ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

নজরদারির অভাবে বন্ধ হচ্ছে না নকল মাস্ক বিক্রি

89 | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১৭ ঘণ্টা, জুলাই ১১, ২০২০
নজরদারির অভাবে বন্ধ হচ্ছে না নকল মাস্ক বিক্রি

ঢাকা: থ্রিএম ব্র্যান্ডের এন-৯৫-১৮৬০ মেড ইন সিঙ্গাপুর বাল্ক কোয়ান্টিটি আছে, রেডি স্টক ১৯ হাজার পিস। কন্ডিশনে চায়না থেকে যেকোনো প্রডাক্ট ইম্পোর্ট করে দেওয়া যাবে। একটি মোবাইল নম্বর দিয়ে বলা হয়েছে সরাসরি কল করুন। অফিস দৈনিক বাংলার মোড়। সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যমে গ্রুপ খুলে সেখানে দেওয়া হচ্ছে এমন বিজ্ঞাপন।

ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, দেশের বাজারে এন-৯৫ মাস্ক বিক্রির সরকারি কার্যাদেশ পাওয়া ঠিকাদার রয়েছেন ১০৭ জন। আর বেসরকারিভাবে বিক্রির অনুমোদন নিয়েছে আরও পাঁচটি প্রতিষ্ঠান।

কিন্তু অনলাইনের বিভিন্ন গ্রুপে ঢুকে দেখা যায়, এন-৯৫ মাস্কের বিক্রেতা ৫ হাজারেরও বেশি। বেশিরভাগ রিসেলার তরুণ-তরুণী হলেও তারা কেউই জানে না। এই মাস্ক আমদানি করতে সরকারের কোনো দফতরের অনুমোদন নিতে হয়। মাস্কটি আসল না নকল তা কিভাবে চেক করতে হয়। তাদের সবার বক্তব্য আমদানিকারকের কাছ থেকে নিয়ে আমরা বিক্রি করছি।

প্রায় এক সপ্তাহ অনলাইনে অনেক খোঁজ করে সাতজন আমদানিকারকের সন্ধান পাওয়া যায়। যাদের কারোরই আমাদানি সার্টিফিকেট কিংবা ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের আমদানি অনুমতি পত্র নেই। কিন্তু তাদের গোডাউনে রয়েছে ৫-২৫ হাজার পিস পর্যন্ত বিশ্ব বিখ্যাত থ্রিএম ব্র্যান্ডের নকল এন-৯৫ মাস্ক।

ঢাকা কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বলছে, স্বাস্থ্য অধিদফতরের সুর্নিদিষ্ট প্রজ্ঞাপন না থাকার কারণে এসব পণ্য আটক করতে পারছে না।

অনলাইনে মাস্ক বিক্রেতা মিরপুরের রক্তিমা রুহি, রাসেল রাফিন। রক্তিমা রুহি, থ্রিএম এন-৯৫ এর ৮২১০ সিএন মডেলের মাস্ক বিক্রি করছেন প্রতি পিস ৫০০ টাকায়। ফেসবুকে দেওয়া রুহির পোস্ট থেকে লট নাম্বার নিয়ে থ্রিএম কর্তৃপক্ষকে ইমেইল করা হলে ফিরতি মেইলে জানানো হয় এই লট নম্বরটি ভুয়া।

একইভাবে রাসেল রাফিনের ১৮৬০ মডেলের লট নাম্বারটি নিয়ে থ্রিএম জানায়, এই লট নাম্বারের কোনো পণ্য তারা বিক্রিই করেনি। উৎপাদনের শুরুতে পণ্যর কোয়ালিটি খারাপ হওয়ায় পণ্যটি তারা ধ্বংস করে ফেলেছে। তবে ১৮৬০ মডেলের পণ্য বিক্রি করছেন দৈনিক বাংলা মোড়ের মিজানুর রহমান মিজান।

রুহি, রাসেল ও মিজানোর সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, চায়নায় বসবাসরত কিছু বাঙ্গালি ব্যবসায়ী এসব পণ্য কিনে এয়ারপোর্টের অসাধু সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে ঢাকা কাস্টমস হাউজকে ম্যানেজ করে বাংলাদেশে এনেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঢাকা কাস্টমস হাউজের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট সিনথিয়া সাজাহানের মাধ্যমে ২০ হাজার ভুয়া এন-৯৫ মাস্ক এনেছে টঙ্গী কলেজ গেটের এক গার্মেন্টস ব্যবসায়ী। সিএন্ডএফ এজেন্ট রাসেলের মাধ্যমে ১৮৬০ ভুয়া ১০ হাজার এন-৯৫ এনে বিপাকে পড়েছে মিরপুরের এক ব্যবসায়ী। না জেনে কমদামি নকল পণ্য এনে বিক্রি করতে না পেরে হতাশ তিনি।

এদিকে নকল মাস্ক আমদানির কারণে বিপাকে পড়েছেন প্রকৃত ব্যবসায়ীরা আর হুমকির মুখে পড়েছে করোনা ভাইরাস চিকিৎসায় নিয়োজিত প্রথম সারির যোদ্ধা ডাক্তারদের জীবন।

প্রকৃত ব্যবসায়ীদের বক্তব্য কোনো প্রকার যাচাই বাছাই ছাড়া কমদাম পেলেই পণ্য কিনছে অধিকাংশ নামিদামি বেসরকারি মেডিক্যাল, ও হাসপাতালগুলো। রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতাল ঘুরে মিলেছে সত্যতা। তবে এভারকেয়ার হাসপাতালের চিত্রটা একটু ভিন্ন।

এভারকেয়ার হাসপাতালের সাপ্লাইচেইন ম্যানেজমেন্টের ডিজিএম মো. মশিয়ার রহমান বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের হাসপাতাল যেহেতু করোনা ডেডিকেটেড, তাই শুধু ডাক্তার নয় হাসপাতালের সব কর্মীদের সুরক্ষা দেওয়া আমাদের প্রধান দায়িত্ব। আমরা সব কর্মীকেই এন-৯৫ মাস্ক সরাবরাহ করেছি। পণ্যের দাম নয় সরকারি সব নিয়ম মেনে যারা ভালো পণ্য আমদানি করে আমরা তাদের কাছ থেকে পণ্য ক্রয় করি।

কাস্টমসের চোখ ফাঁকি দিয়ে কিভাবে নকল-৯৫ মাস্ক দেশে আসছে জানতে চাইলে ঢাকা কাস্টমস হাউজের কমিশনার মো. মোয়াজ্জেম হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের সুনির্দিষ্ট কোনো প্রজ্ঞাপন না থাকায়, আমাদের মাল আটকানোর কোনো সুযোগ থাকে না। বেশিরভাগ এন-৯৫ ও কেএন-৯৫ মাস্ক সার্জিক্যাল মাস্ক ঘোষণা দিয়ে সামান্য ট্যাক্স পরিশোধ করে একটি অসাধু চক্র দেশে ঢুকাচ্ছে বলে আমরা জানতে পেরেছি।  

বাংলাদেশ সময়: ১৭০৪ ঘণ্টা, জুলাই ১১, ২০২০
এসই/এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।