ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

কোন কর্মকর্তা মাসোহারা চাইলে আমাকে জানান: আইজিপি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০৬ ঘণ্টা, জুলাই ৯, ২০২০
কোন কর্মকর্তা মাসোহারা চাইলে আমাকে জানান: আইজিপি ভিডিও কনফারেন্সে দেশের ৬৬০ থানার ওসি’র সঙ্গে কথা বলেন আইজিপি বেনজীর আহমেদ

ঢাকা: কোনো ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা ঘুষ বা মা‌সোহারা চাইলে নির্ভ‌য়ে জানাতে বলেছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ।

বৃহস্পতিবার (৯ জুলাই) পুলিশ সদর দপ্তর থেকে ভিডিও কনফারেন্সে দেশের ৬৬০ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের (ওসি) সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেন তিনি।

একসাথে দেশের সব থানার ওসিদের সঙ্গে কোন আইজিপির এ ধরনের মতবিনিময় এবারই প্রথম।

দুর্নী‌তির বিরুদ্ধে নিজের ক‌ঠোর অবস্থা‌নের কথা ব্যক্ত ক‌রে আইজিপি বলেন, বর্তমানে সরকা‌রি বেতন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দিয়ে সুন্দরভাবে জীবন চালানো যায়। একজন সরকা‌রি কর্মচারীর ব্যয় হতে হবে তার বৈধ আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। অবৈধ অর্থ উপার্জনের মাধ্যমে বিলাসী জীবন-যাপনের স্থান পুলিশের চাকরি নয়। দুর্নীতিবাজরা পুলিশে থাকতে পারবে না। বড়লোক হ‌তে চাইলে তারা পুলিশের চাকরি ছেড়ে দিয়ে ব্যবসা করুক।

ওসিদের উদ্দেশে আইজিপি বলেন, আপনারা নিজে অবৈধ উপায়ে কোন অর্থ উপার্জন করবেন না, অন্য কাউকে অবৈধভাবে অর্থ উপার্জনের সুযোগও করে দেবেন না। কোনো ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাও আপনাদের কাছে ঘুষ বা মা‌সোহারা চাইলে তা আম‌া‌কে নির্ভ‌য়ে জানান। আমি ওই পুলিশ কর্মকর্তার বিষয়‌টি ব্যক্তিগতভা‌বে দেখ‌ব।

বেনজীর আহমেদ আরও বলেন, ৬৬০ থানার ওসিরা হলেন বাংলাদেশ পুলিশের প্রতিচ্ছবি। আপনাদের ওপরই বাংলাদেশ পুলিশের ভাবমূর্তি নির্ভর করে। আপনাদের এমনভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে যাতে জনগণ আপনাদের ওপর আস্থা রাখ‌তে পা‌রে এবং আপনাদের প্রত্যেককে একজন ‘সোশ্যাল লিডার’ হিসেবে সম্মান করে।

বর্তমানে করোনায় পুলিশের অনন্য ভূমিকার কথা উল্লেখ করে আইজিপি বলেন, গত তিন মাসে পুলিশ জনগণের সাথে থেকে জনগণের কল্যা‌ণ ও সুরক্ষার জন্য যা ক‌রেছে তা সত্যিই অভূতপূর্ব। জনগণ পুলিশকে এর প্রতিদানও দিয়েছে। পুলিশ মানুষের অগাধ বিশ্বাস, সম্মান ও আস্থা অর্জন করেছে। মানুষ পুলিশকে তাদের হৃদয়ের মণিকোঠায় স্থান দিয়েছে। যে মর্যাদা, যে সম্মান মানুষ পুলিশকে দিয়েছে তা টাকা দিয়ে কেনা যায় না।

বাংলাদেশ পুলিশ গত তিন মাসে যেখানে গিয়েছে সেখান থেকে আর পেছনে ফিরে যাবে না। জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস নিয়ে জনগণের পুলিশ হয়ে বাংলাদেশ পুলিশ সামনের দিকে এগিয়ে যাবে, বলেন আইজিপি।

পুলিশ প্রধান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছা ও অনু‌প্রেরণায় বাংলা‌দেশ‌কে দুর্নী‌তি ও মাদকমুক্ত কর‌তে কাজ কর‌ছি আমরা সবাই। সবার আগে বাংলাদেশ পুলিশ হবে দুর্নীতিমুক্ত, মাদকমুক্ত। দুর্নীতি ও মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান ‘জিরো টলারেন্স’। পুলিশের কোনো সদস্য মাদক গ্রহণ কর‌বে না, মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত হবে না, মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে সম্পর্ক রাখবে না। পুলিশকে হতে হবে মাদকমুক্ত। আমরা বাংলাদেশকে মাদকমুক্ত কর‌তে চাই।

ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, পুলিশকে আমরা জনগণের দোরগোড়ায় নিয়ে যেতে চাই। বিট পুলিশিং এর মাধ্যমে দেশের প্রতিটি ওয়ার্ডে পুলিশি সেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। আমরা জনগণের পুলিশ হয়ে জনগণের সাথে থাকতে চাই।

সাধারণ মানুষকে নিপীড়ন-নির্যাতন থেকে পুলিশকে বেরিয়ে আসতে হবে। শারীরিক শক্তি ব্যবহার না করে আইনি সক্ষমতা ও মান‌বিক মূল্য‌বো‌ধের মাধ্যমে যে কো‌নো সমস্যার সমাধান কর‌তে হ‌বে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

পুলিশ প্রধান আরো বলেন, পুলিশ অফিসার ও ফোর্সের জন্য বর্তমানে প্রচলিত কল্যাণ ব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে এসে তাদের চিকিৎসা, সন্তানদের লেখাপড়া, আবাসন এবং অবসর পরবর্তী সময়েও কল্যাণ নিশ্চিত করার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হবে। সৎ ও স্বচ্ছ উপা‌য়ে যেন পু‌লি‌শের প্রত্যেক সদস্য জীবন যাপন কর‌তে পা‌রে সে‌দি‌কে লক্ষ্য রে‌খেই সদস্যদের জন্য কল্যাণ প‌রিকল্পনা তৈরি করা হ‌চ্ছে।

আইজিপি তার বক্তব্যের শুরুতে দায়িত্ব পালনকালে করোনাভাইরাস সংক্রমণে আক্রান্ত হয়ে জীবন উৎসর্গকারী ৪৭ জন পুলিশ সদস্যদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন এবং তাদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানান। পরিবারের উপার্জনক্ষম একমাত্র সদস্যকে হারিয়ে বিপন্ন এসব পরিবারের পাশে থেকে তাদের সুখ-দুঃখের সাথী হওয়ার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ২০০১ ঘণ্টা, জুলাই ০৯, ২০২০
পিএম/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।