ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বুড়িগঙ্গায় লঞ্চডুবি: পিতৃস্নেহ বোঝার আগেই পিতাহারা রুবা   

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৫৬ ঘণ্টা, জুলাই ১, ২০২০
বুড়িগঙ্গায় লঞ্চডুবি: পিতৃস্নেহ বোঝার আগেই পিতাহারা রুবা   

মুন্সিগঞ্জ: এগারো মাসের শিশু কন্যা তাইউবা ইসলাম রুবা। বাবা ও মায়ের আদরের একমাত্র সন্তান। বাবা কী তা বুঝে ওঠার বয়স হয়নি তার। এরই মধ্যে বাবাকে হারিয়ে ফেলল সে। 

বাবার স্বপ্ন ছিল মেয়েকে মাদ্রাসাতে পড়াশুনা করাবে। মায়ের স্বপ্ন ছিল বাবার ইচ্ছাকে পূরণ করা।

কিন্তু লঞ্চ ডুবিতে ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে পুরো পরিবারটির আনন্দ হারিয়ে গেল। শিশু রুবাও পরিবারের সবার কান্না দেখে বিচলিত। শুধুই সবার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকছে সে।

বাবা, মা ও স্ত্রীসহ তার স্বজনরাও শোকে স্তব্ধ। এগারো মাসের শিশুকে নিয়ে তার ছেলের বউ পরবর্তী জীবন কীভাবে কাটাবে এ নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় আছেন শরীফের মা।  

মঙ্গলবার (৩০ জুন) সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, মুন্সিগঞ্জের মিরকাদিম পৌরসভার পশ্চিমপাড়ার মো. জাহান শরীফের ছেলে মো. ইসলাম হোসেন শরীফ। হার্ডওয়্যারের ব্যবসায়ী ছিলেন। ব্যবসার কাজে ঢাকা যাওয়ার পথে বুড়িগঙ্গায় লঞ্চ ডুবিতে মারা যান তিনি। সোমবার রাতেই নিজ এলাকাতেই জানাজা শেষে দাফন সম্পন্ন হয়েছে তার। প্রতিবেশীরাও হারিয়েছে তাদের প্রিয় একজনকে। সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষাও তাদের নেই।  

মা আজগরি বেগম বাংলানিউজকে বলেন, আমার কথার কখনোই অবাধ্য হয়নি শরীফ। সবসময় বাবা ও মায়ের খেয়াল রাখতো। বাড়ির সব কাজে সাহায্য সহযোগিতা করতো। নতুন বাড়ি তৈরির কাজেও সে একাই সবকিছু করেছিল। ছাদের বাগানের গাছে প্রতিদিন পানি সেই দিত। ঘটনার দিন সকালে হাসিমুখে বিদায় দিয়েছিলাম। তার স্ত্রীকে বলে গিয়েছিল তার দেওয়া নতুন জামাটি পড়ার জন্য। কিন্তু তা আর হলো না।  

বাবা মো. জাহান শরীফ বাংলানিউজকে জানান, লঞ্চ ডুবে আর কারো বাবা যেনো ছেলেহারা না হয় সরকার যেন সেদিকে লক্ষ্য রাখে।  

স্ত্রী জাকিয়া সুলতানা জানান, রুবাকে খুব বেশি আদর করতো তার বাবা। আমি একটু শাসন করতে চাইলে থামিয়ে দিতো। যখন বাসায় থাকতো তখন বাবার সঙ্গেই সময় পার করতো। বাবার কোলেই বেশি ঘুমাতো। রাতে ঘুম না এলে বাবার সঙ্গেই খেলাধুলা করতো। এগারো মাসের রুবা তো এখনো বুঝতেই পারছে না তার বাবা আর নেই।  

প্রতিবেশীরা বলছেন, এলাকার সবচেয়ে ভদ্র ছেলে ছিল শরীফ। মুন্সিগঞ্জ মিরকাদিম পৌরসভার কাছেই ছিল তার একটি হার্ডওয়্যারের দোকান। সকালে যেতো আর রাতে বাসায় ফিরতো। কাজ ছাড়া অন্য কিছুতে ব্যস্ত থাকতো না। সবসময় হাসিমুখি আর সহজসরল জীবনযাপন করতো সে। আমরাও এলাকার প্রিয় একজনকে হারিয়ে শোকাহত।

বাংলাদেশ সময়: ১১৫৩ ঘণ্টা, জুলাই ০১, ২০২০
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।