ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

মানবপাচার-অর্থপাচার রোধে প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৫৮ ঘণ্টা, জুলাই ১৩, ২০২০
মানবপাচার-অর্থপাচার রোধে প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছা যৌথভাবে টিআইবি ও কেটিএস আয়োজিত ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলন

ঢাকা: মানবপাচার ও অর্থপাচার বন্ধে রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রয়োজন বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। অর্থ ও মানবপাচার রোধে আইনের কার্যকর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষকে জোরালো পদক্ষেপ নেওয়ার তাগাদাও দিয়েছেন তারা।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, মানবপাচার ও অর্থপাচার আন্তর্জাতিক সমস্যা। এই সমস্যা দূর করতে প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছা।

রোববার (১২ জুলাই) বিকেলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) ও কুয়েত ট্রান্সপারেন্সি সোসাইটির (কেটিএস) যৌথভাবে আয়োজিত ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এ তাগিদ দেওয়া হয়।

‘সংঘবদ্ধ অপরাধ মোকাবিলায় নাগরিক সমাজের ভূমিকা’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে ঘুরেফিরে ‘পাপলুকাণ্ড’ উঠে আসে।

সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল’র (টিআই) সভাপতি ডেলিয়া ফ্যারাইরা রোবিও বলেন, একটি অপরাধ আরেকটি অপরাধকে উৎসাহিত করে। অর্থপাচার রোধ করতে পারলে অন্য অপরাধগুলোও কমে আসবে।
 
তিনি বলেন, সংঘবদ্ধ অপরাধগুলোর মধ্যে মানবপাচার অন্যতম। অর্থপাচার ও মানবপাচার রোধ না হওয়ার পেছনে আইনগত বিষয় জড়িত। অনেক দেশে যথাযথ আইন নেই। আবার অনেক দেশে আইন থাকলেও তার যথাযথ প্রয়োগ নেই। এজন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছার প্রয়োজন। রাজনৈতিক সদিচ্ছা না থাকলে অপরাধ কমে না। আইনের কার্যকর প্রয়োগ হয় না।

সারা দুনিয়ায় দুর্নীতি নিয়ে কাজ করা সংস্থাটির শীর্ষ এই ব্যক্তি বলেন, দীর্ঘসূত্রিতা সংঘবদ্ধ অপরাধ রোধ করার অন্তরায়। তাই অর্থপাচার ও মানবপাচারের মতো দুর্নীতি রোধ করতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর অর্থনৈতিক সক্ষমতা, দক্ষ মানবসম্পদ, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এজন্য রাজনৈতিক হস্তক্ষেপমুক্ত হতে হবে।

কেটিএস’র সভাপতি মাজিদ আল মুতাইরি বলেন, বাংলাদেশের একজন সংসদ সদস্য মানবপাচারের অভিযোগে আটক হওয়ার ঘটনাটি লাল সংকেত দিচ্ছে। একটি সুনির্দিষ্ট অভিযোগে তিনি বর্তমানে বিচারাধীন রয়েছেন। তাই আমাদের সকলকে আইনের সঠিক প্রয়োগ এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে।

টিআবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, স্বাধীনতার পর প্রথম সংসদে ব্যবসায়ী ছিলেন ৫ শতাংশ। আর বর্তমান সংসদে ব্যবসায়ী রয়েছেন ৬১ দশমিক ২ শতাংশ। রাজনীতিতে ব্যবসায়ী বেড়েছে। আর তারা প্রোফিট নিতে চায়।

তিনি বলেন, ওই এমপির স্ত্রীও এমপি হয়েছেন। কাজেই তারা কিন্তু তাদের অর্থের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই রাজনীতিতে এসেছেন। তাই আমাদের সময় এসেছে, আয়নার সামনে দাঁড়ানোর।

ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, একজন এমপি বিদেশে গ্রেফতার হওয়ার বিষয়টি অত্যন্ত বিব্রতকর। তবে আমাদের প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যে বলেছেন—ওই এমপির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার আসনটি শূন্য ঘোষণার ব্যবস্থা করা হবে।

তিনি আরো বলেন, আমাদের দেশে এই ধরনের অপরাধের বিচারের জন্য যথেষ্ট আইন আছে। এখন কেবল সেগুলোর প্রয়োগ প্রয়োজন। এজন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছার। তাই স্পিকারের উচিত ওই এমপির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া।

ইন্টার-পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিইউ) সম্মানসূচক প্রেসিডেন্ট সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, কোভিড-১৯ যেমন সংক্রমণ বাড়াতে বাড়াতে মহামারিতে রূপ নিয়েছে, তেমনি দুর্নীতিও একটি ভাইরাসে রূপ নিয়েছে।

তিনি বলেন, এই রোগের বিরুদ্ধে লড়তে রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকতে হবে। এছাড়া আইন প্রয়োগ সম্ভব নয়। আমাদের সরকার দুর্নীতি বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা দিয়েছে। অপরাধ করলে তাদের শাস্তি পেতে হবে।

এজন্য সরকারগুলোর মধ্যে দ্বিপাক্ষিক ও পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করা প্রয়োজন বলেও মনে করেন তিনি।

কেটিএস সদস্য আশরার হায়াতের সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কুয়েত ইউনিভার্সটি-ল স্কুল’র অধ্যাপক ড. দালাল আল সাইফ ও ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি অব কুয়েতের সাবেক নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ড. হাস্সান জোহার।

বাংলাদেশ সময়: ০০৫৪ ঘণ্টা, জুলাই ১৩, ২০২০
ইইউডি/এমইউএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।