ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বসতভিটা যমুনার পেটে, বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধেই আশ্রয়

কাওছার উল্লাহ আরিফ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১১ ঘণ্টা, জুলাই ১, ২০২০
বসতভিটা যমুনার পেটে, বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধেই আশ্রয়

বগুড়া: বগুড়ায় যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমার ৬৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদীর পানি বাড়তে থাকায় দিশেহারা বানভাসি মানুষ। জেলার তিনটি উপজেলা সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট যমুনা নদী বেষ্টিত। এরমধ্যে সারিয়াকান্দির প্রায় সাতটি, সোনাতলার তিনটি ও ধুনটের একটি ইউনিয়ন পুরোপুরি যমুনায় ঘেরা।

বুধবার (১ জুলাই) সারিয়াকান্দি উপজেলা ঘুরে দেখা যায়, চরাঞ্চলের চালুয়াবাড়ী, কর্নিবাড়ী, কুতুবপুর, চন্দনবাইশা, কাজলা, কামালপুর, রহদহ ও সারিয়াকান্দি সদর ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলগুলো তলিয়ে গেছে।

সারিয়াকান্দি উপজেলার পূর্বপাশে আগ্রাসী যমুনা আর পশ্চিমে বসতভিটা।

মাঝখানে কয়েক ফুট চওড়া বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ। সেই বাঁধ থেকে কয়েক ফুট নিচে অবস্থান করছে উত্তাল যমুনার পানি। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও ভারী বর্ষণে বাঁধের পূর্বদিকে বসবাসকারীদের বসতবাড়ি এখন যমুনার পেটে।

আবুল হোসেন। বয়স আশির কোঠায় পৌঁছেছে। জন্মস্থান বগুড়া সারিয়াকান্দি উপজেলার চালুয়াবাড়ী ইউনিয়নে। জন্মের পর থেকেই আগ্রাসী যমুনার থাবায় বহুবার বসতভিটা হারিয়েছেন তিনি এবং বসতভিটা হারাতে দেখেছেন অসংখ্য মানুষকে।

...তিনি দীর্ঘ জীবনে অনেকবার নদী ভাঙনের শিকার হয়েছেন। এক সময়ের টগবগে যুবক আবুল হোসেন বর্তমানে বয়োবৃদ্ধ। বহুবার যমুনা তার বসতভিটা কেড়ে নিয়েছে। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে আশ্রয় হারাতে হারাতে আবুল হোসেন শেষমেষ আশ্রয় নিয়েছেন বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধে। সেখানে গড়েন ভ্রাম্যমাণ বসতবাড়ি।

বানভাসিদের অনেকের মতো বাঁধে ঝুপড়ি ঘর বানিয়ে সেখানেই ঠাঁই নিতে বাধ্য হয়েছেন এই বৃদ্ধ। ঘরের উপরে কোনোরকম ছাউনি থাকলেও চারপাশটা ফাঁকা। ভেতরটায় রয়েছে কয়েকটি ছাগল। একপাশে রয়েছে একটি ছোট কাঠের চৌকি। আর রয়েছে রান্নার চুলা।

...আবুল হোসেন জানান, মোট ৬ সদস্যের সংসার ছিল তার। স্ত্রী মারা গেছেন। বর্তমানে তিন ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। সবাই বিবাহিত। তাদের কেউ কর্মের তাগিদে রাজধানী ঢাকায়।

তিনি জানান, নদীর রূপ দেখে অতীতের বহু কথা মনে পড়ে যায়। নদীর বাঁধে বসে বসে সেসব অতীতের কথা ভাবেন তিনি। ১৯৮৮ সালের ভয়াবহ বন্যা দেখেছেন তিনি। নিজ চোখে অনেককেই ভিটামাটি ছাড়তেও দেখেছেন। কিন্তু এবারের নদীর পানি বৃদ্ধি আতঙ্ক বাড়িয়ে দিয়েছে তার মনে। দিনরাত পানি বেড়েই চলেছে। বাড়ার মাত্রাও অনেক বেশি। এভাবে পানি বাড়তে থাকলে পরে কী হবে সেটিই ভাবনায় ফেলেছে তাকে।

আঞ্জুমান, মমতা, রহিম, পান্না মিয়াসহ একাধিক বানভাসি মানুষ বাংলানিউজকে জানান, যমুনার পেটে হাবুডুবু খাচ্ছে তাদের বসতবাড়ি। জীবন বাঁচাতে তাই বাঁধে এসে আশ্রয় নিয়েছেন তারা। এদিকে যমুনার পানি মাঝে-মধ্যেই প্রচণ্ড জোরে ধাক্কা মারছে সে বাঁধেও।

তারা জানান, অনেকেই বসতভিটা হারিয়ে নতুন করে বাঁধে আশ্রয় নিচ্ছেন। কিছুদিন আগেও বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের তীরবর্তী অনেক বসতবাড়িতে হাঁটু পানি ছিল। কিন্তু আস্তে আস্তে সেসব বসতবাড়ি পানিতে তলিয়েছে। ফলে বাঁধে আশ্রয় নিতে থাকেন তারা। সব মিলে বানভাসিরা এখন আতঙ্কে দিশেহারা তারা।

এদিকে জেলা প্রশাসন বন্যাকবলিত মানুষদের সহায়তায় তৎপর রয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে ফায়ার সার্ভিসকে। নিয়মিত খোঁজ রাখা হচ্ছে বিভিন্ন চরের মানুষের। এখন পর্যন্ত সারিয়াকান্দি উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তারা আস্তে আস্তে আশ্রয় নিতে শুরু করেছে বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩০২ ঘণ্টা, জুলাই ০১, ২০২০
কেইউএ/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।