ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

সারা দেশে একটি ‘সাইবার পুলিশ স্টেশন’ করবে সিআইডি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩০ ঘণ্টা, জুলাই ৬, ২০২০
সারা দেশে একটি ‘সাইবার পুলিশ স্টেশন’ করবে সিআইডি

ঢাকা: দেশে ইন্টারনেট সুবিধা অনেকটাই সহজলভ্য হয়েছে। প্রতিদিনই বাড়ছে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা। ইন্টারনেট ব্যবহারে মানুষের যেমন সুবিধা হচ্ছে আবার অপরাধের প্রবণতাও বাড়ছে। অনেকেই সাইবার ক্রাইমের শিকার হয়ে ভুক্তভোগী হচ্ছেন। এ বিষয়ে রাজধানীসহ সারাদেশেরই সাইবার আইনে মামলাও দায়ের হচ্ছে। আবার অনেক অপরাধীও ধরা পড়ছেন।

পুলিশ বাহিনীসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে সাইবার অপরাধ নিয়ে কাজ করে এমন ইউনিটও আছে। তবে এখন পর্যন্ত দেশে সংশ্লিষ্ট একক কোনো থানা প্রতিষ্ঠিত হয়নি।

তবে সাইবার অপরাধ নিয়ে কাজ করবে এমন একটি থানা প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এজন্য তদন্তকারী এ সংস্থাটি সরকারের কাছে একটি পূর্ণাঙ্গ ‘সাইবার পুলিশ স্টেশন’ স্থাপনের জন্য প্রস্তাবনা দিয়েছে।

সোমবার (০৬ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর মালিবাগে সিআইডি কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়টি জানান সিআইডি প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি ব্যারিস্টার মাহবুবুর রহমান।

তিনি বলেন, দেশের প্রথম সাইবার পুলিশ স্টেশন করতে যাচ্ছে সিআইডি। দেশের যতো সাইবার ক্রাইমের অভিযোগ আসবে সেগুলো নিয়ে সাইবার পুলিশ স্টেশন কাজ করবে। এজন্য একটি সাইবার পুলিশ স্টেশন হবে। এবিষয়ে সরকারের কাছে আমরা একটি সুপারিশ পাঠিয়েছি। এটি ঢাকাতেই অবস্থিত হবে। এক্ষেত্রে যেকোনো ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি থানায় মামলা করতে পারবেন। আর সাইবার পুলিশ স্টেশন একটু ভিন্নভাবে কাজ করবে।

তিনি বলেন, সাইবার পুলিশ স্টেশনে সাইবার এক্সপার্ট একটি টিম থাকবে। এছাড়াও ইনভেস্টিগেশন এবং অপারেশনের জন্য আলাদা টিম থাকবে। এছাড়াও প্রতিটি জেলায় সিআইডি কার্যালয়ের কর্মকর্তারা সহযোগীতা করবে। ঢাকার বাইরে সিআইডির কার্যালয়ে গিয়েও ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করতে পারবেন। আবার আসামি গ্রেফতার বা অপারেশনের জন্য জেলার সিআইডি কর্মকর্তারাও সহযোগিতা করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে তারা ঢাকা থেকে আইটি সাপোর্ট পাবেন।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সিআইডিতে থাকা মামলাগুলোর ৮২ শতাংশ অভিযোগপত্র দিয়েছে, তবে সাজা হয়েছে মাত্র ২৪ শতাংশ।

সাজার পরিমাণ কম হওয়ার কারণ প্রসঙ্গে সিআইডির প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি ব্যারিস্টার মাহবুবুর বলেন, মামলার ক্ষেত্রে শাস্তির হার কম কেন এবিষয়টি জানতে আমরা স্টাডি করছি। প্রফেশনাল বিশেষজ্ঞ বিচারক, সাবেক জজ এবং আইনজীবীদের হায়ার করে একটি কমিটি করা হয়েছে। আমরা এক মাস সময় নিয়েছি, এসময় তারা বিভিন্ন মামলাগুলোর গবেষণা করে তাদের জাজমেন্ট জানাবে। আশা করি এ বিষয়ে আগামীতে ভালো খবর জানাতে পারবো। মামলার অভিযোগপত্র জমা দেওয়া এবং মামলায় সাজার পরিমাণের মধ্যে তফাৎ কমিয়ে আনতেও আমরা চেষ্টা করছি।

তিনি বলেন, সাধারণত এ বিষয়গুলোতে আমাদের একটি কমিটি গঠন করে দেওয়া হয় এবং ওই কমিটি কাজ করে। তবে আমি যেটা চাচ্ছি, এ কাজটি প্রফেশনালদের মত থেকে আসুক। আমরা তো আমাদের নিজেদের দোষ দেখতে পারবো না তাই নিউট্রাল জায়গা থেকে কোনো জাজমেন্ট এলে তখন আমাদের দোষগুলো আমরা জানতে পারবো এবং সে জিনিস গ্রুপে আমরা খুব দ্রুত ঠিক করে আরো বেশি কাজ করতে পারবো।

তদন্ত করাই বর্তমানের সিআইডির সব চাইতে বড় চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর মূল সমস্যা হচ্ছে শুধু মৌখিক সাক্ষীর ওপর নির্ভর করতে হয়। যেমন একটি ঘটনা, নদীর তীরে একজন খুন হলো, তার মরদেহ পাওয়া গেল, কিন্তু পরিচয় শনাক্ত হচ্ছে না। সেক্ষেত্রে নদীর ধারে যে পুলিশ স্টেশন আছে সেখানে কোনো নিখোঁজ ব্যক্তি আছে কি না সেটি খুঁজে বের করে তারপর কারো যদি অভিযোগ থাকে, তবে সেক্ষেত্রে অভিযোগ দাতা ফরেনসিক নমুনা এবং মৃত ব্যক্তির নমুনা নিয়ে আমরা ল্যাবে টেস্ট করছি এরপর পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে। পরবর্তীতে ওই ঘটনায় আসামিকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়। তাই আমরা চাচ্ছি, কোনো ঘটনায় মৌখিক সাক্ষী সংগ্রহের পাশাপাশি ফরেনসিক এভিডেন্স থাকবে। যদি মৌখিক সাক্ষী পরবর্তীতে নাও কার্যকর হয় তবে এ এভিডেন্সের ভিত্তিতে মামলার বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব হবে।

ব্যারিস্টার মাহবুবুর রহমান বলেন, সিআইডির যে ফরেনসিক ল্যাব আছে। এখানে ফরেনসিক এক্সপার্টদের মতামত বিভিন্ন অর্গানাইজেশন, পুলিশের বিভিন্ন মামলা এবং কোর্টকে দিয়ে সহযোগিতা করতে পারি।

তিনি বলেন, সিআইডিতে সর্বমোট তিন হাজার ১০৮ জনবল আছে। এদেরকে কাজের সুবিধার্থে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়ে থাকে। বর্তমানে মামলার সংখ্যা বাড়ছে সেই সঙ্গে বাড়ছে গুরুত্ব। এজন্য আমরা একটি পরিকল্পনা করেছি। দেশের প্রতিটি জেলায় সিআইডির পক্ষ থেকে একজন পুলিশ সুপার (এসপি) এবং একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অতিরিক্ত এসপি) থাকবে। যেসব জেলায় গুরুত্বপূর্ণ মামলা রয়েছে সেখানে এসপি পর্যায়ের কর্মকর্তা থাকবেন এবং যেখানে তুলনামূলক কম গুরুত্বপূর্ণ মামলার ঘটনা রয়েছে সেখানে অতিরিক্ত এসপি দায়িত্বে থাকবেন। এক্ষেত্রে তাদের কাজের পরিধি এবং কিছু ক্ষমতাও বাড়ানো হচ্ছে। এতে করে যেকোনো মামলার তদন্তে ভালো ফল আসবে বলে আমি আশা করছি। ইতোমধ্যে এর ৮০ শতাংশ সেটআপ হয়ে গেছে।


বাংলাদেশ সময়: ১৬২৫ ঘণ্টা, জুলাই ০৬, ২০২০
এসজেএ/আরআইএস/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।