ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

পাটকল আধুনিকায়ন করতেই বন্ধের সিদ্ধান্ত সরকারের

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩১ ঘণ্টা, জুলাই ৩, ২০২০
পাটকল আধুনিকায়ন করতেই বন্ধের সিদ্ধান্ত সরকারের

ঢাকা: বিজেএমসির পরিচালিত রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোর আধুনিকায়ন এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে একে আরও সক্ষম করে গড়ে তুলতে উৎপাদন বন্ধ করে শ্রমিকদের এককালীন পাওনা পরিশোধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

এজন্য বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশনের (বিজেএমসি) ২৫টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলে শ্রমিকদের প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকার পাওনা পরিশোধ করবে সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বৃহস্পতিবার (০২ জুলাই) সকালে গণভবনে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলো নিয়ে অনুষ্ঠিত এক গুরুত্বপূর্ণ সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

জানা গেছে, বর্তমানে দেশে যে পাট ও পাটজাত পণ্য উৎপাদিত হয়, তার শতকরা ৯৫ শতাংশই বেসরকারি পাটকলে উৎপাদিত হয়। সরকারি খাতটি অত্যন্ত স্কুইজড (সংকুচিত) হয়ে গেছে। যা প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছিল না। তাই সরকারি খাতের পাটকলগুলোর সংস্কার ও আধুনিকায়নের লক্ষ্যে শ্রমিকদের সমুদয় পাওনা বুঝিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এগুলোকে আবার প্রতিযোগিতায় কীভাবে আনা যায় এবং কীভাবে শক্তিশালী করা যায়, সে বিবেচনায় এখন পাটকলগুলো বন্ধ করার ঘোষণা করা হয়েছে। এসব পাটকল বন্ধ থাকলে যে পরিমাণ ক্ষতি হয়, চালু থাকলে তার চেয়ে বেশি পরিমাণ ক্ষতি হয়। কাজেই এসব পাটকলের সঙ্গে জড়িত শ্রমিক ভাইদের জীবন-জীবিকার নিশ্চয়তার জন্য সরকার তাদের ২০১৫ সালের জাতীয় মজুরি কাঠামো অনুযায়ী সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী এই নির্দেশনাও দিয়েছেন, যে পাটকলগুলো বন্ধ আছে, সেগুলো কীভাবে চালু করা যায় এবং সেগুলো যাতে বর্তমান এবং আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে পারে। এ সংক্রান্ত একটি কর্মপন্থা প্রস্তুত করে অতি দ্রুত তার কাছে নিয়ে আসার জন্যও সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলো গত ৪৮ বছরের মধ্যে শুধু চার বছর লাভের মুখ দেখেছে এবং ৪৪ বছর ধরে অব্যাহতভাবে মোট ১০ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকা লোকসান দিয়েছে। লোকসান হলে কর্মচারীদের বেতন-ভাতার জন্য সরকারের অর্থের ওপর নির্ভর করতে হত বলে প্রতি মাসেই শ্রমিক-কর্মচারীদের এ সংক্রান্ত সমস্যা চলছিল। পাটকল শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধের লক্ষ্যে আগামী তিনদিনের মধ্যে তাদের তালিকা প্রস্তুত করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

২০১৫ সালের সর্বশেষ মজুরি কাঠামো অনুযায়ী পাটকলগুলোর ২৫ হাজার শ্রমিককে তাদের অবসরকালীন সুবিধাসহ পাওনা পরিশোধ বাবদ সরকারের ৫০০০ কোটি টাকা ব্যয় হবে। পাটখাতের প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ নজর রয়েছে এবং প্রধানমন্ত্রীর দর্শন হচ্ছে পাটকল শ্রমিকদের বাঁচানো। এরই পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী ইতোপূর্বে পাটের জন্মরহস্য উন্মোচনের জন্য গবেষণা খাতে অর্থায়ন করেছিলেন এবং পাটের বহুমুখী ব্যবহারের ওপর বিশেষ নজর দেন। প্রধানমন্ত্রী বন্ধের সিদ্ধান্ত দেওয়ার সময় আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।

পাওনা বুঝিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে যেসব শ্রমিক অনধিক দুই লাখ টাকা প্রাপ্য, তাদের পুরো টাকা এককালীন নগদ পরিশোধ করা হবে। এছাড়া দুই লাখ টাকার বেশি পাওনাদার শ্রমিকরা গড়ে ১৩ দশমিক ৮৬ লাখ টাকা এবং সর্বোচ্চ ৫৪ লাখ টাকা পাবেন। পাওনা টাকার মধ্যে ৫০ শতাংশ এককালীন নগদ এবং অবশিষ্ট ৫০ শতাংশ শ্রমিকদের ভবিষ্যৎ জীবন-জীবিকা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে তিনমাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র আকারে পরিশোধ করা হবে। ১১ শতাংশ সুদে প্রত্যেক শ্রমিক প্রতি তিন মাসে সর্বনিম্ন ১৯ হাজার ৩২০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ৭৪ হাজার ৫২০ টাকা পর্যন্ত পাবেন।

এছাড়া অনেক আগে অবসরে যাওয়া ৮ হাজার ৯৫৬ জন পাটকল শ্রমিকের অবসর ভাতা পরিশোধ করতে ওসরকারের ১০২০ কোটি টাকা খরচ হবে। পাটকল শ্রমিকদের পাওনা টাকা সরাসরি তাদের ব্যাংক হিসাবে পাঠানো হবে এবং কোন পাটকল অথবা অন্য কোন মধ্যস্বত্বভোগী এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকবে না।

অবসরভোগীদের টাকা আগামী সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই নিজ নিজ ব্যাংক একাউন্টে চলে যাবে। এখানে কাউকে চাকরিচ্যুত করা হচ্ছে না এবং পরবর্তীতে এ কারখানাগুলো পুনরায় চালু হলে নিয়োগের ক্ষেত্রে বর্তমান শ্রমিকদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্তের ফলে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকে শ্রমিকদের স্বার্থ বাঁচানোর জন্য তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩০ ঘণ্টা, জুলাই ০৩, ২০২০
টিএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।