বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক শামছুন নাহার বাংলানিউজকে বলেন, বিদ্যালয়ে প্রায় ২০০ শিক্ষার্থী রয়েছে এবং কর্মরত রয়েছেন ছয়জন শিক্ষক। নদী ভাঙনের কবলে এরই মধ্যে স্কুল মাঠের এক তৃতীয়াংশ নদীগর্ভে চলে গেছে।
তিনি আরও বলেন, ২০১৯ সালে বিদ্যালয়টির মাঠের কিছু অংশ ভেঙে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এ বছর বর্ষার শুরু থেকেই ভাঙন শুরু হয়েছে। তবে ২০১৯ সালে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নতুন স্থানে নতুন ভবন নির্মাণের লক্ষ্যে মাটি পরীক্ষা করা হয়েছে। তবে অজ্ঞাত কারণে নতুন ভবন নির্মাণের কাজ এখনো শুরু হচ্ছে না।
অন্যদিকে, স্কুলটি স্থানান্তর জরুরি বিবেচনায় বর্তমান স্কুলের জমি দাতা দেলোয়ার হোসেন মাস্টার এ স্কুলের ক্যাচম্যাপের মধ্যেই বর্তমান স্থান থেকে প্রায় ৫০০ মিটার দূরে স্কুলের নামে নতুন করে প্রয়োজনীয় জমি দিয়েছেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে নতুন জমিতে স্কুলটি স্থানান্তর করে নতুন ভবন নির্মাণের দাবি এলাকাবাসীর।
দক্ষিণ নারায়ণখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি মো. শফিক খান বলেন, কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি, পাহাড়ি ঢল ও মৃগী নদীর পানি প্রবাহ বৃদ্ধির কারণে নদীর উত্তর পাড়ে ভাঙন শুরু হয়েছে। নদীগর্ভে চলে গেছে অনেক আবাদি জমি ও গাছপালা, অন্যত্র সড়িয়ে নেওয়া হয়েছে অনেক বসতবাড়ি। এরই মধ্যে বিদ্যালয় মাঠের বেশ কিছু অংশ মৃগী নদীগর্ভে চলে গেছে। চলতি বর্ষায় বিদ্যালয়টি মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে বলে সরজমিনে দেখা গেছে। খুব শিগগিরই স্কুলটি অন্যত্র সড়িয়ে না নিলে নদীগর্ভে চলে যেতে পারে। বানের পানিতে মিশে যেতে পারে শত শত শিক্ষার্থীর স্বপ্ন।
স্থানীয় সংসদ সদস্য সাবেক কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীকে বিষয়টি কয়েকবার অবহিত করা হলেও এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো কাজ হয়নি। তবে জনস্বার্থে নদীরক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা ও ঐতিহ্যবাহী স্কুলটি অন্যত্র সড়িয়ে নেওয়া জরুরি বলে মনে করছেন এলাকাবাসী। তারা জানান, এই বিদ্যালয়টি নদী ভাঙনের ফলে অন্তত দু’বার স্থানান্তর করতে হয়েছে।
চর অষ্টধর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা গোলাম রব্বানী বাংলানিউজকে বলেন, স্কুলটি স্থানান্তর না করলে ভবনসহ সম্পূর্ণ স্কুলটি নদীগর্ভে হারিয়ে যেতে পারে। ঘটতে পারে মারাত্মক দুর্ঘটনা। এখন স্কুলটি স্থানান্তর প্রক্রিয়া শুরু করলে একটি হাফ বিল্ডিং ও একটি সম্পূর্ণ পাকা ভবন বিক্রি করে দিয়ে, ওই টাকায় আপাতত সরকারি বরাদ্দকৃত নতুন ভবন নির্মাণের আগ পর্যন্ত নতুন স্থানে একটি হাপ বিল্ডিং ভবন তৈরি করে হলেও সেখানে পাঠদান কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া সম্ভব। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেন তিনি।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ফজিলাতুন নেছা বাংলানিউজকে জানান, বিদ্যালয়টির বর্তমান অবস্থা সরজমিনে পরিদর্শন করে জেলা শিক্ষা অফিসসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতনদের জানানো হয়েছে। জেলা শিক্ষা অফিসের নির্দেশনানুযায়ী পরবর্তী কাজ বাস্তবায়ন করা হবে। এরই মধ্যে নতুন ভবন নির্মাণের জন্য নতুন স্থানের মাটি পরীক্ষা করা হয়েছে। প্রক্রিয়া শেষে নতুন ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করা হবে বলে জানান তিনি। আপাতত ভবন রক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সহায়তা কামনা করা হয়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাহিদুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ভাঙন কবলিত দক্ষিণ নারায়ণখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করেছি। আপাতত রক্ষা করার জন্য পাউবোকে বিষয়টি জানানো হয়েছে এবং নতুন স্থানে নতুন ভবন নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২১২০ ঘণ্টা, জুলাই ০৫, ২০২০
এসআরএস