ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

পানি কমলেও ভাঙন আতঙ্কে তিস্তাপাড়ের মানুষ

খোরশেদ আলম সাগর, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২৬ ঘণ্টা, জুলাই ৪, ২০২০
পানি কমলেও ভাঙন আতঙ্কে তিস্তাপাড়ের মানুষ

লালমনিরহাট: উজানের পাহাড়ি ঢলে তিস্তার পানি প্রবাহ সকালে  বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও সন্ধ্যার মধ্যে তা বিপৎসীমার নিচে নেমে এসেছে। ফলে তিস্তার বামতীরের লালমনিরহাট জেলায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটেছে। তবে পানি কমলেও বেড়েছে ভাঙন।

শনিবার (৪ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার ডালিয়া পয়েন্টে পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ৫২ সেন্টিমিটার। যা স্বাভাবিক (৫২ দশমিক ৬০ সেন্টিমিটার) চেয়ে ৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

 

এর আগে একই দিন সকাল ৬টায় তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ২৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে তিস্তার বাম তীরের লালমনিরহাটের ৫টি উপজেলার প্রায় ৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছিল। সন্ধ্যার মধ্যে পানি প্রবাহ কমে যাওয়ায় মুক্তি পেতে শুরু করেছে পানিবন্দি পরিবারগুলো।

স্থানীয়রা জানান, ধেয়ে আসা উজানের পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়েছে। তা তিস্তার বিপৎসীমা অতিক্রম করে দিনভর প্রবাহিত হয়। জন্ম থেকে খনন না করায় তলদেশ ভরাট হওয়া উজানের সামান্য ঢেউয়ে তিস্তার দুই কুল উপচে বন্যার সৃষ্টি হয়। ডান তীরে রংপুর অংশে শক্তিশালী বাঁধ থাকায় বাম তীরে আঘাতটা কয়েকগুন বেশি হয়। ফলে বাম তীরের লালমনিরহাটের ৫টি উপজেলার কয়েক হাজার পরিবার দুর্ভোগে পড়ে। উজানে পানি প্রবাহ কমে গেলে এ অঞ্চলে নদী ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করে। তলদেশ ভরাট হওয়ায় গতিপথ না পেয়ে লোকালয়ে প্রবেশ করছে তিস্তার পানি। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েন তিস্তার তীরবর্তী মানুষ।

গত সপ্তাহের শেষ দিকে টানা ৪ দিন বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয় তিস্তার পানি। ফলে লালমনিরহাটের ৫টি উপজেলার নিম্নাঞ্চলের প্রায় ১০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ে। সেই বন্যার ক্ষত না শুকাতে শনিবার (৪ জুলাই) সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত বিপদৎসীমার ২৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয় তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ। ফলে নিম্নাঞ্চলে নতুন করে তৃতীয় দফায় বন্যা দেখা দেয়। চরম দুর্ভোগে পড়ে তিস্তাপাড়ের মানুষ। পানি প্রবাহ সকালে বাড়লেও সন্ধ্যা ৬টায় পুনরায় কমে গিয়ে বিপৎসীমার ৮ সেন্টিমিটার নিচে নেমে আসে। পানি কমলেই ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করে তিস্তাপাড়ে। মূলত উজানের পাহাড়ি ঢলের ফলে তিস্তায় বন্যা দেখা দেয়।

বিপৎসীমার নিচে তিস্তার পানি।  ছবি: বাংলানিউজভাঙনের ফলে তিস্তায় বিলিন হচ্ছে বসতভিটা, ফসলি জমিসহ নানান স্থাপনা। সদর উপজেলার চর গোকুন্ডা, আদিতমারী উপজেলার বাহাদুরপাড়া, চন্ডিমারী, কুটিরপাড়, কালীগঞ্জের আমিনগঞ্জ, হাতীবান্ধার গড্ডিমারী, ডাউয়াবাড়ি, সির্ন্দুনা ও সানিয়াজানে তিস্তা নদীর ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। ঝুঁকিতে পড়েছে সলেডি স্প্যার বাঁধসহ সব বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ। বেশি ঝুঁকিতে পড়েছে আদিতমারীর কুটিরপাড়া ও বাহাদুরপাড়া গ্রামের বালুর বাঁধ। সরকারিভাবে বরাদ্দ চেয়ে ব্যর্থ হয়ে স্থানীয়রা নিজেদের উদ্যোগে বাহাদুরপাড়া গ্রামে সাড়ে ৪শ মিটার দীর্ঘ একটি বাঁধ নির্মাণ করেন। ফলে বন্যা ও ভাঙন থেকে রক্ষা পায় কয়েক হাজার পরিবার, বিদ্যালয়সহ নানান সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। সেই বাঁধটি ভাঙনের মুখে পড়েছে। এটি রক্ষায় কিছু জিও ব্যাগের দাবি জানালেও সরকারিভাবে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

তবে বাঁধটি প্রসঙ্গে স্থানীয় মহিষখোচা ইউপি সদস্য মতিয়ার রহমান মতি বাংলানিউজকে বলেন, নিজের সম্পদ রক্ষায় নিজেরাই চাঁদা দিয়ে এ বাঁধটি নির্মাণ করেছি। সেই বাঁধটি রক্ষায় কিছু জিও ব্যাগ প্রয়োজন। যার জন্য বিভিন্ন দফতরে ঘুরেছি। পানি উন্নয়ন বোর্ড ও মাঠ প্রশাসনের অনেক কর্মকর্তা পরিদর্শন করে আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু বাস্তবায়ন হয়নি। বাঁধটি রক্ষা করতে ব্যর্থ হলে কয়েক হাজার পরিবার নদী গর্ভে বিলীন হবে বলেও আশঙ্কা করেন তিনি।

বন্যা আর খরার মত প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে ফসল ও পরিবার পরিজনকে বাঁচাতে তিস্তা নদী খনন করে উভয় পাড়ে স্থায়ীভাবে বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছে তিস্তাপাড়ের মানুষ। খনন করে বাঁধ নির্মাণ হলে ভাঙন, বন্যা আর খরা থেকে ফসল, সম্পদ ও জীবন বাঁচানোর পাশাপাশি তিস্তার পানি ব্যবহার করে কৃষির আমূল পরিবর্তন আনা সম্ভব বলে দাবি স্থানীয়দের।

তিস্তাপাড়ের গোবর্দ্ধন বাহাদুর পাড়া গ্রামের শিক্ষক নুর আলম সেফাউল বাংলানিউজকে বলেন, জন্মলগ্ন থেকে তিস্তা নদী খনন না করায় প্রতিবছরের বন্যায় পলি পড়ে নদীর তলদেশ ভরাট হয়েছে। ফলে পানি প্রবাহের পথ না পেয়ে উভয় তীরে বন্যার সৃষ্টি হয়ে ফসল ও সম্পদের ক্ষতিসাধন হচ্ছে। তাই তিস্তা নদী খনন করে পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা হলে এ পানি ব্যবহার করে কৃষির উন্নতি করা সম্ভব। তবে সম্পদ শুধু রক্ষাই পাবে না। বরংচ কৃষি বিপ্লব ঘটবে তিস্তাপাড়ে। তাই দ্রুত পদক্ষেপ নিতে সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজের ডালিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, উজানের পাহাড়ি ঢলে তিস্তার পানি প্রবাহ শনিবার (৪ জুলাই) সকাল ৬টায় বিপৎসীমার ২৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও দুপুরের পর থেকে কমতে শুরু করে। সন্ধ্যা ৬টায় বিপৎসীমার ৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে সকালে সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটেছে। মুক্তি পেতে শুরু করেছে লালমনিরহাটে পানিবন্দি পরিবারগুলো।

** তিস্তার পানি ফের বিপৎসীমার ওপরে

বাংলাদেশ সময়: ২১১৮ ঘণ্টা, জুলাই ০৪, ২০২০
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।