সোমবার (৬ জুলাই) দুপুরে তিন জন ভুক্তভোগী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অভিযোগে জানা যায়, বয়স্ক ও বিধবা ব্যক্তিদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করতে সরকার সমাজসেবা মন্ত্রণালয়ের অধিনে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী নামে একটি প্রকল্প চালু করে।
করোনাকালীন সময়ে সংক্রমণ রোধে ব্যাংকের পরিবর্তে সব ভাতাভোগীদের এপ্রিল-জুন মাসের ভাতা সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদে দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে ইউপি সদস্যরা বহি সংগ্রহ করে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করে বিতরণ করেন। উপজেলার সারপুকুর ইউনিয়নের এক নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলাম তার ওয়ার্ডের সবার বহি সংগ্রহ করে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করে ১৫/২০ জনের টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বহি দিলেও টাকা আজ কাল দেব বলে দেরি করছেন ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলাম।
আত্মসাৎ করা টাকা ফেরত চাইলে কাউকে আংশিক, কাউকে এক কেজি মাংস কিনে দেন এবং ১৫/২০ জনকে কিছুই দেননি ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলাম। এ টাকার জন্য ভুক্তভোগীরা সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানকে মৌখিক অভিযোগ করেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে চেয়ারম্যান ভুক্তভোগীদের টাকা পৌঁছে দিতে ইউপি সদস্য রফিকুলকে নির্দেশ দিলেও কোনো কাজ হয়নি।
টাকা না পেয়ে খেয়ে না খেয়ে দিনাতিপাত করছেন এসব ভুক্তভোগী। এদের মধ্যে ওই ওয়ার্ডের আফতাব উদ্দিন দুলাল, শৈলবালা ও দেবন্দ্রনাথ নামে তিন জন ভুক্তভোগী তাদের আত্মসাৎকৃত টাকা ফেরত এবং বিচার চেয়ে সোমবার (৬ জুলাই) আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
ভুক্তভোগী সনেকা বেওয়া বাংলানিউজকে বলেন, স্বামী অনেক আগে মারা গেছেন। একমাত্র ছেলেকে নিয়ে ঝিয়ের কাজ করে ও সরকারের দেওয়া বিধবা ভাতার টাকায় কোনো মতে সংসার চলে। গত তিন মাসের টাকা রফিকুল মেম্বর তুলে নিয়েছেন। অনেকদিন তার পেছনে ঘুরার পরে একদিন পাঁচশ টাকার এক কেজি মাংস কিনে দিয়ে টাকা শোধ বলে জানায়।
অপর ভুক্তভোগী আফতাব উদ্দিন দুলাল বলেন, বুড়ো মানুষ কষ্ট করে ছেলের সংসারে চলি। ভাতার টাকা ছেলের হাতে দিয়ে ওষুধ কিনে খাই। ব্যাংক বলেছে তিন মাসের টাকা না কি মেম্বর তুলে নিয়েছে। মেম্বরের (ইউপি সদস্য) কাছে চাইলে দেই দিব দিচ্ছি বলে আর দেয় নাই। গরিব মানুষ কার কাছে যাই?।
অভিযুক্ত ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলামের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
তবে সারপুকুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আজিজুল ইসলাম প্রধান বাংলানিউজকে বলেন, কয়েকজন ভাতাভোগী আমার কাছে এমন অভিযোগ করেছিল। যার পরিপ্রেক্ষিতে রফিকুল ইসলামকে টাকা পরিশোধ করতে বলেছি। তিনি পরিশোধ করতে চেয়েও তা করেননি।
উপজেলা সমাজসেবা অফিসার রওশন মণ্ডল বাংলানিউজকে বলেন, ব্যক্তি বা নমিনী ছাড়া অন্য কাউকে ভাতার টাকা দেওয়ার নিয়ম নেই। ব্যাংক কীভাবে ইউপি সদস্যদের হাতে টাকা দিয়েছে? এ নিয়ে ভেলাবাড়ি কৃষি ব্যাংক কার্যালয়কে শোকজ পাঠানো হয়েছে। এমন অভিযোগ শুধু সারপুকুরে নয়, ভেলাবাড়ি ইউনিয়নেও রয়েছে। তদন্ত চলছে। তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২০২০ ঘণ্টা, জুলাই ০৬, ২০২০
আরএ