ঢাকা, শনিবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

যানশূন্যতায় যানজটের মহাসড়কগুলো

সালাম ফারুক ও বিপ্লব কুমার পাল | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১০, ২০১০
যানশূন্যতায় যানজটের মহাসড়কগুলো

ঢাকা: প্রতিবছর ঈদের দিন ভোরে যে ধরনের শূন্যতা বিরাজ করে এবার তা হয়ে দেখা গেল আগের দিনই। রাজধানী থেকে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা, চট্টগ্রাম ও বরিশাল যাওয়ার মহাসড়কগুলো শুক্রবার ভোরের দিকেই প্রায় ফাঁকা হয়ে যায়।



বিগত বছরগুলোতে ঈদের আগের দিন যে ভয়াবহ যানজটে পড়তে হয়েছিল ঘরমুখো মানুষকে এবার তার ছিটেফোটাও নেই। মানিকগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, সাভার, নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদী থেকে বাংলানিউজের স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ও জেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো সংবাদে এমন চিত্রই ফুটে ওঠে।

মানিকগঞ্জ থেকে আশরাফুল আলম লিটন জানান, ভোর হতে না হতেই আরিচা ফেরিঘাটের ১১টি ফেরির মধ্যে অন্তত পাঁচটি বন্ধ করে দিতে হয়। বাকি ছয়টিও অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে ডেকে ডেকে যাত্রী উঠাচ্ছে। অথচ বৃহস্পতিবার দুপুর থেকেই আরিচা ঘাটে ব্যাপক চাপ ছিল। ঘাট থেকে পেছন দিকে প্রায় ১০ থেকে ১২ কিলোমিটার পর্যন্ত অপেক্ষমাণ যানবাহনের সারি ছিল।

সাভার থেকে আমাদের স্টাফ করেসপন্ডেন্ট জাহিদুর রহমান জানান, ঢাকা-আরিচা, নবীনগর-কালিয়াকৈর মহাসড়কে কোথাও নেই যান বাহনের ভিড়। ভোগান্তি নামে পরিচিত এ দুটি মহাসড়কের কোথাও তেমন কোনো গাড়ি না থাকায় অলস সময় পার করছেন পুলিশ সদস্যরা।

অথচ ঈদের আগের পরিস্থিতি সামাল দিতে সাভার ও আশুলিয়ায় পুলিশ, ট্রাফিক-পুলিশ, আমর্ড পুলিশ, আনসারসহ কমিউনিটি পুলিশের প্রায় চার’শ জনবল নিয়োগ করেছিল জেলা পুলিশ প্রশাসন।
 
ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোজাম্মেল হক বাংলানিউজকে বলেন, ‘সবাই গ্রামের বাড়িতে চলে যাওয়ায় ফাঁকা হয়ে গেছে রাস্তাঘাট। এ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে ধীরে ধীরে পুলিশ সদস্যদের প্রত্যাহার করা হবে। ’

গাবতলী থেকে এক টানেই সাভার পার হয়েছেন বলে জানালেন পাটুরিয়াগামী একটি বাসের চালক আব্দুল হালিম।

আশুলিয়ার বাইপাইল পুলিশ বক্সে কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট শরিফুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, মাত্র এক দিনেরই সম্পূর্ণ ফাঁকা হয়ে গেছে দীর্ঘ এ সড়ক।

ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার ইকবাল বাহার বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে জানান, আসলে সবাই ঈদের আগেই নাড়ির টানে গ্রামে ছুটে যাওয়ায় রাস্তাঘাট ফাঁকা হয়ে গেছে।

টাঙ্গাইল থেকে আমাদের প্রতিনিধি তপু আহম্মেদ জানান, ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়ক এখন পুরোপুরি ফাঁকা।

এবারের ঈদে ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গের ১৬টি জেলা এবং দণি ও পশ্চিমাঞ্চলের আরো ৫টিসহ মোট ২১টি জেলার যানবাহন এই মহাসড়ক দিয়ে চলাচল করলেও যানজট তো দূরের কথা, শুক্রবার মধ্যরাত থেকেই যানবাহনের সংখ্যা অনেক কম।

টাঙ্গাইল থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু (পূর্ব) পর্যন্ত হাইওয়ের ইনচার্জ সার্জেন্ট সালাউদ্দিন জানান, লাধিক যানবাহন এই মহাসড়কে চলাচল করলেও রাস্তা যানজটমুক্ত।

টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাবিবুল্লাহ সরকার বলেন, ‘রাস্তা তো একদম ফাঁকা। এবার কষ্টটাও তাই কম হচ্ছে। তবে আমরা সবসময়ই তৎপর রয়েছি। ’

বাংলানিউজের সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট আনোয়ারুল করিম রাজু বৃহস্পতিবার রংপুর যাওয়ার পথে ১১টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত টাঙ্গাইলেই যানজটে আটকে ছিলেন বলে জানান। এরপর সিরাজগঞ্জ, বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে রাত সোয়া নয়টা তার গাড়িটির অবস্থান ছিল বগুড়ায়।

তিনি বলেন, ‘সাধারণত ঈদের আগের দিন এমন যানজটে পড়তে হতো আগে। অথচ, আজ (শুক্রবার) শুনলাম কোথাও কোনো যানজট নেই। ’

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি সুলতানা ইয়াসমিন মিলির ভাষায়, ‘রাত ১২টার পর থেকেই পুরো মহাসড়কে ছিল শুনশান নিরবতা। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী বা খুব উচ্চপর্যায়ের লোকজনের জন্য যেভাবে রাস্তাঘাট ফাঁকা রাখা হয় এখন যেন তেমনই মনে হচ্ছে। ’

এদিকে, ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পরিস্থিতিও স্বাভাবিক রয়েছে বলে নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা ও ফেনী এবং নরসিংদী থেকে আমাদের প্রতিনিধিরা জানান। ঈদে ঘরমুখো মানুষের চাপে এ দু’টি মহাসড়কে কোনো যানজটই লাগেনি। বরং শুক্রবার অনেকটা ফাঁকাই ছিল। বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে কাঁচপুর ব্রিজের দু’পাশে কিছুটা যানজট থাকলেও বিকেলেই স্বাভাবিক হয়ে আসে।

ব্র্যাক ব্যাংকের কর্মকর্তা হারুন উদ্দিন মামুন বাংলানিউজকে বলেন, বিকেল পাঁচটায় সায়েদাবাদ থেকে রওয়ানা দিয়ে সাতটা বাজার প্রায় দশ মিনিট আগেই কুমিল্লা পৌঁছে যান।

এর আগে বুধবার নোয়াখালী গিয়েছিলেন আমাদের সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট জসিম উদ্দিন জানান, সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ড থেকে সোয়া সাতটায় রওয়ানা দিয়ে ১২টা বাজার আগেই নোয়াখালী পৌঁছান। কোথাও কোনো যানজটে পড়তে হয়নি।

ঢাকা থেকে বৃহস্পতিবার সিলেট যাওয়া সাখাওয়াতুল আম্বিয়া টিটু বাংলানিউজকে বলেন, ‘সাধারণ সময়ে ঢাকা থেকে সিলেট যেতে সাড়ে তিনঘণ্টা থেকে চারঘণ্টা লাগে। গতকালও (বৃহস্পতিবার) একই সময় লেগেছে। ’

সাধারণত যানজট মানেই এক ধরনের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর (ফেরিওলা) কপাল খুলে যাওয়া। পানি, ডিম, ফলমূল, চানাচুরসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় ও মুখরোচক খাবার ফেরি করা। যানজটে আটকাপড়া যাত্রীরাও এতে উপকৃত হয়ে থাকেন। সে সুযোগে ভালো ব্যবসা করে নেন ফেরিওলারা। তবে শুক্রবার ভোরটাই তাদের হতাশ করেছে। প্রতি বছরের মতো ব্যবসা এবার হয়নি তাদের।

বাংলানিউজের প্রতিনিধিরা জানান, আরিচা ঘাট, মাওয়া ঘাট, সাভার, গাজীপুরের টঙ্গি, টাঙ্গাইল, নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর ও ভুলতা, কুমিল্লার গৌরিপুর, নরসিংদীর প্রবেশমুখ ইত্যাদি যানজটপ্রবণ এলাকায় যানজট না থাকায় মৌসুমী ফেরিওলাদের আফসোস করতেও দেখা যায়। তাদের শঙ্কা বিকালেও যদি সড়ক এমন ফাঁকা থাকে, তবে তো ব্যবসাই হবে না এবার।

বাংলাদেশ সময় ১৪.৪২ ঘণ্টা, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ