ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

‘২ সাংবাদিকের নামে মামলা মিথ্যা-ভিত্তিহীন, প্রত্যাহার চাই’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৭ ঘণ্টা, জুন ২৭, ২০২০
‘২ সাংবাদিকের নামে মামলা মিথ্যা-ভিত্তিহীন, প্রত্যাহার চাই’

হবিগঞ্জ: হবিগঞ্জে দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলার প্রতিবাদে আন্দোলন শুরু হয়েছে। এরইমধ্যে বানিয়াচং উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলমের দায়ের করা মামলাটি মিথ্যা, ভিত্তিহীন এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মন্তব্য করে অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন সাংবাদিকরা। তা না হলে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলারও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।

শনিবার (২৭ জুন) দুপুর ১২টায় টিভি জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন হবিগঞ্জের ব্যানারে জেলা প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এতে জেলা প্রেসক্লাব, সাংবাদিক ফোরামসহ বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন অংশ নেয়।

উপস্থিত ছিলেন প্রিন্ট, ইলেক্ট্রনিক ও অনলাইন মিডিয়ার দুই শতাধিক সাংবাদিক। এতে বক্তারা ওই হুঁশিয়ারি দেন।

বক্তারা বলেন, সুনির্দিষ্ট তথ্য ও সংবাদ নীতিমালা মেনে মৎস্য কর্মকর্তা আলমের অনিয়ম-দুর্নীতি সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে বিভিন্ন গণমাধ্যমে। অথচ হবিগঞ্জের দুইজন সংবাদিককে জড়িয়ে হয়রানির উদ্দেশে বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করেছেন ওই সরকারি কর্মকর্তা। এ মামলা মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। দ্রুত প্রত্যাহার না হলে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। মৎস্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও জানিয়েছেন সাংবাদিকরা।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলম এক কর্মস্থলে টানা দীর্ঘদিন চাকরির সুবাধে বিভিন্ন দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে গেছেন, এমন অভিযোগ এনে এবং প্রতিকার চেয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন ও মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে আবেদন করে স্থানীয় লোকজন। এ নিয়ে বিভিন্ন স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হয়। পরে হবিগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে কয়েকজন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার আবেদন করেন আলম। কিন্তু এখতিয়ার বহির্ভূত হওয়ায় মামলাটি খারিজ করে দেন আদালত। পরবর্তীকালে তিনি ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন। এতে আসামি করা হয় মাছরাঙা টেলিভিশনের হবিগঞ্জ প্রতিনিধি চৌধুরী মো. মাসুদ আলী ফরহাদ ও বাংলানিউজের ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট বদরুল আলমসহ আরও কয়েকজনকে।

মানববন্ধনে জেলা প্রেসক্লাব সভাপতি মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, সাংবাদিকদের সবসময় ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। বাধা-বিপত্তি এলে সবাই মিলে মোকাবিলা করতে হবে। একইসঙ্গে এই মামলার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে প্রত্যাহার না হলে আরও বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন সাংবাদিক ইসমাইল হোসেন।

প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ শাবান মিয়া বলেন, একজন সরকারি কর্মকর্তা হয়ে সৎ দুইজন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে যে মামলা দায়ের করেছেন, তা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। শিগগির মামলা প্রত্যাহার না করলে পরবর্তীকালে এর দায়ভার নিতে হবে ওই ‘দুর্নীতিবাজ’ মৎস্য কর্মকর্তাকে।

প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট রুহুল হাসান শরীফ বলেন, বস্তুনিষ্ট সংবাদ প্রচারের পর আইনের অপব্যবহার করছেন মৎস্য কর্মকর্তা। বিষয়টি খতিয়ে দেখে ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

টিভি জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি রাসেল চৌধুরী বলেন, সত্য সংবাদ প্রকাশের পরও মৎস্য কর্মকর্তা বিতর্কিত আইনে মামলা দায়ের করেছেন। অবিলম্বে এই মামলা তুলে না নিলে আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।
মানববন্ধনে উপস্থিত একাংশ, ছবি: বাংলানিউজসাংবাদিক ফোরামের সাবেক সভাপতি একাত্তর টিভির জেলা প্রতিনিধি শাকিল চৌধুরী বলেন, মাছরাঙার ফরহাদ চৌধুরী ও বাংলানিউজের বদরুলের কোনো সংবাদ নিয়ে কখনও বিতর্ক হয়নি। পেশাদার ওই দুই সাংবাদিকের নিউজে উঠে এসেছে দুর্নীতির সত্য তথ্য। বিতর্কিত আইনে দায়ের করা মামলার বাদী মৎস্য কর্মকর্তা আলমের দ্রুত অপসারণ দাবি করছি।

মানববন্ধনে পরিকল্পিত ওই মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কালের কণ্ঠের জেলা প্রতিনিধি শাহ ফখরুজ্জামানসহ আরও অনেকে।

টিভি জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন হবিগঞ্জের সভাপতি রাসেল চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক এসএম সুরুজ আলীর পরিচালনায় মানববন্ধনে আরও বক্তব্য দেন, প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি শোয়েব চৌধুরী, মোহাম্মদ নাহিজ, সাধারণ সম্পাদক সায়েদুজ্জামান জাহির, সাবেক সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী মোহাম্মদ ফরিয়াদ, নির্মল ভট্টাচার্য্য রিংকু, সাংবাদিক ফোরাম সভাপতি মো. এমদাদুল ইসলাম সোহেল প্রমুখ।

এছাড়া মানববন্ধনে আরও উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি) জেলা প্রতিনিধি আলমগীর খান, সময় টেলিভিশনের হবিগঞ্জ প্রতিনিধি রাশেদ আহমদ খান, যমুনা টেলিভিশনের জেলা প্রতিনিধি প্রদীপ দাশ সাগর, দৈনিক যায়যায় দিনের প্রতিনিধি নূরুল হক কবির, নিউজটোয়েন্টিফোর টেলিভিশনের প্রতিনিধি শ্রীকান্ত গোপ, এসএ টেলিভিশনের প্রতিনিধি সেলিম চৌধুরী, মোহনা টেলিভিশনের প্রতিনিধ ছানু মিয়া, মাই টিভির প্রতিনিধি মোশাহিদ আলম, রাইজিংবিডির প্রতিনিধি মামুন চৌধুরীসহ বিভিন্ন প্রিন্ট, ইলেক্ট্রনিক ও অনলাইন মিডিয়ার দুই শতাধিক সাংবাদিক। এছাড়া কয়েকটি সামাজিক সংগঠনও মানববন্ধনে অংশ নেয়।

গত ১৫ মার্চ ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলাটি দায়ের করেন উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলম। মামলাটি তদন্তের জন্য অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) পাঠিয়েছেন আদালত।

*** ডিজিটাল আইনে হবিগঞ্জের ২ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা
*** দুর্নীতির বলয়ে হবিগঞ্জের মৎস্য কর্মকর্তা আলম

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৫ ঘণ্টা, জুন ২৭, ২০২০
টিএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।