তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান সাহেদ করিম আত্মগোপনে রয়েছেন। তবে তিনি দেশেই আছেন।
র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. আশিক বিল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, ‘রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান সাহেদকে গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। র্যাবের গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। সাহেদের অবস্থান নিশ্চিত করতে র্যাবের একাধিক টিমও কাজ করছে। আশা করি খুব দ্রুতই তাকে গ্রেফতার করা সম্ভব হবে। ’
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান সাহেদ করিমের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। রিজেন্ট হাসপাতাল থেকে ১০ হাজারের বেশি করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) পরীক্ষার ভুয়া রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে। হাসপাতালটি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে চুক্তি করেছিল করোনা আক্রান্ত রোগীদের ফ্রি-তে চিকিৎসা দেবে বলে। কিন্তু তারা রোগীর কাছ থেকে জোরপূর্বক মোটা অংঙ্কের টাকা আত্মসাৎ করেছে। এসব প্রতারণার মূলে রয়েছে গ্রুপটির চেয়ারম্যান সাহেদ করিম। তবে অভিযানের পর থেকে তিনি পলাতক। তাকে গ্রেফতারে র্যাব-পুলিশের একাধিক টিম মাঠে কাজ করছে।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, প্রতারক সাহেদ করিম বিভিন্ন সময় সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের সঙ্গে দেখা করে ছবি তুলতেন। এসব ছবি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জায়গাতে ব্যবহার করে অতিরিক্ত সুবিধা ভোগ ও প্রতারণা করতেন। এছাড়াও তিনি হাসপাতালের ও স্টাফদের নিজের কক্ষে নিয়ে পিটিয়ে নির্যাতন করতেন।
এদিকে রোববার (১২ জুলাই) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে দেশের সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যালোচনা সভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ‘রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান সাহেদের বিদেশ যাওয়ার সুযোগ নেই। তার পাসপোর্ট জব্দ করা হয়েছে, বর্ডার যাতে ক্রস করতে না পারে সে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সাহেদকে খোঁজা হচ্ছে। তাকে আত্মসমর্পণ করতে হবে, অন্যথায় গ্রেফতার করা হবে।
গত ৬ জুলাই (সোমবার) নানা অনিয়ম, প্রতারণা, সরকারের সঙ্গে চুক্তি ভঙ্গ ও করোনা পরীক্ষার ভুয়া রিপোর্ট ও সার্টিফিকেট দেওয়া ও রোগীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগে রিজেন্ট গ্রুপের দুটি হাসপাতালে অভিযান চালায় র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। এই অভিযানের নের্তৃত্ব দেন র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. সারোয়ার আলম। অভিযানে গিয়ে প্রতারণার সত্যতা মেলে, সেই সঙ্গে পাওয়া যায় গুরুত্বপূর্ণ সব তথ্য। পরদিন ৭ জুলাই (মঙ্গলবার) রিজেন্ট গ্রুপের মূল কার্যালয় এবং রাজধানীর উত্তরা ও মিরপুরে এর দুটি হাসপাতাল সিলগালা করে দেওয়া হয়। হাসপাতালটি প্রতারণা করে ১০ হাজারেরও বেশি করোনা পরীক্ষার ভুয়া সার্টিফিকেট দিয়েছে। অভিযানের সময় রিজেন্ট হাসপাতালের পরিচালক ও ব্যবস্থাপকসহ আট জনকে আটক করেছে র্যাব।
আটক কর্মীদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে ৯ জুলাই (বৃহস্পতিবার) রিজেন্ট হাসপাতালের জনসংযোগ কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম শিবলীকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি সে হাসপাতালের মালিক মো. সাহেদের সব ধরনের প্রতারণামূলক কাজের অন্যতম সহযোগী। বৃহস্পতিবার (৯ জুলাই) ইমিগ্রেশন বিভাগকে চিঠি দিয়ে সাহেদ করিমের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করে পুলিশ।
র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম জানান, করোনা রোগীদের নমুনা সংগ্রহ করে কোনো পরীক্ষা না করেই ভুয়া রিপোর্ট দিতো রিজেন্ট হাসপাতাল। বিনামূল্যে কোভিড-১৯ টেস্ট করার জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতরের সঙ্গে চুক্তি করলেও রিপোর্ট প্রতি সাড়ে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা আদায় করত এই প্রতিষ্ঠানটি। জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে মোট ৩ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক সাহেদ করিম।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৮ ঘণ্টা, জুলাই ১২, ২০২০
এসজেএ/এইচএডি/