিটার। এর পর গত ১৩ জুলাই ছিল ১৫ দশমিক ৬০ মিটার। গত ১৪ জুলাই পানির উচ্চতা ছিল ১৫ দশমিক ৯০ মিটার। ১৬ জুলাই সন্ধ্যা ৬টায় পদ্মায় পানির উচ্চতা মাপা হয়েছে ১৬ দশমিক ৩০ মিটার। পদ্মার বিপৎসীমা ১৮ দশমিক ৫০ মিটার। ফলে ২ দশমিক ২০ মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে পানি।  

এদিকে পদ্মার পানি হু হু করে বাড়তে থাকায় ভাঙনের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে রাজশাহীর পবা, বাঘা, চারঘাট ও গোদাগাড়ী উপজোর নদীর তীরবর্তী এলাকা। এর পরও ভাঙন ঠেকাতে এখন পর্যন্ত কার্যকর কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি পানি উন্নয়ন বোর্ড। রাজশাহী মহানগর এলাকায় শহররক্ষা বাঁধে ফাটল দেখা দিয়েছিল ২০১৬ সালে। ওইসময় পদ্মা ঘেঁষে থাকা শ্রীরামপুর পুলিশ লাইন এলাকার বাঁধে তিন মিটার এলাকাজুড়ে ফাটল দেখা দেয়। ওইসময় তড়িঘড়ি করে জিও ব্যাগ ফেলে কোনো রকমে জোড়াতালি দিয়ে বাঁধের ভাঙন ঠেকানো হয়। এর পর শহর রক্ষা বাঁধের ওই অংশে আর সংস্কারের ছোঁয়া লাগেনি। এর ওপর বর্ষা মৌসুমের শুরু থেকে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় বিগত বছরের তুলনায় এবার রাজশাহীর পদ্মায় আগে পানি আসে। এতে বন্যার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।  

.পানি বাড়তে থাকায় রাজশাহীর পবা উপজেলার চরখানপুর ও বাঘার আলিপুর-নাপিতপাড়া এলাকায় নদীর পাড়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এরইমধ্যে অর্ধশতাধিক ঘর-বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। স্থানীয়রা বলছেন, ভাঙন ঠেকাতে কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে।

রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী কোহিনুর আলম জানিয়েছেন, রাজশাহী শহররক্ষা বাঁধের শ্রীরামপুর অংশ সংস্কারের জন্য নতুন পরিকল্পনা এরইমধ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে। যা এখনও পাস হয়নি। তবে জেলার বাঘা উপজেলায় নদীপাড় সংস্কারের প্রকল্প পাস হয়ে গেছে। শিগগিরই কাজ শুরু হবে। এছাড়া রাজশাহী পয়েন্টে পদ্মার পানি এখনও বিপৎসীমার অনেক নিচে আছে। তাই এখনই শহররক্ষা বাঁধ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। শহররক্ষা বাঁধে কোনো সমস্যা হলে প্রাথমিক পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য তাদের যথেষ্ট প্রস্তুতি রয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।

এদিকে গেল ১৭ বছরে রাজশাহীতে পদ্মার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে মাত্র দু’বার। এরমধ্যে ২০০৪ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত টানা ৮ বছর রাজশাহীতে পদ্মার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেনি। কেবল ২০০৩ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর রাজশাহীতে পদ্মার সর্বোচ্চ উচ্চতা ছিল ১৮ দশমিক ৮৫ মিটার। এরপর ২০১৩ সালের ৭ সেপ্টেম্বর রাজশাহীতে পদ্মা বিপৎসীমা অতিক্রম করেছিল। ওই বছর পদ্মার উচ্চতা দাঁড়িয়েছিল ১৮ দশমিক ৭০ মিটার। এরপর আর এ রেকর্ড ভাঙেনি।

বাংলাদেশ সময়: ২০১৫ ঘণ্টা, জুলাই ১৬, ২০২০
এসএস/আরবি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।