সূত্র জানায়, ওয়ারীতে প্রবেশ ও বের হওয়ার তালিকায় ৬৯২ জনের নাম রয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের একশ’ যানবাহন প্রবেশ ও বের হওয়ার অনুমতি রয়েছে।
সোমবার (৭ জুলাই) ওয়ারী ওয়্যার স্ট্রিট (চণ্ডীচরণ বোস স্ট্রিট) রোডের গেটে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সকাল থেকেই বাইরে বের হওয়ার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে অনেক লোক। তারা একে একে নাম এন্ট্রি করে বের হচ্ছিলেন। এদের মধ্যে রয়েছে হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স, স্টাফ, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের স্টাফ, ই-ভ্যালি, ফুডপান্ডার স্টাফ ও স্থানীয় বাসিন্দা। যদিও একেবারে জরুরি ছাড়া স্থানীয়দের বের হতে দিতে চাইছিলেন না স্বেচ্ছাসেবকরা। কিন্তু শুধুমাত্র অনুমোদিত লোকজন ও যানবাহন বের হওয়ার নিয়ম থাকলেও অনেকই জোরপূর্বক এলাকায় প্রবেশ করছিলেন।
ওয়ারীর টিপু সলতান রোডের গেটটিও শুধু মাত্র অনুমোদিত লোকজন ও জরুরি যানবাহন প্রবেশের জন্য খোলা। সেখানেও অনেকই নাম এন্ট্রি করে প্রবেশ করছেন। তবে নিয়ম অমান্য করেন হাসপাতালে ভর্তি রোগীর স্বজন ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের স্টাফদের এই গেট দিয়ে বের হতে দেখা যায়। যদিও অনেককেই স্বেচ্ছাসেবকরা বের হতে বাধা দিচ্ছেন।
এ গেটে দায়িত্বরত স্বেচ্ছাসেবক কর্মীরা জানান, ওয়ারীতে প্রবেশের জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানেন ৬৯২ জন স্টাফ, প্রতিষ্ঠানগুলোর একশ’ যানবাহন এবং খাদ্যদ্রব্য সরবরাহের জন্য ৭০টি প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের ভেতরে প্রবেশের অনুমতি আছে। ঠিক একই তালিকা বের হওয়ার গেট ওয়্যার স্ট্রিটেও দেওয়া আছে।
লকডাউন বাস্তবায়ন সংস্থার কর্মকর্তারা জানান, ওয়ারীর ভেতরে ৩টি হাসপাতালে ভর্তি রোগীর স্বজনরাই মূলত নিয়মের বাইরেও বেশি চলাচল করছেন। এর বাইরেও অনেকেই জোরপূর্বক প্রবেশ ও বের হবার চেষ্টা করছেন।
ওয়ারীর ৩৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আহমেদ ইমতিয়াজ মান্নাফি বাংলানিউজকে বলেন, লকডাউন এলাকার ভেতরে প্রবেশ ও বের হওয়ার বিষয়ে কিছু প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের পারমিশন রয়েছে। তালিতার বাইরে কাউকে আমরা প্রবেশ ও বের হতে দিচ্ছি না।
দায়িত্বরত স্বেচ্ছাসেবক মো. সাইফ বাংলানিউজকে বলেন, আমরা গেটের দায়িত্ব পালন করছি। এই গেট দিয়ে চিকিৎসক নার্স ও হাসপাতালের স্টাফ ছাড়াও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের স্টাফরা প্রবেশ করছেন। এর বাইরেও অনেকেই জোর করে চলাচলের চেষ্টা করছেন। আমরা বাধা দিলেও তারা ক্ষেপে যাচ্ছেন বা কোনও না কোনও কারণ তুলে ধরছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওয়ারীতে সুপার শপের মধ্যে আউটলেট স্বপ্নর ৯২ জন, মীনা বাজারের ৪৮ জন ও বিগবাজারের ২৩ জন স্টাফ, দুটি হাসপাতালের মধ্যে বারডেমের ১৫৫ জন, ন্যাশনাল হেলথ কেয়ার হাসপাতালের ৬৬ জন চিকিৎসক, নার্স, স্টাফ, প্যাসিফিক ফার্মাসি লিমিটেডের ১৯৭ জন স্টাফ, ৫০টি গাড়ি ও ৭টি মোটরসাইকেল, লার্জফার্মার ১৯ জন স্টাফ, সরুর মিয়া গ্রুপ অব লিমিটেডের ৬ জন, ওয়ারী গ্রুপের ২২ জন, ঢাকা পাওয়ার লিমিটেডের ২৬ জন স্টাফ প্রতিদিন প্রবেশ ও বের হতে পারবেন। এছাড়াও খাদ্য সরবরাহকারী ৭০টি প্রতিষ্ঠানের স্টাফ ও যানবাহনের ভেতরে প্রবেশের অনুমতি রয়েছে।
স্বেচ্ছাসেবক কর্মীরা বলছেন, পূর্ব রাজাবাজারে যেভাবে লকডাউন বাস্তবায়ন করা হয়েছিল ওয়ারীর লকডাউন তেমন হচ্ছে না। ওয়ারীতে অনেকটা ঢিলেঢালাভাবে লকডাউন পালন হচ্ছে। কারণ এখানে বাসিন্দারা কেউই নিয়ম মানছেন না। তারা জোরপূর্বক আসা-যাওয়া করতে চাইছেন।
নবাবপুরে রোডের অ্যাক্রেলিক শিটের ব্যবসায়ী রতন শাহা মঙ্গলবার সকাল থেকে বের হওয়ার গেটে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিলেন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, এটা কোনও লকডাউন হলো? অনেকেই ভেতরে প্রবেশ করছেন আবার বের হচ্ছেন। খালি আমাদেরকে দিচ্ছেন না চলাচল করতে। আমাদের ব্যবসা লাটে উঠবে। প্রশাসনের কাছে আমাদের দাবি লকডাউন চলুক কিন্তু ওয়ারীর ব্যবসায়ীদের সপ্তাহে অন্তত দুই-দিন বের হতে দেন। আমরা নিজেদের ব্যবসাও সামলাই।
ঢাকা কাগজ ব্যবসায়ী সমিতির পক্ষ থেকেও একই দাবি জানিয়েছেন সমিতির সদস্য কামাল উদ্দিন।
ওয়ারীর দুটি গেটে জীবাণুনাশক স্প্রে বুথ স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়াও ভেতরে পুরো এলাকার সড়কগুলোতে জীবাণুনাশক ওষুধ মিশ্রিত পানি ছিটিয়ে দিচ্ছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস সাংবাদিকদের বলেন, ওয়ারী এলাকায় লকডাউন আরও কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করতে চাচ্ছি। আমরা বুঝি, এলাকাবাসীর অনেক সমস্যা হচ্ছে। তাদের জীবিকা, ব্যবসা-বাণিজ্য ও চলাফেরার অনেক অসুবিধা হচ্ছে। তারপরও আমি অনুরোধ করবো, আপনারা ধৈর্য্য ও সহনশীলতার সঙ্গে লকডাউন পালন করবেন।
তিনি বলেন, ওয়ারী এলাকায় লকডাউনের পর থেকে সেখানকার নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী, চিকিৎসাসেবাসহ সব সরবরাহের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনতে হলে সরকারি নির্দেশনা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনেই সবাইকে চলতে হবে।
ওযারী লকডাউনের কন্ট্রোল রুম থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, লকডাউনের প্রথমদিন (৪ জুলাই) করোনা ভাইরাস পরীক্ষার জন্য এলাকার ১৬ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এর মধ্যে ৭ জনের ফল পজিটিভ। ৫ জুলাই ১৯ জনের নমুনা সংগ্রহ করে ১০ জন পজিটিভ হন। ৬ জুলাই ১৬ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। লকডাউনের চার দিনে এখন পর্যন্ত এখানকার ১৭ জন করোনা শনাক্ত হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪৫ ঘণ্টা, জুলাই ০৭, ২০২০
এসজেএ/এইচজে