ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

চরম সংকটে কিন্ডারগার্টেন শিক্ষকরা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০০৬ ঘণ্টা, জুলাই ১৪, ২০২০
চরম সংকটে কিন্ডারগার্টেন শিক্ষকরা

খুলনা: বাড়িওয়ালা ভাড়ার জন্য প্রতিনিয়ত চাপ দিচ্ছেন। তারা বলছেন, রোজার ঈদের সময় কিছু দেননি। এখন না দিলে হবে কী করে। কিন্তু আমরা কোথা থেকে দেব। স্কুল বন্ধ। ছাত্র-ছাত্রীরা আসছে না। কোনো আয় নেই। যে কারণে শিক্ষকদেরও বেতন দিতে পারছি না। জানি না স্কুল বন্ধ করে দিতে হয় কি-না।

সম্প্রতি খুলনা মহানগরীর বাবুখান রোডের হীচাক প্রতিবন্ধী স্কুলের পরিচালক মাহবুবা চৌধুরী অনেকটা হতাশার সুরে কথা বলছিলেন বাংলানিউজের সঙ্গে।

তিনি আরও বলেন, কিন্ডারগার্টেন স্কুলের শিক্ষকরা নামমাত্র বেতনে চাকরি করেন।

বেতনের পাশাপাশি টিউশনি করিয়ে কোনোমতে তাদের সংসার চালাতে হয়। করোনার মধ্যে চার মাস ধরে টিউশনিও বন্ধ আছে। তারা পড়েছেন মহাসমস্যায়। আমরা স্থানীয় প্রশাসনের কাছে আবেদন করেও কোন সহযোগিতা পাইনি।

মহানগরীর মোক্তার হোসেন সড়কের আল-নূর আদর্শ একাডেমির প্রধান শিক্ষক মো. আজিজুল হক বাংলানিউজকে বলেন, স্কুল বন্ধ। কবে খুলবে জানা নেই। শিক্ষার্থী নেই। তাই বেতনও নেই শিক্ষকদের। এ অবস্থা কবে ঠিক হবে, তাও বলা যাচ্ছে না। সে অনিশ্চয়তায় অনেক অভিভাবক পরিবার নিয়ে গ্রামে চলে গেছেন।

তিনি বলেন, শিক্ষকদের বেতন তো দূরের কথা, বাড়ি ভাড়া দিতে না পারায় স্কুলই বন্ধ করে দেওয়ার উপক্রম হয়েছে। আমাদের স্কুলে সবমিলে ২০ জন শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছেন। বেঁচে থাকতে সরকারের সহযোগিতা চান তিনি।

কয়েকজন শিক্ষক জানান, কিন্ডারগার্টেনের স্কুলগুলোর বেতন হয় শিক্ষার্থীদের ফি আর টিউশনি থেকে। ফি আদায় করা যাচ্ছে না। আবার নিষেধাজ্ঞার কারণে টিউশনিও করানো যাচ্ছে না। যে কারণে অনেকটা মানবেতর জীবনযাপন করছেন শিক্ষকরা। কেউ কেউ আয় না থাকায় গ্রামেও পাড়ি জমিয়েছেন। লজ্জায় ত্রাণের জন্য হাত না পাততে পেরে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন অনেকে।

শিক্ষকরা বলেন, প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের কারণে সারাদেশের মতো খুলনার কিন্ডারগার্টেনও বন্ধ থাকায় দেড় শতাধিক স্কুলের প্রায় তিন হাজার শিক্ষক-কর্মচারী মানবেতর জীবনযাপন করছেন। করোনার এই সময়ে সরকারের পক্ষ থেকে অনেকেই সুযোগ-সুবিধা পেলেও কিন্ডারগার্টেনে স্বল্প বেতনে চাকরি করা শিক্ষকরা কিছুই পাননি।

সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রতিটি স্কুল তালাবদ্ধ। অনেক প্রতিষ্ঠান ভাড়া না দিতে পেরে ক্লাসরুম ছেড়ে দিয়ে অফিসরুমে বেঞ্চ, টেবিলসহ আসবাবপত্র রেখেছেন। বন্ধ স্কুলগাড়ির চাকা, ধুলোপড়া খেলার সামগ্রীও।

বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন খুলনা বিভাগের সাধারণ সম্পাদক মিনা অছিকুর রহমান দোলন বাংলানিউজকে বলেন, মার্চের মাঝামাঝি সময়ে সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক দেশের সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলোও বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এতে করে একদিকে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হবার পাশাপাশি অনিশ্চয়তার মধ্যে দিনাতিপাত করছেন এসব কিন্ডারগার্টেন স্কুলের পরিচালক ও শিক্ষকরা। গোটা খুলনা জেলায়ও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। এছাড়া দেশের শতকরা ৯৫ ভাগ কিন্ডারগার্টেন স্কুল পরিচালিত হয় ভাড়া বাড়িতে।

তার তথ্য মতে, খুলনা জেলায় ২৪১টি কিন্ডারগার্টেন স্কুল রয়েছে। এরমধ্যে খুলনা সদরেই রয়েছে দেড় শতাধিক কিন্ডারগার্টেন। এসব স্কুলে প্রায় ৩০ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। কর্মরত রয়েছেন তিন হাজারের বেশি শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী। বাড়িভাড়া ও শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন, বিদ্যুৎ বিলসহ অন্যান্য খরচ যোগাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালকদের। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে বাড়িভাড়া ও শিক্ষক, কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের বেতন পরিশোধ হয়নি।

এ পরিস্থিতিতে স্কুলের বাড়িওয়ালাদের ভাড়ার ব্যাপারে কিছুটা নমনীয় হওয়ার দাবি জানান তিনি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে স্কুলগুলো খুললে সব ঝামেলার অবসান ঘটবে বলেও আশা দেন তিনি।

কিন্ডারগার্টেন স্কুল শিক্ষা খাতে অসামান্য অবদান রাখছে। মানসম্মত শৈশব উন্নয়ন ও প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা উভয় ক্ষেত্রেই কিন্ডারগার্টেনের অবদান রয়েছে। সেই দিক বিবেচনা করে করোনা পরিস্থিতিতে বিপর্যস্ত কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলোর জন্য আর্থিক অনুদান ও সহজ শর্তে ঋণের দাবি জানান মিনা অছিকুর রহমান দোলন।

কিন্ডারগার্টেন শিক্ষকদের জন্য সরকারিভাবে প্রণোদনার ব্যবস্থা আছে কি-না, জানতে চাইলে খুলনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. আহসান উল্লাহ শরিফী বাংলানিউজকে বলেন, আমি নতুন যোগদান করেছি। বিষয়টি আমার জানা নেই।

বাংলাদেশ সময়: ১০০৪ ঘণ্টা, জুলাই ১৪, ২০২০
এমআরএম/টিএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।