লকডাউনে থাকা বাসিন্দারা অনলাইনেও বিভিন্ন পণ্য অর্ডার করছেন। সেসব পণ্য ডেলিভারিম্যানের কাছ থেকে সংগ্রহ করে তাদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন স্বেচ্ছাসেবকরা।
লকডাউন বাস্তবায়নকারী সংশ্লিষ্টরা বলছেন, লকডাউনের প্রথমদিনে স্বেচ্ছাসেবকরা সহযোগিতামুলক কাজ করছেন। শুরুর আগে বাসিন্দারা অনেকেই বেশ কিছুদিনের খাবার মজুদ করে রেখেছেন। তাই খারারের চাহিদা এখনও দেখা দেয়নি। রোগীদের ওষুধ সরবরাহ থেকে শুরু করে করোনা আক্রান্ত রোগীদের টেস্ট করাতে নিয়ে যেতেও সহায়তা করছেন স্বেচ্ছাসেবকরা। গেটে একটি বুথ স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে যাওয়া আসার এবং জরুরি সেবা প্রবেশের ক্ষেত্রে নাম, ঠিকানা ও তথ্য এন্ট্রি করে রাখা হচ্ছে।
ওয়ারীতে হেলথ কেয়ার সেন্টার হাসপাতাল এবং নিবেদিত শিশু হাসপাতাল নামে দুটি হাসপাতাল রয়েছে। হাসপাতাল দুটিতে রোগী ভর্তি আছে। রোগীদের জন্য জরুরি ওষুধ সেবার গাড়ি ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে।
শনিবার (০৫ জুলাই) ওয়ারীর চন্ডীচরণ বোষ স্ট্রিট প্রবেশ গেটে সরেজমিনে দেখা যায়, বাসিন্দাদের অনলাইনে অর্ডার করা বিভিন্ন পণ্য ডেলিভারিম্যানদের থেকে বুঝিয়ে নিয়ে স্বেচ্ছাসেবকরা কাস্টমারদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন।
স্বেচ্ছাসেবক ফরহাদ রেজা বাংলানিউজকে জানান, ওয়ারী এলাকায় কিডনি সমস্যাজনিত অনেক রোগী আছেন। নিয়মিত ডায়ালাইসিস করতে হয় এমন রোগীদের হাসপাতালে আনা নেওয়ায় সহযোগিতা করা হয়। আমরা তাদের বিষয়ে শীথিল আচরণ করছি। তবে তাদের নাম পরিচয় খাতায় এন্ট্রি করে রাখা হয়।
ওয়ারীর চন্ডীচরণ বোষ স্ট্রিট রোড এবং জয়কালী মন্দিরের গেটের মধ্যে আরও একটি গেট রয়েছে। সেটি বাঁশ দিয়ে আটকে রাখা। সেখানে সরেজমিনে দেখা যায়, বাঁশের ওপর দিয়ে মানুষ প্রয়োজনীয় পণ্য ও খাবার আদান-প্রদান করছেন।
এদিকে, ওয়ারী এলাকার টিপু সুলতান রোড, যোগীনগর রোড ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক (জয়কালী মন্দির থেকে বলধা গার্ডেন), লারমিনি স্ট্রিট, হেয়ার স্ট্রিট ও নবাব স্ট্রিট সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এদিকে এলাকার ভেতরে প্রবেশ এবং বাহির হওয়ার জন্য চন্ডীচরণ বোষ স্ট্রিট (ওয়্যার স্ট্রিট) এবং র্যাংকিং স্ট্রিট খোলা রাখা হয়েছে। এই দুটি গেটে ১০ জন করে স্বেচ্ছাসেবক কর্মী নিয়োজিত রয়েছেন। এছাড়া বাকি গেটে ২ জন করে স্বেচ্ছাসেবক নিয়োজিত আছেন।
প্রবেশ গেটে সরেজমিনে দেখা যায়, অনেকেই মোটরসাইকেল নিয়ে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাদের ফিরিয়ে দিচ্ছেন। এছাড়াও ওয়ারী এলাকায় বিভিন্ন ব্যাংক শাখায় লোকজন যাইতে চাইলেও কোনোভাবেই তাদেরকে ভেতরে প্রবেশ করার সুযোগ দেওয়া হয়নি।
দায়িত্বরত ওয়ারীর ৩৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আহমেদ ইমতিয়াজ মান্নাফি বাংলানিউজকে বলেন, লকডাউন শুরু হয়েছে। বাসিন্দাদের যেকোনো প্রয়োজনে স্বেচ্ছাসেবকরা কাজ করছেন। বর্তমানে ওষুধ ও রোগীর করোনা টেস্টের বিষয়ে স্বেচ্ছাসেবকরা সহযোগিতা করছেন। তবে এখনো খাবারের চাহিদা তেমন পরিলক্ষিত হয়নি। কারণ লকডাউনের আগে প্রায় সবাই খাদ্যপণ্য মজুদ করেছেন। তবে খাদ্যপণ্যের চাহিদা দেখা দিলে সেটিও আমরা সরবরাহ করার জন্য প্রস্তুত রয়েছি।
তিনি বলেন, বাসিন্দাদের মধ্যে অনেকেই বাইরে যাওয়ার জন্য বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছেন। তবে আমরা সেটিও শক্তভাবে হ্যান্ডেল করছি। আর যৌক্তিক কারণ থাকলে অবশ্যই তাদের বের হতে বা প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, আমরা সঠিক নিয়মে লকডাউন বাস্তবায়ন করতে কাজ করছি।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. এমদাদুল হক বাংলানিউজকে বলেন, প্রথম দিনে ছোটখাটো কিছু বিচ্যুতি থাকতে পারে, সেগুলো আমরা শনাক্ত করে সমাধান করার চেষ্টা করছি। তবে আমাদের সার্ভিস দেওয়ার বিষয়টিতে কোন ত্রুটি নেই।
লকডাউন এলাকায় সবাইকে নিয়ম-নীতি এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, যদি কেউ স্বাস্থ্যবিধি না মানে তবে সঠিকভাবে লকডাউন বাস্তবায়ন হবে না। তাই সবাইকে নিয়ম-নীতি মেনে চলতে হবে। না মানলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২১১৫ ঘণ্টা, জুলাই ০৪, ২০২০
এসজেএ/এমআরএ