বরিশাল: বরিশালের বানারীপাড়ায় নিখোঁজ হওয়া সপ্তম শ্রেণির এক মাদ্রাসা ছাত্রীকে হত্যা করে মরদেহ নদীতে ডুবিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
বুধবার (০৮ জুলাই) সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে বানারীপাড়া উপজেলার সৈয়দকাঠি ইউনিয়নের আউয়ার বাজার সংলগ্ন সন্ধ্যার শাখা নদী থেকে ওই মাদ্রাসা ছাত্রীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
নিহত আয়েশা আক্তার (১২) আউয়ার বাজারের ব্যবসায়ী ও স্থানীয় বাসিন্দা দুলাল লাহারীর মেয়ে এবং আউয়ার ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী।
নিহত আয়েশার বোন ফাতেমা জানান, মঙ্গলবার সকালের পর থেকে নিখোঁজ হয় আয়েশা। প্রথমে ধারণা করা হচ্ছিলো খেলাধুলা করার জন্য বাড়ির বাহিরে আছে। কিন্তু দুপুরে বাড়িতে ফিরে না আসায় তাকে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন পরিবারের সদস্যরা। বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেও তার কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।
আয়েশার বাবা দুলাল লাহারী জানান, সকালে আউয়ার বাজার সংলগ্ন বড় খালে (শাখা নদী) আয়েশার পায়ের জুতা ভাসতে দেখা যায়। পরে বিভিন্ন সূত্র ধরে পার্শবর্তী বাড়ির বাসিন্দা সিদ্দিকুর রহমানের পরিবারকে সন্দেহ করে স্থানীয়রা। এরপর স্থানীয়রা সিদ্দিক ও তার স্ত্রী হনুফা এবং দুই ছেলে ছাব্বির ও সাহাদকে আটক করে এবং থানা পুলিশকে খবর দেয়। পরে পুলিশ এসে ওই চার জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তাদের দেওয়া তথ্যানুযায়ী বড়খালে উদ্ধার অভিযান চালানো শুরু করে।
স্থানীয় ও থানা পুলিশ জানায়, মারধরের ভয়ে সিদ্দিক তাদের জানায়, সকালে তার বাড়ির পাশের খালে আয়েশার মরদেহ ভাসতে দেখেন। তিনি ধারণা করেন তার ছেলেরা হয়তো কিছু একটা করেছে আয়েশার সঙ্গে। এরপর তিনি সম্ভাব্য বিপদ এড়াতে মরদেহটি জমাট বাধানো সিমেন্ট ভর্তি একটি বালতি ও ঢালাই কার স্লাবের সঙ্গে দড়ি দিয়ে বেঁধে বড় খালের ভেতরে ফেলে দেন।
বরিশাল সদর নৌ-ফায়ার স্টেশনের লিডার মো. গিয়ান উদ্দিন বাংলানিউজকে জানান, খবর পেয়ে ডুবুরি দল নিয়ে তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টার অভিযান শেষে আয়েশার মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। মরদেহের সঙ্গে জমাট বাধানো সিমেন্ট ভর্তি একটি বালতি ও ঢালাই কার স্লাব রশি দিয়ে বাঁধা ছিলো।
স্বজনদের দাবি সিদ্দিকের পরিবারের সদস্যরা আয়েশাকে হত্যা করে গুম করার উদ্দেশে খালে ফেলে দিয়েছিলো।
এ বিষয়ে বানারীপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শিশির কুমার পাল বাংলানিউজকে জানান, বিষয়টি জানতে পেরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে সন্দেহভাজন সিদ্দিকসহ তার পরিবারের চার জনকে আটক করে এবং তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে। পরে সিদ্দিকের দেওয়া তথ্যানুযায়ী মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
এদিকে পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়ে জেলা পুলিশের অতিরিক্ত সুপার মোঃ নাঈমুল হক জানান, এ ঘটনায় নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে হত্যা মামলার প্রস্তুতি চলছে। পাশাপাশি যেহেতু সিদ্দিকসহ তার পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে, তাই তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক চার জনের মধ্যে সিদ্দিকের স্ত্রী গর্ভবর্তী এবং তিনি বাড়িতেই ছিলেন বলে জানা গেছে, তাই এ বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২১১৫ ঘণ্টা, জুলাই ০৮, ২০২০
এমএস/আরআইএস