ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ট্রলার ছিনতাইয়ের জন্যই পিতা-পুত্রকে খুন করা হয়, গ্রেফতার ৩

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১১ ঘণ্টা, জুলাই ৭, ২০২০
ট্রলার ছিনতাইয়ের জন্যই পিতা-পুত্রকে খুন করা হয়, গ্রেফতার ৩ সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলামসহ অন্যরা।

বরিশাল: বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলায় পিতা-পুত্রকে খুনের ঘটনায় তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পাশাপাশি নিহতদের কাছ থেকে ছিনতাই হওয়া মায়ের পরশ নামক ট্রলার, মোবাইল সেটসহ বেশকিছু আলামতও উদ্ধার করা হয়েছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে মঙ্গলবার (৭ জুলাই) দুপুর সাড়ে ১২টায় বরিশাল জেলা পুলিশ লাইন্সের ইন সার্ভিস সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম জানান, গ্রেফতারকৃতদের দেওয়া তথ্যানুযায়ী ট্রলার ছিনতাই করার উদ্দেশ্যেই পিতা ও পুত্রকে হত্যা করা হয়েছে। আর ছিনতাই হওয়া ট্রলারটি বিক্রি করতে গিয়েই ঢাকার সদরঘাট সংলগ্ন তেলঘাট এলাকা থেকে ঘাতকদের গ্রেফতার করা হয়।

আসামিদের গ্রেফতার করে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ।  ছবি: বাংলানিউজসংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার জানান, গত ৩ জুলাই সন্ধ্যা ৭টার দিকে বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার চরলক্ষিপাশা এলাকার একটি বাগানের ভেতর থেকে অজ্ঞাতপরিচয় ২০ থেকে ২২ বছরের যুবকের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরের দিন ৪ জুলাই সকাল ৮টার দিকে একই এলাকার নদীর ধারে ভাসমান অবস্থায় ৫৫ বছরের এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। প্রথমে তাদের পরিচয় অজ্ঞাত থাকলেও পরে নিশ্চিত হওয়া যায়, মরদেহ দুটি পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার কলার দোয়ানিয়া এলাকার মো. হেলাল উদ্দিন ও তার ছেলে ইয়াসিন হাওলাদারের।

তিনি জানান, বাবা-ছেলে উভয়ে মাছ ধরার চাঁই (ফাঁদ) তৈরি করে বিভিন্ন হাট বাজারে বিক্রি করতো। গ্রেফতারকৃতরা তাদের হত্যা করে আনুমানিক ৪ লাখ টাকা মূল্যের মায়ের পরশ নামক একটি ট্রলার, নগদ টাকা-পয়সা, নিহত হেলালে ব্যবহৃত একটি মোবাইল নিয়ে পলায়ন করে। পরবর্তীতে জেলা পুলিশের তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ে বিশেষজ্ঞ একটি টিম মোবাইল ফোনের সূত্রধরে ঘাতকদের অবস্থান করে এবং ঢাকা জেলা পুলিশের সহায়তায় ৬ জুলাই ঢাকার সদরঘাটের তেলঘাট এলাকা থেকে তিনজনকে গ্রেফতার করে।

এসপি জানান, গ্রেফতারকৃতরা হলেন- বাকেরগঞ্জের দুবারচর এলাকার মৃত জয়নাল হাওলাদারের ছেলে মো. বাদশা হাওলাদার (৩৮), গোমা এলাকার সবুজ খাঁর ছেলে শাহীন খাঁ (২৫) ও একই এলাকার আমির হোসেন হাওলাদারের ছেলে ছানির হাওলাদার (১৭)। এদের মধ্যে বাদশা ঘটনার মূল হোতা ও তার বিরুদ্ধে বাকেরগঞ্জ থানায় ডাকাতি ও চুরিসহ বিভিন্ন মামলা রয়েছে।

সাইফুল ইসলাম জানান, জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা জানায়, তারা হত্যাকাণ্ডের ৪/৫ দিন আগে থেকেই ভিকটিমদের ওপর নজর রাখছিল। ঘটনার দিন ৬০ পিস মাছ ধরার ফাঁদ (চাঁই) কেনার কথা বলে এবং চাঁইগুলো তাদের এলাকায় পৌঁছে দেওয়ার অনুরোধ করে।

পূর্ব থেকেই পরিকল্পনামাফিক বাদশা, শাহীন এবং সানি তাদের ট্রলারে উঠে এবং চরলক্ষিপাশা নামক স্থানে ট্রলার থামিয়ে চাঁইগুলো নামাতে বলে। ভিকটিম ইয়াসিনকে টাকা দেওয়ার কথা বলে ট্রলার থেকে নামিয়ে একটু দূরের বাগানের দিকে নিয়ে যায় গ্রেফতার হওয়া সানি এবং শাহীন। ওইসময় পেছন থেকে গিয়ে  ছুরি চালিয়ে ইয়াসিনের গলা কাটে বাদশা। এ সময় সানি ও শাহীন তার দুই পা ধরে রেখে মৃত্যু নিশ্চিত করে।

পরবর্তীতে ঘাটে এসে ভিকটিম হেলালকে গ্রেফতার হওয়া শাহিন ধাক্কা দিয়ে পানিতে ফেলে দেয় এবং মূল হোতা বাদশা তার পেটের দুই পাশে ছুরি বসিয়ে দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে পানিতে ডুবিয়ে দেয়।

এরপর গ্রেফতারকৃতরা ভিকটিমদেরর কাছে থাকা সাড়ে ৩ হাজার টাকা, ১টি মোবাইল সেট, ট্রলার ও পরিধেয় কাপড়-চোপড় নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়। পরবর্তীতে ঘাতকরা ট্রলারটি প্রায় সাড়ে ৩ লাখ টাকায় বিক্রির সময় আটক হয়।

উল্লেখ্য এ ঘটনায় গত ৪ জুলাই অজ্ঞাতপরিচয়দের আসামি করে হেলাল উদ্দিনের স্ত্রী নাছিমা বেগম বাকেরগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে জেলা পুলিশের অতিরিক্ত সুপার মো. নাঈমুল হক, আনোয়ার সাঈদ ও ফরহাদ সরদার উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৬ ঘণ্টা, জুলাই ০৭, ২০২০
এমএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।