ঢাকা, শুক্রবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

জুনে ৪৬২ বাল্যবিয়ে

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫১ ঘণ্টা, জুলাই ১২, ২০২০
জুনে ৪৬২ বাল্যবিয়ে

ঢাকা: চলতি বছরের জুন মাসে বাল্যবিয়ের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। শুধু জুন মাসেই ৪৬২ জন কন্যাশিশু বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে। আর বাল্যবিয়ে বন্ধ করা হয়েছে ২০৭টি। বাল্যবিয়ের সংখ্যা গত মে মাসে ছিল ১৭০টি ও বন্ধ করা হয়েছিল ২৩৩টি। শিশু নির্যাতনের হার গত এপ্রিল ও মে মাসের তুলনায় বেড়েছে।

বাল্যবিয়ে বাড়ার অন্যতম কারণ হলো স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন বিভাগ করোনা বিষয়ক ত্রাণ ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে ব্যস্ত থাকায় বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে তেমনভাবে নজর দিতে পারছেন না। এছাড়া করোনার কারণে স্কুল বন্ধ থাকায় এবং সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা, অভাব, পাড়া-প্রতিবেশির প্রভাবে অভিভাবকরা আইন লঙ্ঘন করে কন্যাশিশুদের বিয়ে দিয়ে দিচ্ছেন খুব গোপনে।



রোববার (১২ জুলাই) অনলাইনে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের (এমজেএফ) নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম। এমজেএফ নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ ও বাল্যবিয়ে বন্ধে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে।

এমজেএফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুধু বাল্যবিয়ে নয়, এ সময়ের মধ্যে মোট ২ হাজার ৮৯৬ জন শিশু বিভিন্ন ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়েছে। গত মে মাসে নির্যাতনের এ সংখ্যা ছিল ২ হাজার ১৭১ জন। ৪৮ শতাংশ শিশু অর্থাৎ ১ হাজার ৩৭৬টি শিশু নতুনভাবে নির্যাতিত হয়েছে। পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়েছে ৬১ শতাংশ শিশু।

দেশের ৫৩টি জেলায় মোট ১২ হাজার ৭৪০ জন নারী ও শিশু সহিংসতার শিকার হয়েছেন। এদের মধ্যে ৩ হাজার ৩৩২ জন নারী ও শিশু এর আগে কখনোই সহিংসতার শিকার হয়নি। মে মাসে নির্যাতিতের এ সংখ্যা ছিল ১৩ হাজার ৪৯৪ জন। নারী ও শিশুর ওপর মোট নির্যাতনের হার মে মাসের তুলনায় কমলেও, শিশু নির্যাতনের হার বেড়েছে।

করোনাকালে নারী ও শিশুরা কেমন আছে তা জানার জন্য মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ) এপ্রিল থেকে প্রতিমাসে ধারাবাহিকভাবে টেলিফোনের মাধ্যমে তাদের কর্ম এলাকায় তথ্য সংগ্রহ করছে। জুনে ৫৩টি জেলার মোট  ৫৭ হাজার ৭০৪ জন নারী ও শিশুর সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। এরমধ্যে ১২ হাজার ৭৪০ জন নারী ও শিশু সহিংসতার শিকার হয়েছেন। নারীর সংখ্যা ৯ হাজার ৮৪৪ জন আর শিশুর সংখ্যা ২ হাজার ৮৯৬ জন। শিশুদের মধ্যে মেয়েদের সংখ্যা ১ হাজার ৬৭৭ জন অর্থাৎ ৫৮ শতাংশ, আর ছেলেদের সংখ্যা এক হাজার ২১৯ জন অর্থাৎ ৪২ শতাংশ। শিশুদের মধ্যে অনেক বেশি সংখ্যক শিশু এ জুনেই বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে।

দেশে শতকরা ৫৯টি মেয়ের বিয়ে হয়ে যায় তাদের ১৮ বছরের জন্মদিন হওয়ার আগেই। আর শতকরা ২২ জনের বিয়ে হয় ১৫ বছরের আগে (তথ্যসূত্র ইউনিসেফ)। বাল্যবিয়ে ঘটার দিক দিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বের চতুর্থ দেশ।

অবশ্য বাল্যবিয়ের চেয়েও অনেক বেশি শিশু অর্থাৎ ১ হাজার ৭৬৪ জন শিশু পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়েছে। এছাড়া কর্মক্ষেত্রে নির্যাতনের শিকার হয়েছে ২৯২টি শিশু। ধর্ষণ করা হয়েছে নয় জনকে এবং ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে ৯৯টি শিশুকে যাদের মধ্যে ৮৬ জন মেয়ে। হত্যা করা হয়েছে ৪১ জনকে, অপহৃত হয়েছে ১০ জন, যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে আরো ১২ জন।

মোট আক্রান্ত নারীদের মধ্যে নতুন করে আক্রান্ত নারীর সংখ্যা এক হাজার ৯৫৬ জন বা ২০ শতাংশ। প্রতিবারের মতো এবারও নারীদের মধ্যে ৯৮ শতাংশ নারী  অর্থাৎ ৯ হাজার ৬৯৩ জন পারিবারিক সহিংসতার শিকার। এ পারিবারিক সহিংসতার মধ্যে মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৪ হাজার ৬২২ জন, অর্থনৈতিক নির্যাতন ৩ হাজার ৯ জন, শারীরিক ১ হাজার ৮৩৯ জন এবং যৌন নির্যাতনের শিকার ২২৩ জন, যৌন হয়রানির শিকার ৯৭, ধর্ষণ ও ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে ৩৫ জনকে, হত্যা করা হয়েছে ১৪ জনকে এবং ত্রাণ আনতে গিয়ে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন পাঁচ জন।

সহিংসতার শিকার শিশু ও নারীদের এমজেএফ তাদের সহযোগী সংগঠনগুলোর মাধ্যমে কাউন্সিলিং, ফলোআপ, সেবা প্রদানকারী সংস্থা, স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ সহয়তা, চিকিৎসা ও আইনগত সহায়তা দিয়েছে।

এমজেএফ ডিএফআইডির এক্সক্লুডেড পিপলস রাইটস (ইপিআর), কানাডীয় সরকারের উম্যান ভয়েস অ্যান্ড লিডারশিপ বাংলাদেশ (ডাব্লিউভিএলবি) এবং সুইডিশ সিডার স্ট্রেনদেনিং সিভিল সোসাইটি অ্যান্ড পাবলিক ইনস্টিটিউশন টু এড্রেস কমবেটিং জেন্ডার ভায়োলেন্স অ্যান্ড বিল্ড কমিউনিটি রেজিলেন্স টু ক্লাইমেট চেঞ্জ এ প্রকল্পের ১০৬টি সহযোগী সংগঠনকে সঙ্গে নিয়ে এ জরিপ পরিচালনা করেছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫১ ঘণ্টা, জুলাই ১২, ২০২০
এসই/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।