ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ওয়ারী থেকে বের হতে নানা ছুতো দেখাচ্ছেন বাসিন্দারা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১০ ঘণ্টা, জুলাই ৫, ২০২০
ওয়ারী থেকে বের হতে নানা ছুতো দেখাচ্ছেন বাসিন্দারা

ঢাকা: রাজধানীর ওয়ারীতে লকডাউনের আজ দ্বিতীয় দিন। লকডাউন হলেও বাসিন্দাদের অনেকেই নিয়ম-নীতি ও স্বাস্থ্যবিধি মানতে চাইছেন না। নানা ছুতো দেখিয়ে তারা বাইরে যেতে চান। যেতে দেওয়া না হলে বিভিন্ন সময় স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় লিপ্ত হচ্ছেন অনেকেই। যদিও উপযুক্ত কারণ ছাড়া কাউকেই লকডাউন এলাকা থেকে বের হতে দিচ্ছেন না স্বেচ্ছাসেবকরা।

লকডাউনে থাকা ওয়ারীর ভেতরে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, পুরো এলাকার ভেতরে ওষুধের দোকান, সুপার শপ, হাসপাতাল খোলা রয়েছে। সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্ন কর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ময়লা সংগ্রহ করছে।

সড়ক অনেকটা ফাঁকা। তবে কিছু মোড়ে দুই/একজন তরুণকে দাঁড়িয়ে থেকে আলাপ করতে দেখা গেছে। লকডাউন এলাকার ভেতরে পুলিশের মোবাইল টিমের সদস্য, টহল টিমের সদস্য এবং স্বেচ্ছাসবকরা একটু পর পর এলাকা পরিদর্শন করছেন।

করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে এ লকডাউনকে অনেক বাসিন্দা স্বাগত জানিয়েছেন। অনেকেই আবার একে দেখছেন অহেতুক ভোগান্তি হিসেবে।

ওয়ারীর ভেতরে ঢুকতে চাইছেন একজন।  ছবি: ডিএইচ বাদল

ওয়ারীতে বসবাস করেন মুশফিকা। তিনি একটি অনলাইন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালান। তিনি বলেন, ওয়ারীতে লকডাউন দেওয়া মানে একটা ভোগান্তি। এই লকডাউনের কোনো মানে নেই। যারা বাইরে যাওয়ার তারা ৪ জুলাইয়ের আগেই চলে গেছে। তাদের মধ্যে কেউ করোনা আক্রান্ত থাকলে অন্য এলাকায় গিয়ে রোগ ছড়াবে। আমরা যারা সাধারণ মানুষ আছি, তাদের ব্যবসা বন্ধ, সবকিছু বন্ধ। মোটকথা আমরা ভোগান্তির মধ্যেই পড়ে আছি। গেটে এসে দীর্ঘক্ষণ কথা বলে অনুমতি নিয়ে ভেতরে ঢুকতে হলো। ভোগান্তির মধ্যে দুইদিন কেটে গেলো।

ব্যবসায়ী মো. রাশেদ বসবাস করেন ওয়ারী এলাকায়। লকডাউনের কারণে এলাকা থেকে বের হয়ে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যেতে পারছেন না বলে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন তিনি। তিনি বলেন, ব্যবসা করি নবাবপুরে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানে যেতে পারতেছিনা বাসায় থাকতে হচ্ছে। এই লকডাউন মানুষের জন্য ভোগান্তি। লকডাউন দিলে পুরো ঢাকা সিটি দিতে পারতো। তাতে লাভ হতো। কিন্তু ছোট একটি জোন দিয়ে কোনো লাভ নেই।

বাইরে বের হতে স্বেচ্ছাসেবকদের অনুরোধ করতে দেখা যাচ্ছে একজনকে।  ছবি: ডিএইচ বাদল

দায়িত্বরত পুলিশ সদস্য ও স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নবাবপুর, ইসলামপুরের অনেক ব্যবসায়ী ওয়ারী এলাকায় বসবাস করেন। তারা বাইরে বের হতে চাচ্ছেন বেশি। কেউ বলছেন, ব্যাংকে আমার লোন আটকে যাবে, কেউ বলছেন- কোর্টে মামলার শুনানি আছে যেতে হবে, কেউ টিভি মেরামত করতে যেতে চাইছেন, আবার কেউ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যেতে চাইছেন। এছাড়াও নানা কারণ দেখিয়ে লোকজন বাইরে বের হতে চাইছেন। তবে উপযুক্ত কারণ ছাড়া কাউকে বের হতে দেওয়া হচ্ছে না। বের হতে দেওয়া না হলে অনেকেই বিকবিতণ্ডায় লিপ্ত হচ্ছেন।

স্বেচ্ছাসেবক ওয়াহিদ বলেন, কাজের গুরুত্ব দেখিয়ে অনেকেই বাইরে যেতে চাইছেন। কিন্তু জরুরি চিকিৎসা সেবার বিষয় ছাড়া কাউকে আমরা ভেতরে আসতেও দিচ্ছি না এবং বাইরেও যেতে দিচ্ছি না।

জানা যায়, বাসিন্দাদের খাবারের চাহিদা মেটাতে মীনা বাজার, বিগ বাজার ও স্বপ্ন এ তিনটি সুপার শপের আউটলেট খোলা রয়েছে। তাছাড়া ৪১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলরের সঙ্গে এই তিনটি সুপারশপের চুক্তি হয়েছে, তারা অনলাইনে অর্ডার নিয়ে বাসিন্দাদের ঘরে খাবার পৌঁছে দেবেন। এছাড়াও এলাকায় দশটি ভ্যানে করে সবজি বিক্রি করা হচ্ছে। সেখানে বাজারমূল্যের চেয়ে ৩০ শতাংশ কম দামে সবজি বিক্রি করা হবে। এজন্য সবজি বিক্রেতা কাউন্সিলরের পক্ষ থেকে দৈনিক ৫০০ টাকা সহযোগিতা পাবেন।

ওয়ার্ড কাউন্সিলর আহমেদ ইমতিয়াজ মান্নাফি বাংলানিউজকে বলেন, গতকাল থেকে এখন পর্যন্ত ২০ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। তবে এদের মধ্যে করোনা আক্রান্ত কতজন সেটার সংখ্যা এখনো জানা যায়নি। অনেকেই বের হওয়ার জন্য নানা ধরনের কারণ দেখাচ্ছে। কিন্তু আমরা তাদের বের হতে দিচ্ছি না। বিষয়টি শক্তভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১০ ঘণ্টা, জুলাই ০৫, ২০২০
এসজেএ/এইচএডি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad