ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

জনবল সংকটে শেবাচিম হাসপাতাল, যেনতেনভাবে চলছে আইসিইউ

মুশফিক সৌরভ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৪৪ ঘণ্টা, জুলাই ৬, ২০২০
জনবল সংকটে শেবাচিম হাসপাতাল, যেনতেনভাবে চলছে আইসিইউ

বরিশাল: কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা দিনদিন বাড়লেও সেই অনুপাতে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে বাড়েনি চিকিৎসকের সংখ্যা। জনবল সংকটের কারণে আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থার সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।

বর্তমান পরিস্থিতিতে হাসপাতালের আইসোলেশন, আইসিইউ ও করোনা ইউনিট সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলেও পর্যাপ্ত জনবলের অভাবে এসব সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে প্রশাসন। বিশেষ করে করোনা ও আইসিইউ ইউনিটে সেবা পেতে সুপারিশ ছাড়া সহায়তা পাওয়া যায় না বলে অভিযোগ রোগীর স্বজনদের।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, করোনা ভাইরাসের এ সময় বরিশাল বিভাগের ছয় জেলা ও ঢাকা বিভাগের মাদারীপুর উপজেলার একাংশের রোগীরা শেবাচিম হাসপাতালের ওপর নির্ভরশীল। দীর্ঘদিন দাবির পর গোটা বরিশাল বিভাগের মধ্যে একমাত্র শেবাচিম হাসপাতালে ২০১৭ সালে আইসিইউ ব্যবস্থা চালু হয়। এরপর কখনো জনবল সংকট, কখনো প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশের অভাবে বেশ কয়েকবার বন্ধ হয়েছে আইসিইউ সেবা। বর্তমান পরিস্থিতিতে হাসপাতালের মূল ভবনে সাধারণ রোগীদের জন্য ১০টি ও করোনা ওয়ার্ডে ১৮টি আইসিইউ বেড চালু করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, যা এখন পর্যন্ত সচল থাকলেও যেনতেনভাবে চলছে সেবাদান কার্যক্রম। অপরদিকে আইসিইউতে রোগীদের মৃত্যু ঘিরে চিকিৎসকদের দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ থাকলেও, আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতির অভাব ও জনবল সংকটই মুখ্য কারণ হিসেবে দেখছে কর্তৃপক্ষ।

স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বিভাগের ছয়টি জেলা হাসপাতাল, ৩৪টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ছাড়াও শেবাচিমে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীর সংকট ব্যাপক। বিভাগের ১ হাজার ১৩১টি চিকিৎসক পদের মধ্যে পাঁচশ’রও বেশি এবং মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টের ১০২টি পদের মধ্যে ৫৮টিই শূন্য রয়েছে। শেবাচিম হাসপাতালের অবস্থা আরও করুণ। ১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠিত ৩৬০ বেডের হাসপাতালের যে জনবল কাঠামো ছিল তার অর্ধেকও এখন নেই। অথচ কাগজে-কলমে হাসপাতালটি হাজার বেডে উন্নীত হয়েছে বহু আগে।

শেবাচিম হাসপাতালের প্রশাসনিক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, টেকনোলজিস্টের ২৭টি পদের মধ্যে ৬টি এবং নার্সদের মোট ৯৭৫টি পদের মধ্যে ৫২টি পদ শূন্য রয়েছে। তবে চিকিৎসকদের ২২৪টি পদের মধ্যে ১২৭টি পদই শূন্য রয়েছে। আর তৃতীয় শ্রেণির ১০২টি পদের মধ্যে ৩১টি এবং চতুর্থ শ্রেণির ৪২৬টি পদের মধ্যে ১৩৫টি পদই খালি রয়েছে। অন্যদিকে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের আগে যেখানে এ হাসপাতালে দৈনিক গড়ে প্রায় ১৪শ’ রোগী ভর্তি হতো, সেখানে এখন ৭শ’ অতিক্রম করছে না।

হাসপাতালে ২৮টি আইসিইউর মধ্যে কোভিড-১৯ আক্রান্তদের জন্য রয়েছে ১৮টি। কর্তৃপক্ষ জানায়, হাসপাতালের শুরুতে আইসিইউ না থাকায় পরবর্তীকালে চিকিৎসক ও টেকনোলজিস্ট নিয়োগ হয়নি। অ্যানেস্থেসিয়া বিভাগের চিকিৎসক এবং ২০ জন নার্সকে প্রশিক্ষণ দিয়ে আইসিইউ সেবা চালু রাখা হয়েছে। এ দিয়েই সাধারণ ও করোনা উভয় ওয়ার্ডের আইসিইউ সচল রাখা হচ্ছে। তবে করোনা ওয়ার্ডের আইসিইউ বেডের সবগুলো চালু নেই বলে জানিয়েছে অপর এক সূত্র। এছাড়া আইসিইউ সংশ্লিষ্ট এবিজি, সিপিএপিসহ বেশকিছু যন্ত্রপাতিরও সংকট রয়েছে। অন্যদিকে, সেন্ট্রাল অক্সিজেন ব্যবস্থা না থাকায় আইসিইউর পাশাপাশি আইসোলেশন ওয়ার্ডে রোগীদের অক্সিজেন নিতে হয় সিলিন্ডার থেকে।

সার্বিক বিষয়ে শেবাচিম হাসপাতালের আউটডোর ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. সৌরভ সুতার বলেন, ‘সেন্ট্রাল সাপ্লাই ব্যবস্থা না থাকলেও করোনা ওয়ার্ডে আইসিউতে বিকল্প উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন ব্যবস্থা কার্যকর রয়েছে, যা অক্সিজেনের চাপ ও মান বজায় রাখছে। ’

তিনি বলেন, ‘চিকিৎসক ও কর্তৃপক্ষের চেষ্টার কোনো অন্ত নেই, তারপরও বর্তমানে আইসিইউ সংকট এ হাসপাতালে ব্যাপক আকারে ধারণ করেছে। অ্যানেস্থেসিয়া বিভাগের চিকিৎসক দিয়ে এটি চালানো হচ্ছে। আমরা সব রোগীকে আইসিইউ সেবা দিতে পারছি না। এ কারণে আমরা আমাদের দু’জন সহকর্মীকেও হারিয়েছে। ’

এদিকে হাসপাতালের পরিচালক ডা. বাকির হোসন বলেন, ‘হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও স্টাফরা করোনা রোগী নিয়ে দিন-রাত কষ্ট করে যাচ্ছেন। আইসিইউতে পর্যাপ্ত সেবা দেওয়া হচ্ছে। তবে সিপআপ, বাইপাপ, এবিজি মেশিনসহ কিছু যন্ত্রপাতি ও জনবল পেলে আইসিইউ ইউনিটটি স্বয়ংসম্পূর্ণভাবে চালানো সম্ভব। ’

স্বাস্থ্য অধিদফতরের বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল জানান, ‘বিভাগের জেলা ও উপজেলায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও হাসপাতালে চিকিৎসক, নার্স, টেকনোলজিস্টসহ তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির শূন্য পদে সম্প্রতি নিয়োগ পাওয়াদের মধ্যে বরিশালের ৬৫ জন চিকিৎসককে শেবাচিমসহ বিভিন্ন হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে দেওয়া হয়েছে।

কোভিড-১৯ আক্রান্তদের জন্য বিভাগে পাঁচ শতাধিক আইসোলেশন বেডের ব্যবস্থা রয়েছে। তবে শেবাচিম ছাড়া বিভাগে বেসরকারিভাবেও আর কোথাও আইসিইউর ব্যবস্থা নেই। ’

জনবল সংকটের বিষয়টি একাধিকবার সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সহ জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের অবহিত করা হয়েছে বলে জানায় বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয়।

এখন পর্যন্ত শেবাচিম হাসপাতালে আইসোলেশন ও করোনা ওয়ার্ডে ৭৫৪ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ৫ জুলাই সকাল পর্যন্ত আইসোলেশন ও করোনা ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন মোট ১১৪ জন। শেবাচিম হাসপাতালে আইসোলেশন ও করোনা ওয়ার্ডে মোট ১১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ৪১ জন কোভিড পজিটিভ রোগী এবং বাকিরা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৪০ ঘণ্টা, জুলাই ০৬, ২০২০
এমএস/এফএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।