শনিবার (৪জুলাই) ২৪ ঘণ্টায় যমুনার পানি ১০ সেন্টিমিটার কমে বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অপরদিকে ব্রহ্মপুত্রসহ শাখা নদ-নদী গুলোর পানি অপরিবর্তিত রয়েছে।
জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) পানি পরিমাপক (গেজ পাঠক) আবদুল মান্নান জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনার পানি ১০ সেন্টিমিটার কমে ৫২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বর্তমানে এখানে পানির অবস্থান ২০.০২ সেন্টিমিটার।
এদিকে পানি কমলেও এখনো জামালপুর জেলার ৭টি উপজেলার প্রায় ৪ লাখেরও বেশি মানুষ পানিবন্দি হয়ে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। পানি কমায় বাড়িঘর ছেড়ে এসে আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নেওয়া বানভাসীরা বাড়িঘরে ফেরার চেষ্টা করছে। তবে সেখানে এখনো থাকার উপযোগী না হওয়ায় আবারও ফিরে আসছে।
এবারের বন্যায় জেলার মোট ৬৮ ইউনিয়নের মধ্যে ৪২টি ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা বন্যা কবলিত হয়েছে। নদীর পানি কমলেও চলছে বিশুদ্ধ খাবার পানির চরম সংকট। বিশেষ করে দেওয়ানগঞ্জ ও ইসলামপুর উপজেলার চরাঞ্চলে এ সমস্যা অনেক বেশি।
এদিকে বিভিন্ন এলাকার আঞ্চলিক সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা এখনো পানির নিচে রয়েছে। পানিবন্দি দুর্গত মানুষের খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি ও গো খাদ্যের চরম সংকট দেখা দিয়েছে।
এবারের বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কৃষি বিভাগ। প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমির ফসল পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। আগে ভাগেই পানি আসায় ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি। বিশেষ করে অর্থকারী ফসল পাট ও আখের ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আমিনুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, পাট, আমনের বীজতলা, আউশ ধান, সবজিসহ অন্তত ১০ হাজার হেক্টর জমির ফসল বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে।
দ্রুতগতিতে পানি বাড়লেও কমছে খুবই ধীর গতিতে, ফলে বন্যার্তদের মধ্যে দুর্ভোগ বাড়ছে। এদিকে কয়েকদিনের মধ্যে পানি আবারও বাড়বে বলে জানিয়েছে জামালপুরের পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সাইদ বাংলানিউজকে জানান, এ জেলার প্রধান নদ নদী হচ্ছে যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র। এদের উৎপত্তিস্থল হচ্ছে উজানে চীন ও ভারত।
উজানে বৃষ্টি হলে দ্রুতই এসব নদ নদীর পানি বৃদ্ধি পায়। বর্তমান বর্ষা মৌসুমের প্রথমভাগে অবস্থান করছি আমরা। এ সময়টাতে ভারত বাংলাদেশ প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। সে কারণে খুব সহসাই পানি কমছে না। বরং আগামী সপ্তাহে প্রচুর বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা থাকায় পানি বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে বেশি। ফলে দীর্ঘস্থায়ী হতে যাচ্ছে চলতি বন্যা।
পানি বৃদ্ধি পেলে বন্যা আরও চরম আকার ধারণ করার পাশাপাশি জন দুর্ভোগ আরও বাড়বে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।
বন্যায় ইসলামপুর ও দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার কিছু কিছু জায়গায় ত্রাণ বিতরণ শুরু হলেও প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। তবে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. নায়েব আলী জানান এ পর্যন্ত জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যা দুর্গতদের ৩৪ মেট্রিক টন চাল, নগদ সাড়ে ১৩ লাখ টাকা এবং ২ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২১৫৮ ঘণ্টা, জুলাই ০৪, ২০২০
আরএ