বৃহস্পতিবার (২ জুলাই) দুপুর দেড়টার দিকে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সিআইডির সংঘবদ্ধ অপরাধ বিভাগের প্রধান ডিআইজি শেখ মোহাম্মদ রেজাউল হায়দার।
তিনি বলেন, ‘গ্রেফতার তিন আসামির মধ্যে একজন কেনিয়ার ও দু’জন ক্যামেরুনের নাগরিক।
গ্রেফতাররা হলেন- সোলেমান ওরফে নিগুয়েগাং তেগোমো বারটিন (৪৭), নিগুয়েনাং তোবোসেরগে ক্রিস্টিয়ান (৩৮) এবং একোঙ্গো এরনাস্ট ইব্রামহিম (৪২)।
সংবাদ সম্মেলনে ডিআইজি শেখ মোহাম্মদ রেজাউল হায়দার বলেন, ‘গ্রেফতার আসামিরা অনেক আক্রমণাত্মক। অভিযান চলাকালে তারা পুলিশ সদস্যদের ওপর বিভিন্ন প্রকার হামলা চালানোর চেষ্টা করেছেন। আমরা জানতে পেরেছি তারা ২০১৮ সাল থেকে বাংলাদেশে অবস্থান করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন। প্রতারক চক্রের সঙ্গে কোনো বাংলাদেশি নাগরিক জড়িত আছে কিনা খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে। ’
তিনি বলেন, ‘গ্রেফতার আসামিদের কারো কাছেই পাসপোর্টের কোনো কপি পাওয়া যায়নি। আমরা ধারণা করছি, তাদের ভিসার মেয়াদ নেই। অবৈধভাবে তারা বাংলাদেশে অবস্থান করে আসছিলেন। বিষয়টি নিয়ে আমরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করবো এবং তাদের চক্রে আরও কোনো সদস্য আছে কিনা তাদের গ্রেফতারে অভিযান পরিচালনা করা হবে। ’
তাদের প্রতারণার ধরন সম্পর্কে সংবাদ সম্মেলনে শেখ মোহাম্মদ রেজাউল হায়দার বলেন, ‘প্রথমে তারা ফেসবুকে ফেক আইডি এবং নাম ব্যবহার করে বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। সাধারণ মানুষদের সঙ্গে তারা বন্ধুত্ব তৈরি করেন। এ সুযোগে প্রতারক চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন দামি গিফট পাঠান এবং সেটি কাস্টমসে আটকে আছে, ছাড়িয়ে আনতে হবে বলে মোটা অংকের টাকা চান। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশি কেউ কাস্টমসের কর্মকর্তা অথবা পরিচয় দিয়ে প্রতারণা কাজে সহায়তা করেন। ’
তিনি বলেন, ‘প্রতারক চক্রের গ্রেফতার সদস্যরা নারী সেজে ফেক আইডি ব্যবহার করে ভুক্তভোগী মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম ওরফে ফয়সালের সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে তোলেন। চক্রের এক সদস্য নিজেকে আমেরিকান হিসেবে পরিচয় দিয়ে আরিফুলকে কুরিয়ার এজেন্টের মাধ্যমে উপহার পাঠাবে বলে জানান। এরপর আরিফুলকে উপহার সামগ্রী পাঠানোর কথা বলে এ চক্রটি বিভিন্ন সময়ে নগদ ৮ লাখ ৭০ হাজার টাকা এবং ব্যাংকের মাধ্যমে ১৩ লাখ ৯৮ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। সর্বমোট তার কাছ থেকে ২২ লাখ ৬৮ হাজার টাকা প্রতারণা মাধ্যমে নেয় এ চক্রের তিন সদস্য। ’
প্রতারণার সঙ্গে জড়িত এমন কতজন আফ্রিকান নাগরিক বাংলাদেশে আছেন এ বিষয়ে কোনো তথ্য আছে কিনা জানতে চাইলে ডিআইজি শেখ মোহাম্মদ রেজাউল হায়দার বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট করে আমরা এ বিষয়ে কিছু বলতে পারছি না, তবে যারাই এ প্রতারণা করছে তারা সবাই একই গ্রুপের নয়। দু’জন, তিনজন অথবা পাঁচজন করে একেকটি গ্রুপে এ প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ডগুলো হচ্ছে। তাই নিশ্চিত করে কতগুলো গ্রুপ আছে সেটি বলা সম্ভব হচ্ছে না। গ্রেফতার আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ করে আমরা বিস্তারিত জানাতে পারবো। তবে কতজন আফ্রিকান নাগরিক বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন এবং কতজন নাগরিক বাংলাদেশ থেকে দেশে ফিরে গেছেন সেই সংখ্যা যোগ বিয়োগ করে একটি ফিগার পাওয়া যাবে। তবে এর জন্য ইমিগ্রেশন পুলিশের সহায়তা নেওয়া যেতে পারে। ’
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী আরিফুল ইসলাম রাজধানীর বিমানবন্দর থানায় একটি প্রতারণার মামলা দায়ের করেছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১২ ঘণ্টা, জুলাই ০২, ২০২০
এসজেএ/এফএম