বুধবার (১ জুলাই) সারিয়াকান্দি উপজেলা ঘুরে দেখা যায়, চরাঞ্চলের চালুয়াবাড়ী, কর্নিবাড়ী, কুতুবপুর, চন্দনবাইশা, কাজলা, কামালপুর, রহদহ ও সারিয়াকান্দি সদর ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলগুলো তলিয়ে গেছে।
সারিয়াকান্দি উপজেলার পূর্বপাশে আগ্রাসী যমুনা আর পশ্চিমে বসতভিটা।
আবুল হোসেন। বয়স আশির কোঠায় পৌঁছেছে। জন্মস্থান বগুড়া সারিয়াকান্দি উপজেলার চালুয়াবাড়ী ইউনিয়নে। জন্মের পর থেকেই আগ্রাসী যমুনার থাবায় বহুবার বসতভিটা হারিয়েছেন তিনি এবং বসতভিটা হারাতে দেখেছেন অসংখ্য মানুষকে।
তিনি দীর্ঘ জীবনে অনেকবার নদী ভাঙনের শিকার হয়েছেন। এক সময়ের টগবগে যুবক আবুল হোসেন বর্তমানে বয়োবৃদ্ধ। বহুবার যমুনা তার বসতভিটা কেড়ে নিয়েছে। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে আশ্রয় হারাতে হারাতে আবুল হোসেন শেষমেষ আশ্রয় নিয়েছেন বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধে। সেখানে গড়েন ভ্রাম্যমাণ বসতবাড়ি।
বানভাসিদের অনেকের মতো বাঁধে ঝুপড়ি ঘর বানিয়ে সেখানেই ঠাঁই নিতে বাধ্য হয়েছেন এই বৃদ্ধ। ঘরের উপরে কোনোরকম ছাউনি থাকলেও চারপাশটা ফাঁকা। ভেতরটায় রয়েছে কয়েকটি ছাগল। একপাশে রয়েছে একটি ছোট কাঠের চৌকি। আর রয়েছে রান্নার চুলা।
আবুল হোসেন জানান, মোট ৬ সদস্যের সংসার ছিল তার। স্ত্রী মারা গেছেন। বর্তমানে তিন ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। সবাই বিবাহিত। তাদের কেউ কর্মের তাগিদে রাজধানী ঢাকায়।
তিনি জানান, নদীর রূপ দেখে অতীতের বহু কথা মনে পড়ে যায়। নদীর বাঁধে বসে বসে সেসব অতীতের কথা ভাবেন তিনি। ১৯৮৮ সালের ভয়াবহ বন্যা দেখেছেন তিনি। নিজ চোখে অনেককেই ভিটামাটি ছাড়তেও দেখেছেন। কিন্তু এবারের নদীর পানি বৃদ্ধি আতঙ্ক বাড়িয়ে দিয়েছে তার মনে। দিনরাত পানি বেড়েই চলেছে। বাড়ার মাত্রাও অনেক বেশি। এভাবে পানি বাড়তে থাকলে পরে কী হবে সেটিই ভাবনায় ফেলেছে তাকে।
আঞ্জুমান, মমতা, রহিম, পান্না মিয়াসহ একাধিক বানভাসি মানুষ বাংলানিউজকে জানান, যমুনার পেটে হাবুডুবু খাচ্ছে তাদের বসতবাড়ি। জীবন বাঁচাতে তাই বাঁধে এসে আশ্রয় নিয়েছেন তারা। এদিকে যমুনার পানি মাঝে-মধ্যেই প্রচণ্ড জোরে ধাক্কা মারছে সে বাঁধেও।
তারা জানান, অনেকেই বসতভিটা হারিয়ে নতুন করে বাঁধে আশ্রয় নিচ্ছেন। কিছুদিন আগেও বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের তীরবর্তী অনেক বসতবাড়িতে হাঁটু পানি ছিল। কিন্তু আস্তে আস্তে সেসব বসতবাড়ি পানিতে তলিয়েছে। ফলে বাঁধে আশ্রয় নিতে থাকেন তারা। সব মিলে বানভাসিরা এখন আতঙ্কে দিশেহারা তারা।
এদিকে জেলা প্রশাসন বন্যাকবলিত মানুষদের সহায়তায় তৎপর রয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে ফায়ার সার্ভিসকে। নিয়মিত খোঁজ রাখা হচ্ছে বিভিন্ন চরের মানুষের। এখন পর্যন্ত সারিয়াকান্দি উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তারা আস্তে আস্তে আশ্রয় নিতে শুরু করেছে বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩০২ ঘণ্টা, জুলাই ০১, ২০২০
কেইউএ/এএ