ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বাগেরহাটে ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২২ ঘণ্টা, জুলাই ৯, ২০২০
বাগেরহাটে ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

বাগেরহাট: বাগেরহাটে হতদরিদ্রদের ঘর ও ভাতা দেওয়ার নামে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে ইউপি সদস্য মোস্তফা কামাল হারুনের বিরুদ্ধে।

জানা যায়, বিধবা ভাতা, বয়স্ক ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, সরকারি ঘরসহ সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের যেকোনো সুবিধা দেওয়ার জন্য স্থানীয়দের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে ফকিরহাট উপজেলার পিলজংগ ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ওই সদস্যের বিরুদ্ধে। এমনকি জন্মান্ধ ফরহাদ সরদারকে প্রতিবন্ধী কার্ড দেওয়ার কথা বলেও টাকা নিয়েছেন তিনি।

এসব অনিয়ম ও টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন এলাকার হত দরিদ্ররা।  

অভিযোগের সত্যতা জানতে সহকারী কমিশনার (ভূমি) রহিমা সুলতানা বুশরাকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি করেছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোছা. শাহনাজ পারভীন। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়াও সম্প্রতি এ ধরনের অভিযোগের সত্যতা মেলায় এক নারী ইউপি সদস্যকে বহিষ্কারের সুপারিশ পাঠানো হয়েছে বলে জানান তিনি।

স্থানীয়রা জানান, মোস্তফা কামাল হারুণ ইউপি সদস্য হওয়ার পর থেকে এলাকার মানুষদের কাছ থেকে বিভিন্নভাবে টাকা গ্রহণ ও আত্মসাৎ করছেন। জন্মনিবন্ধনের জন্যও টাকা গ্রহণ করেন তিনি। গরীব ও অশিক্ষিত মানুষরা এক ধরনের বাধ্য হয়েই টাকা দেয় তাকে।

দুই সন্তানের জনক পিলজংগ গ্রামের জন্মান্ধ ফরহাদ সরদার বাংলানিউজকে বলেন, জন্মের পর থেকে চোখে দেখতে পাই না। হারুণ মেম্বরকে বলেছিলাম আমাকে একটা প্রতিবন্ধী কার্ড করে দিতে। সে আমার আইডি কার্ড ও ছবি নিয়েছে। অ্যাকাউন্ট খোলার কথা বলে ২০০ টাকা নিয়েছেন। কিন্তু অনেক দিন হয়ে গেলেও আমাকে কোনো কার্ড দেয়নি। দুইটা বাচ্চা ও পরিবার নিয়ে খুব কষ্টে আছি। যদি আমাকে একটি প্রতিবন্ধী কার্ড দেওয়া যায় তাহলে আমার খুব উপকার হবে।

দিনমজুর কুদ্দুস মোড়ল ও মো. খলিল শেখ বলেন, ভাঙাচোরা ঘরে থাকি। ঘর থেকে পানি পড়ে। মেম্বর সরকারি ঘর দেওয়ার জন্য তিন হাজার টাকা দাবি করেন। ৭-৮ মাস আগে ৩ হাজার টাকা করে দিয়েছি। কিন্তু ঘর পাইনি।  

বিধবা শাহিদা বেগম বাংলানিউজকে বলেন, আমার স্বামী মারা যাওয়ার পরে মেম্বরের কাছে ঘুরেছি বিধবা কার্ডের জন্য। কার্ড পাওয়ার জন্য মেম্বরকে ৩০০ টাকা দিয়েছিলাম। পরবর্তীতে ঝড়ে আমার ঘর পরে গেলে ঘর দেওয়ার জন্য এক হাজার টাকা চেয়েছিল। টাকা দিতে পারিনি তাই ঘরও পাইনি।

হতদরিদ্র সুমি বেগম বাংলানিউজকে বলেন, মেয়েকে নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদে গেছিলাম জন্ম নিবন্ধন করতে। সেখানে উদ্যোক্তা মৌসুমী আক্তার এক হাজার টাকা দাবি করেন আমার কাছে। এক হাজার টাকা দিতে পারিনি। তাই মেয়ের বয়স চার বছর পার হলেও জন্ম নিবন্ধনও করাতে পারিনি। আসলে গরীবের জন্ম নিবন্ধন দিয়ে কি দরকার।

এসব অভিযোগের বিষয়ে অভিযুক্ত ইউপি সদস্য মোস্তফা কামাল হারুণকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, যারা অভিযোগ দিয়েছে তাদের সঙ্গে কথা বলেন আমাকে ফোন দিয়েছেন কেন। যারা অভিযোগ দিয়েছে আমি তাদের চিনি। আমার সঙ্গে আপনাদের কথা বলার দরকার নেই। অভিযোগ দিয়েছে তদন্তে যা হয় হবে।

ফকিরহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোছা. শাহনাজ পারভীন বাংলানিউজকে বলেন, এলাকাবাসীর কাছ থেকে ইউপি সদস্য মোস্তফা কামাল হারুণের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য সহকারী কমিশনার (ভূমি) রহিমা সুলতানা বুশরাকে আহ্বায়ক, উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা ও যুব উন্নয়ন কর্মকর্তাকে সদস্য করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটি রিপোর্টে অভিযোগের সত্যতা পেলে আইন গত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ফকিরহাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান স্বপন দাস বাংলানিউজকে বলেন, কারো ব্যক্তিগত কাজের জন্য নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। নির্বাচিত প্রতিষ্ঠানগুলো প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। এটা উপজেলা পরিষদ চাই না।

পিলজংগ ইউনিয়ন পরিষদের সদসস্যের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে, তদন্তে তার সত্যতা পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৫ ঘণ্টা, জুলাই ০৯, ২০২০
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।