ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

লালমনিরহাটে কমছে পানি, ভাঙছে নদী

খোরশেদ আলম সাগর, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১১ ঘণ্টা, জুন ২৯, ২০২০
লালমনিরহাটে কমছে পানি, ভাঙছে নদী

লালমনিরহাট: উজানের পাহাড়ি ঢল ও কয়েকদিনের ভারী বর্ষণে তিস্তার পানি টানা চার দিন বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও বর্তমানে কমে গিয়ে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি কমে যাওয়ায় তিস্তার বাম তীরে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে।

সোমবার (২৯ জুন) বিকেল ৩টায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার ডালিয়া পয়েন্টে পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ৫২ সেন্টিমিটার। যা স্বাভাবিক (৫২ দশমিক ৬০ সেন্টিমিটার) চেয়ে ৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

 

এর আগে বৃহস্পতিবার (২৫ জুন) মধ্যরাত থেকে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ১৫/২০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে তিস্তার বাম তীরের লালমনিরহাটের ৫টি উপজেলার প্রায় ১০ হাজার পরিবার টানা পানিবন্দি হয়ে পড়েছিল।

স্থানীয়রা জানান, উজানের পাহাড়ি ঢল ও কয়েকদিনের ভারী বৃষ্টিতে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়েছে। গত সপ্তাহের শেষ দিকে টানা ২৪ ঘণ্টা বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয় তিস্তার পানি। ফলে নিম্নাঞ্চলে শুরু হয় বন্যা। যা ক্রমে কমে গিয়ে বন্যার উন্নতি ঘটে। এর রেশ কাটতে না কাটতে বৃহস্পতিবার (২৫ জুন) ফের জানের ঢল ও ভারী বর্ষণের কারণে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। তিস্তা ব্যারেজ রক্ষার্থে সব জলকপাট খুলে দিয়ে পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে ব্যারেজ কর্তৃপক্ষ। যা টানা চার দিন ধরে অব্যাহত থাকে। ফলে জেলার ৫টি উপজেলার ১৫ ইউনিয়নের তিস্তা নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের প্রায় ১০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ে।

সোমবার (২৯ জুন) সকাল থেকে কমতে শুরু করে তিস্তার পানি প্রবাহ। ফলে বন্যা পরিস্থতি উন্নতি ঘটে। পানি নামতে শুরু করলে পানিবন্দি থেকে মুক্তি পায় বন্যাকবলিত এলাকার মানুষ। পানি কমে দুর্ভোগ বেড়েছে বন্যাকবলিতদের। টানা চার দিনের বন্যায় ডুবে থাকায় ঘরবাড়ি নষ্ট হয়েছে। নষ্ট হয়েছে আমন বীজতলা, বাদাম ও ভুট্টাসহ নানান জাতের সবজি। বন্যায় নষ্ট হওয়া ঘরবাড়ি মেরামত করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা।  

এদিকে তিস্তার পানি কমে যাওয়ায় তীব্র নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। সদর উপজেলার চর গোকুন্ডা, আদিতমারীর কুটিরপাড়, চন্ডিমারী, দক্ষিণ বালাপাড়া, কালীগঞ্জের শৈলমারী চর, হাতীবান্ধা উপজেলার সানিয়াজান, সিন্দুর্না, ডাউয়াবাড়ি ও গড্ডিমারীতে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত দুই দিনে জেলার শতাধিক বসতবাড়ি তিস্তার গর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙনের মুখে পড়েছে কয়েকশ ঘরবাড়ি, স্থাপনা ও ফসলি জমি। ভাঙন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটছে তিস্তাপাড়ের মানুষের।

পানিবন্দি ও নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর মধ্যে ত্রাণ বিতরণ শুরু করেছে জেলা প্রশাসন। পানিবন্দি প্রতি পরিবারকে ১০ কেজি করে চাল, আলু এবং নদী ভাঙনের ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের জন্য জনপ্রতি ২০ কেজি চাল ও ৭ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়।  

হাতীবান্ধা উপজেলার সানিয়াজানের মজিবর, জহের আলী ও আসমত বাংলানিউজকে বলেন, তিস্তার পানি প্রবাহ কমে যাওয়ায় তীব্র ভাঙন  দেখা দিয়েছে। রোববার রাতে তাদের বসতভিটা তিস্তা গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। স্থানীয়দের সহায়তায় ঘরের টিন খুলে নিয়ে রাস্তায় রেখেছেন। নতুন করে বাড়ির করার মত জায়গা না থাকায় রাস্তায় আশ্রয় হয়েছে তাদের। তিস্তার তীরে বন্যা ও ভাঙনের হাত থেকে বাঁচতে তিস্তা খনন করে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করতে সরকারের ঊর্ধ্বমহলের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা।

লালমনিরহাট জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আলী হায়দার বাংলানিউজকে বলেন, পানিবন্দি ৮ হাজার পরিবারের জন্য ৬৮.৬৬ মেট্রিকটন জিআর চাল এবং ৬ লাখ ২৬ হাজার ২শ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যা ইতোমধ্যে বিতরণ শুরু করা হয়েছে। নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত ৪১ পরিবারকে জনপ্রতি ২০ কেজি চাল ও ঘর মেরামত বাবদ নগদ ৭ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে।  

দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজের ডালিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ভারী বর্ষণ ও উজানের পাহাড়ি ঢলে তিস্তার পানি প্রবাহ বৃহস্পতিবার (২৫ জুন) রাত থেকে বাড়তে থাকে। শুক্রবার (২৬ জুন) সকাল ৬টায় বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হলে লালমনিরহাটে বন্যা দেখা দেয়। টানা চার দিন পরে সোমবার (২৯ জুন) সকাল থেকে পানি প্রবাহ কমতে শুরু করে বিকেল ৩টায় বিপৎসীমার ৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে জেলায় বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি ঘটেছে।  

বাংলাদেশ সময়:  ১৭০৮ ঘণ্টা, জুন ২৯, ২০২০
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।