ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

স্বাস্থ্যসেবায় চন্দনা রানীর সফলতা লুকিয়ে রাখার নয়

নাসির উদ্দিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩৫ ঘণ্টা, জুলাই ২, ২০২০
স্বাস্থ্যসেবায় চন্দনা রানীর সফলতা লুকিয়ে রাখার নয়

সিলেট: প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের ভয়ে চিকিৎসকরাও তটস্থ! আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে সাধারণ রোগীর কাছেও না যাওয়ার অভিযোগ অহরহ। প্রাইভেট প্রেকটিসেও নেই অনেক চিকিৎসক। ফলে অনেক রোগী হতাশ হয়ে ফিরছেন। সামান্য চিকিৎসার জন্য মৃত্যু পর্যন্তও হচ্ছে অনেকের।

এমন পরিস্থিতিতে প্রান্তিক পর্যায়ে মানুষের ভরসাস্থল হয়ে দাঁড়িয়েছে একটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। গত তিন মাসে এই দুর্যোগের সময়ে ৮৩টি সফল ডেলিভারি হয়েছে কেবল একটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।

কোনো ধরনের অস্ত্রোপচার ছাড়াই স্বাভাবিকভাবে সুস্থ সন্তান জন্ম দিয়েছেন গর্ভবতী মায়েরা। এমন একটি সফলতার গল্প সিলেটের সীমান্ত অঞ্চল কানাইঘাটের ৩নং দিঘীরপাড় পূর্ব ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের। আর এই সাফল্যের পেছনের মানুষটি পরিবার কল্যাণ পরিদর্শক চন্দনা রানী চন্দ।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেনের হাত থেকে ক্রেস্ট নিচ্ছেন চন্দনা রানী চন্দ, ছবি: বাংলানিউজ১৯৯৪ সাল থেকে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সেবা দিয়ে এলেও নিভৃতে থেকেছেন। করোনাকালে গত তিন মাসে ‘ছুরি-কাঁচি’ ছাড়াই ৮৩টি সফল ডেলিভারি হয়েছে তার ‘একার হাতেই’।

জীবনের মোহ তুচ্ছ করে প্রান্তিক জনগোষ্টীর সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন চন্দনা রানী চন্দ। এমন সাফল্য অর্জন করলেও নিভৃতে থেকেছেন। নিজেকে রেখেছেন প্রচারণার আড়ালে। এ কারণে গত ১০ বছর ধরে সেরা পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকার স্থান ধরে রেখেছেন তিনি। তার এই কাজের জন্য জয়ীতা পুরস্কার ছাড়াও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর হাত থেকেও নিয়েছেন শ্রেষ্টত্বের পুরস্কার।
করোনাকালে নিজের রোগীদের সঙ্গে চন্দনা রানী চন্দ, ছবি: বাংলানিউজএ বিষয়ে পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা চন্দনা রানী চন্দ বাংলানিউজকে জানান,  তার গ্রামের বাড়ি সিলেটের ওসমানীনগরের চিন্তামনি গ্রামে। ১৯৯৪ সালের ১০ অক্টোবর তিনি ওই স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যোগদান করেন। চাকরি জীবনের দীর্ঘ সময়টি এখানেই কাটিয়েছেন। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রটিতে ছয় বছর আগে ডেলিভারি শুরু হয়। সেই থেকে এখন পর্যন্ত অন্তত দেড় হাজারের বেশি সফল ডেলিভারি করিয়েছেন তিনি। তবে করোনাকালে ৮৩ নারীর ডেলিভারির বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন তিনি।

কেননা, এই সময়ে নিজেই শ্বাসকষ্ট ডায়বেটিস, উচ্চ রক্তচাপের রোগী হয়েও করোনা আক্রান্তের ভয়কে পাশ কাটিয়ে মা ও শিশু সুরক্ষায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। অবশ্য প্রান্তিক এলাকায় কাজ করতে গিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতা পেয়েছেন তিনি।

ব্যক্তিগত জীবনে দুই সন্তানের জননী চন্দনা রানীর বড় ছেলে ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে ইনফরমেশন অ্যান্ড টেকনোলজি নিয়ে মাস্টার্স করছেন এবং ছোট ছেলে লিডিং ইউনিভার্সিটিতে সিএসসি বিভাগে অধ্যয়নরত। তার স্বামীও একই স্থানে ইউনিয়ন উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত আছেন।

ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে চন্দনা রানী চন্দ ছাড়াও উপ সহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার হিসেবে কর্মরত আছেন আজিজুর রহমান। তিনি জেনারেল প্রেসক্রিপশনের দিকটি দেখেন। আর মা ও শিশু স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি দেখেন চন্দনা রানী। করোনাকালে গত তিন মাসে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এতটি কার্যক্রম হয়নি, যতটা হয়েছে কানাইঘাটের ৩নং পূর্ব দিঘীরপাড় ইউনিয়ন ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে।
চন্দনা রানীর কাজের স্বীকৃতি, ছবি: বাংলানিউজএ বিষয়ে পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ সিলেটের উপ পরিচালক ডা. লুৎফুন্নাহার জেসমিন বাংলানিউজকে বলেন, তার তত্ত্বাবধানে জেলার মধ্যে ৬৪টি ইউনিয়নে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র আছে। এরমধ্যে করোনাকালে অবিশ্বাস্যভাবে সফল কয়েকটি স্বাস্থ্য কেন্দ্রের অন্যতম কানাইঘাটের ৩নং পূর্ব দিঘীরপাড় ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র। এছাড়া মা ও শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় উল্লেখযোগ্য আরও কয়েকটি কেন্দ্রের মধ্যে আছে জৈন্তাপুরের চারিকাটা ইউনিয়নে, গোলাপগঞ্জের বাঘা, ফুলবাড়ি, বুধবারীবাজার, বালাগঞ্জের বোয়ালজুড় ও পূর্ব পৈলেনপুর এবং গোয়াইনঘাটের ডৌবাড়ি। গত দুই মাসে ৬৪টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে ২৬৮ নারীর কোনো ধরনের অস্ত্রোপচার ছাড়াই সুস্থ সন্তান জন্মদান করেন। সফলতার এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে চান তারা।

এ বিষয়ে সিলেটের সাবেক সিভিল সার্জন বর্তমানে ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের উপ পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায় বাংলানিউজকে বলেন, কানাইঘাটের ৩নং দিঘীরপাড় পূর্ব ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের সফলতার বিষয়টি জেনেছি। করোনাকালে চন্দনা রানীর এমন সফলতার গল্প লুকিয়ে রাখার নয়। সবাই জানলে স্বাস্থ্যসেবায় জড়িতরা অনুপ্রাণিত হবেন।

বাংলাদেশ সময়: ২০২৪ ঘণ্টা, জুলাই ০২, ২০২০
এনইউ/টিএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।