সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাহারি ডিগ্রি সম্বলিত না আরকম সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে রোগীদের প্রতারিত করে চলেছেন এসব ভুয়া চিকিৎসক। সব মিলিয়ে খুলনার গ্রামে-গঞ্জে চিকিৎসা সেবার নামে চলছে চরম অরাজকতা।
এ চিকিৎসকদের ভুল চিকিৎসা, অবহেলা ও বাণিজ্যের গেঁড়াকলে পড়ে অনেক রোগী মারা যাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠছে। আবার অনেকেই তাদের দেওয়া ভুল ওষুধ সেবন করে আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানা যায়, ২০১০ সালের ৯ ডিসেম্বর সরকার ‘বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল’ নামে একটি আইন অনুমোদন দেয়। এই আইন মতে, এমবিবিএস ও বিডিএস পাশ করা চিকিৎসক ছাড়া অন্য কেউ নামের আগে ডাক্তার বা ডিগ্রি লিখতে পারবেন না। কিন্তু খুলনার বিভিন্ন অঞ্চলে এ আইন লঙ্ঘনের চিত্র ভুরভুরি।
উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে সরকারি উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও কমিউনিটি ক্লিনিক থাকলেও নানা কারণে সাধারণ মানুষ এসব থেকে চিকিৎসা বঞ্চিত হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে সরকার নিযুক্ত স্বাস্থ্যকর্মী নিয়মিত কর্মস্থলেও যান না, ফলে চিকিৎসা সেবা পান না সাধারণ মানুষ। এসবের সুযোগে নিয়েও এই ভুয়া চিকিৎসক শ্রেণির উত্থান ঘটছে বলে অনেকের মত।
তপন বিশ্বাস নামে ডুমুরিয়ার রূপরাম গ্রামের এক বাসিন্দা বাংলানিউজকে বলেন, করোনার সময় গ্রামের ভুয়া এসব চিকিৎসকদের কাছে মানুষ বেশি যাচ্ছে। শহরের হাসপাতাল, ক্লিনিকে করোনার ভয়ে অনেকেই যেতে চাচ্ছে না। তাই তারা ছুটছে এই ভুয়া চিকিৎসকদের কাছে।
সার্বিক পরিস্থিতিতে ভুয়া চিকিৎসকদের খপ্পরে পড়ে সাধারণ মানুষদের জীবন ঝুঁকির মধ্যে পড়ায় সম্প্রতি এদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে শুরু করেছে খুলনা জেলা কার্যালয়ের জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত রোববার (১২ জুলাই) থেকে মঙ্গলবার (১৪ জুলাই) পর্যন্ত খুলনার ডুমুরিয়া ও ফুলতলা উপজেলায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অভিযানে ৩ ভুয়া চিকিৎসককে জরিমানা করা হয়।
এর মধ্যে মঙ্গলবার (১৪ জুলাই) ডুমুরিয়ার কাঁঠালতলা বাজারে ডাক্তার না হয়ে তা উল্লেখ করে মিথ্যা বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রতারণা করায় ‘জননী মেডিকেল’র জয়ন্ত দাশকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। তিনি এমবিবিএস চিকিৎসকদের মতো চিকিৎসাপত্রের প্যাডে নিজের নামের আগে ডা. লিখে প্রতারণা করে আসছিলেন। নামের পরেও ভুয়া বিভিন্ন ডিগ্রী লাগিয়ে আসছিলেন তিনি।
এর আগের দিন সোমবার প্রশাসনিক ব্যবস্থায় ফুলতলা উপজেলার ছাতিয়ানি বাজার এলাকায় একই রকম প্রতারণার দায়ে ‘চৌধুরি ফার্মেসি’র মালিক আব্দুস সবুর চৌধুরীকে ২ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। তিনি পেশায় মূলত শিক্ষক।
এরও আগে গত রোববার (১২ জুলাই) ডুমুরিয়া উপজেলার ধামালিয়া বাজার এলাকায় মিথ্যা বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রতারণার দায়ে ‘ফিরোজা ফার্মেসি’র মলিক রাজু আহমেদকে ৩ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
এসব অভিযান প্রসঙ্গে জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক শিকদার শাহীনুর আলম জানান, চিকিৎসক সেজে মিথ্যা বিজ্ঞাপন দিয়ে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছিলেন এসব ভুয়া চিকিৎসক। তিন দিনে এরকম তিন ভুয়া চিকিৎসককে জরিমানা করা হয়েছে। অভিযানের খবর পেলেই সবাই চেম্বার ও দোকান বন্ধ করে পালায়।
জেলা সিভিল সার্জন ডা. সুজাত আহমেদ বলেন, বুধবার (১৫ জুলাই) থেকে ভুয়া চিকিৎসকদের ধরতে উপজেলা পর্যায়ে সিভিল সার্জনের অফিসের পক্ষ থেকে অভিযান শুরু হবে। এমবিবিএস ও বিডিএস পাশ করা চিকিৎসক ছাড়া অন্য কেউ নামের আগে ডাক্তার লিখতে পারবে না। বর্তমানে যারা পল্লী চিকিৎসক রয়েছেন, তাদের কোনো প্রশিক্ষণ বা সরকারি সার্টিফিকেট নেই, তারাও ভুয়া চিকিৎসক। আবার অনেকে আছেন, ফার্মেসি খুলে লাইসেন্সবিহীন ডাক্তার সেজেছেন, তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৪২ ঘণ্টা, জুলাই ১৫ , ২০২০
এমআরএম/এইচজে