ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

দেবে গেছে ২০০% বাড়তি ব্যয়ে নির্মিত রেলপথের কুশন ব্যালাস্ট

55 | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮২৭ ঘণ্টা, জুলাই ১১, ২০২০
দেবে গেছে ২০০% বাড়তি ব্যয়ে নির্মিত রেলপথের কুশন ব্যালাস্ট

ঢাকা: দুই বছরও পার হয়নি রেলপথটি খুলে দেওয়ার। এরমধ্যেই কতিপয় স্থানে দেবে গেছে প্রাক্কলন থেকে ২০০ শতাংশ বেশি খরচ করে বাস্তবায়িত ‘সিগন্যালিংসহ টঙ্গী-ভৈরববাজার সেকশনে ডাবল লাইন নির্মাণ’ প্রকল্পের রেলওয়ে ট্র্যাকের কুশন ব্যালাস্ট (রেলপথের পাশে ঢালু অংশ)। প্রকল্পটি ৫ বছরের মধ্যে বাস্তবায়িত হওয়ার কথা থাকলে লেগেছে মোট ১২ বছর।

জানা যায়, ৭২৪ কোটি টাকা ব্যয় প্রাক্কলনে ২০০৬ সালে অনুমোদিত প্রকল্পটির কাজ ২০১১ সালের জুন মেয়াদে শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে নানা কারণে ৫ বছর মেয়াদি প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে এক যুগ সময় লেগেছে।

জুলাই ২০০৬ থেকে জুন ২০১৮ পর্যন্ত ১২ বছর মেয়াদে বাস্তবায়িত হয়েছে এটি। প্রকল্প সমাপ্তির মেয়াদ দুই দফায় মোট ৭ বছর বা ৮৪ মাস বৃদ্ধি করা হয়েছে। ফলে প্রকল্পের মেয়াদ বেড়েছে ২৪০ শতাংশ। মেয়াদ বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রকল্পের ব্যয় বেড়েছে ২০০ দশমিক ১৯ শতাংশ।

সম্প্রতি প্রকল্পটি নিয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সমাপ্ত প্রকল্পের প্রভাব মূল্যায়ন সমীক্ষায় দ্বিতীয় খসড়া প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে। আইএমইডি সরকারের একমাত্র প্রকল্প তদারকি সংস্থা।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্র্যাকের কতিপয় স্থানে কুশন ব্যালাস্ট নিচু হয়ে গেছে ফলে নৈমিত্তিক রক্ষণাবেক্ষণ জোরদার করা প্রয়োজন রয়েছে। এছাড়া প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজ চলাকালীন অবস্থায় চারটি ব্রিজ মাটি দিয়ে ভরাট করার কারণে পানি চলাচল বিঘ্নিত হয়েছে। চালু করা প্রয়োজন বন্ধ হওয়া ব্রিজগুলো।

প্রতিবেদন প্রসঙ্গে আইএমইডির পরিচালক (পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন সেক্টর-০২ পরিবহন) আবদুল্লাহ আল মামুন বাংলানিউজকে বলেন, সমাপ্ত হওয়া ‘সিগন্যালিংসহ টঙ্গী-ভৈরববাজার সেকশনে ডাবল লাইন নির্মাণ’ প্রকল্পটি সরেজমিনে পরিদর্শন করে কিছু দুর্বল দিক খুঁজে পেয়েছি। ট্র্যাকের কতিপয় স্থানে কুশন ব্যালাস্ট নিচু হয়ে গেছে ফলে নৈমিত্তিক রক্ষণাবেক্ষণ জোরদার করার প্রয়োজন রয়েছে। তাদের কাছে (বাংলাদেশ রেলওয়ে) প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। তারা এই বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। ’
 
এছাড়া প্রতিবেদনে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের নানা দুর্বল দিক তুলে ধরা হয়েছে। সেগুলো হলো- প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয় অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়া। মূল ডিপিপিতে ৫ বছরের পরিবর্তে ১২ বছর বা ২৪০ শতাংশ অধিক সময় প্রয়োজন হয়েছে। এছাড়া প্রকল্পের আওতায় দুটি স্টেশন জনবলের অভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। চারটি ব্রিজ মাটি দিয়ে ভরাট করে পানি যাতায়াত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ব্যালাস্ট ওয়াল না থাকায় বিভিন্ন জনবসতিপূর্ণ এলাকায় ব্যালাস্ট অপচয় হয়েছে। স্টেশনে নারীদের জন্য পৃথক টয়লেট ও বিশ্রামাগার রাখা হয়নি। এছাড়া অনুমোদিত লেভেল ক্রসিংয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়নি।

জানা যায়, মূল প্রকল্প ব্যয় ছিল মাত্র ৭২৪ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। প্রকল্পটি প্রথম সংশোধনীতে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ২ হাজার ১৭৫ কোটি ৯০ লাখ টাকা। এর বিপরীতে প্রকৃত ব্যয় হয়েছিল ২ হাজার ১৭৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। ফলে মূল প্রকল্প থেকে প্রকল্পের মোট ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ২০০ দশমিক ১৯ শতাংশ।

ব্যয়ের পাশাপাশি বৃদ্ধি করা হয়েছে মেয়াদও। প্রকল্পটি ২০০৬ সালের জুলাই থেকে ২০১১ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য ঠিক করা হয়। পরে প্রথম সংশোধনী এনে ২০১৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়। কাজ শেষ না হওয়ায় দ্বিতীয় সংশোধনী আনা হয় ২০১৬ সালের জুনে, পরের দফায় ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়। শেষ পর্যন্ত ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়িয়ে ১২ বছরে প্রকল্পের কাজ শেষ করা হয়।

পরামর্শকের জন্য এডিবির সম্মতি, দরপত্রে বিলম্ব, ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতা, সিডি ভ্যাট দরপত্র বাতিল করে নতুন পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান, প্রকল্প বাস্তবায়ন পর্যায়ে পরামর্শক প্যাকেজের মূল্যবৃদ্ধি,  ২০ কিলোমিটার সয়েল ট্রিটমেন্ট, ২৩১ মেট্রিকটন রেল, স্টেশন বিল্ডিং স্থানান্তর, আইটি ভ্যাট, বেতন, ভূমি অধিগ্রহণ ও জনবল খাতে ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রকল্পের সময় ও ব্যয় বেড়েছে।

প্রকল্পটির আওতায় ৮৬ কিলোমিটার ট্র্যাক (৬৪ কি.মি. মেইন এবং ২২ কি.মি. লুপ ও সাইড লাইন), ৭১টি সেতু, ১১টি স্টেশন ভবন, ২টি সিগন্যালিং ইক্যুইপমেন্ট ভবন এবং ১৩টি স্টেশনে কম্পিউটার বেইজড ইন্টারলকিং সিগন্যালিং স্থাপন হয়েছে। ফলে ডাবল লাইনে উন্নীতকরণের মাধ্যমে ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট এবং ঢাকা-ভৈরব-ময়মনসিংহ- এ তিনটি করিডোরের লাইন ক্যাপাসিটি প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। আগের লাইন ক্যাপাসিটিতে বর্তমানে এ সেকশনে ২২টি আন্তঃনগর, ১৮টি মেইল এক্সপ্রেস ও ৬টি কন্টেইনার ট্রেনসহ ৪৬টি ট্রেন চলাচল করছে। ট্রেনের সংকট মিটিয়ে সম্পূর্ণ ক্যাপাসিটি কাজে লাগানো গেলে চলবে ৮৪টি ট্রেন।

এদিকে ডাবল লাইনের কারণে এ রুটে ট্রেনের গতি বেড়ে যাত্রার সময় কমে গেছে। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পৌঁছাতে সুবর্ণ এক্সপ্রেসসহ বিভিন্ন আন্তঃনগর ট্রেনের আগে গড়ে ৬ ঘণ্টা সময় লাগতো। এখন ১০০-১২০ কি.মি. বেগে চলার কারণে প্রায় ২ ঘণ্টা কমে সময় লাগছে ৪ ঘণ্টা ২০ মিনিট।

প্রকল্পের আওতায় ১১টি স্টেশন ভবন, দুটি ইকুইপমেন্ট ভবন, ১৮টি প্লাটফর্ম ও প্লাটফর্মের সেড, ১০টি ফুটওভার ব্রিজ, ২২ কিলোমিটার লুপ লাইন, চারটি মেজর ব্রিজ, ৩৬টি মাইনর ব্রিজ, ১১টি বক্স কালভার্ট, ২০টি পাইপ কালভার্ট, ১২টি স্টেশনে কম্পিউটাররাইজড আধুনিক সিগন্যালিং সিস্টেম স্থাপন এবং লেভেল ক্রসিং গেট নির্মাণ ইত্যাদি কাজ অন্তর্ভুক্ত ছিল। দরপত্র প্যাকেজের কাজগুলো শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে। অথচ ২০০ শতাংশ বাড়তি ব্যয় দিয়ে নির্মাণ শেষ হতে না হতেই রেলওয়ে ট্র্যাকের কতিপয় স্থানে কুশন ব্যালাস্ট নিচু হয়ে গেছে।

আইএমইডির রিপোর্ট প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রধান পরিকল্পনা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, আইএমইডির প্রতিবেদন আমাদের হাতে এখনো আসেনি। তাছাড়া প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। যিনি প্রকল্পের পিডি (প্রকল্প পরিচালক) ছিলেন তিনিও অবসর নিয়েছেন। সুতরাং এই প্রকল্পের বিষয়ে আমার কিছু বলা ঠিক হবে না।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৮২৫ ঘণ্টা, জুলাই ১১, ২০২০
এমআইএস/এইচএডি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।