কুড়িগ্রাম-সোনাহাট স্থলবন্দর মহাসড়কের চন্ডীপুর ও চৌমোহনী এলাকায় সড়কের ওপর দিয়ে বন্যার পানি প্রবাহিত হওয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
মঙ্গলবার (১৪ জুলাই) বিকেলে ধরলার সেতু পয়েন্টে বিপৎসীমার ১০৩ সেন্টিমিটার, ব্রহ্মপুত্রের চিলমারী পয়েন্টে বিপৎসীমার ৯৭ সেন্টিমিটার ও নুনখাওয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৯১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়েছে।
নতুন করে পানি বাড়ায় কুড়িগ্রাম জেলার ৬০টি ইউনিয়নের অন্তত পাঁচ শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়ে প্রায় আড়াই লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ধরলা, ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমার ও তিস্তার পানি বাড়ায় কুড়িগ্রাম সদর, রাজারহাট, ভুরুঙ্গামারী, নাগেশ্বরী, উলিপুর, চিলমারী, রৌমারী ও রাজীবপুর উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে পানিবন্দি পরিবারগুলো শুকনো জায়গার অভাবে রান্নার বিড়ম্বনায় পড়েছে।
পাশাপাশি দুর্গত এলাকায় বিশুদ্ধ খাবার পানি সংকট ও স্যানিটেশন সমস্যা তীব্র আকার ধারণ করছে। বয়োবৃদ্ধ ও শিশুসহ গবাদি পশু নিয়ে চরম বিড়ম্বনায় পড়েছে বানভাসিরা।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়নের সারডোব ও নাগেশ্বরী উপজেলায় মহাসড়কের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় এ উপজেলার হাছনাবাদ, নেওয়াশি, ভিতরবন্দ, পৌরসভা, ফুলবাড়ি উপজেলার ভাঙ্গামোড়, বড়ভিটা এবং কুড়িগ্রাম সদরের ভোগডাঙ্গা, ঘোগাদহ, পাঁচগাছীসহ প্রায় ৪৫টি গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হয়েছে।
এ গ্রামগুলোতে বন্যার পানিতে বাড়িঘরের ভেতর ধান-চাল, আসবাবপত্রসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পানিতে ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে, ভেসে গেছে হাসঁ-মুরগি। দোকানঘরে পানি ওঠায় জিনিসপত্র ভিজে লোকসান গুণতে হচ্ছে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের।
নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় লোকজন পরিবার-পরিজন নিয়ে বাঁধের রাস্তা ও মহাসড়কে আশ্রয় নিয়েছে। প্রথম দফায় যারা আক্রান্ত হয়েছিল, তারা ১৮দিন ধরে রাস্তার ধারে পলিথিন দিয়ে শেড করে সেখানে আশ্রয় নিয়েছে। রাত ভর মুষলধারে বৃষ্টি ও বাতাসের কারণে বানভাসিরা চরম দুর্ভোগের মধ্যে রাত কাটাচ্ছে।
কুড়িগ্রাম সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আলী নুরাইন বাংলানিউজকে জানান, কুড়িগ্রাম-নাগেশ্বরী সড়কের চন্ডিপুর নামক স্থানে মহাসড়কের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। রাস্তার যাতে ক্ষতি না হয় এজন্য আমরা স্রোতের তীব্রতা ঠেকাতে বস্তা দিয়ে সেগুলো নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছি।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, উজানের ঢলে জেলার সবক’টি নদ-নদীর পানি বাড়া অব্যাহত রয়েছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টা ব্রহ্মপুত্রের পানি বাড়া অব্যাহত থাকার কারণে এর অববাহিকায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে। তবে ধরলা ও তিস্তার পানি কমতে শুরু করবে।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মো. রেজাউল করিম বাংলানিউজকে জানান, পানিবন্দি মানুষকে উদ্ধারে প্রয়োজনীয় নৌকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া জেলায় ৪৩৮টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ৪০০ মেট্রিক টন চাল, ১১ লাখ টাকা ও তিন হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার উপজেলা পর্যায়ে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া শিশু ও গো-খাদ্য বিতরণেরও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৫ ঘণ্টা, জুলাই ১৪, ২০২০
এফইএস/আরআইএস/