ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

হট স্পট দক্ষিণ এশিয়ায় করোনা বিস্ফোরণের আশঙ্কা

শামীম খান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩০ ঘণ্টা, জুন ১৯, ২০২০
হট স্পট দক্ষিণ এশিয়ায় করোনা বিস্ফোরণের আশঙ্কা

ঢাকা: বাংলাদেশ-ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়া দিন দিন করোনা সংক্রমণের হট স্পট হয়ে উঠছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারলে এ অঞ্চলে করোনার ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটতে পারে বলে গভীর আশঙ্কা জানিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। 

সম্প্রতি বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। বাংলাদেশেই সরকারি হিসেবে গত ২৪ ঘণ্টায় এ ভাইরাসে নতুন করে ৪৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।

শনাক্ত হয়েছেন ৩ হাজার ২৪৩ জন। এর আগের ২৪ ঘন্টায় মৃত্যু হয় আরও ৫৩ জনের। রেকর্ড ৪ হাজার ৮ জন শনাক্ত হন। এ পর্যন্ত সরকারি হিসেবেই সারা দেশে মৃতের সংখ্যা ১ হাজার ৩৮৮ জন। শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১ লাখ ৫ হাজার ৫৩৫ জন।

অন্যদিকে শুক্রবারের (১৯ জুন) তথ্য অনুসারে পার্শ্ববর্তী ভারতে শেষ ২৪ ঘণ্টায় করোনা শনাক্ত হয়েছে ১৪ হাজার ৫২ জনের। যা দেশটিতে করোনা দেখা দেওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত একদিনে সর্বোচ্চ। এদিন সরকারি হিসেবে ভারতে মৃত্যু হয়েছে ৩৪৩ জনের। এখন পর্যন্ত সেখানে মোট শনাক্ত ৩ লাখ ৮০ হাজার ৫৩২ জন। মোট মৃত্যু গিয়ে দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ৬০২ জনে।  

এছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার আরেক দেশ পাকিস্তানও করোনার হট স্পট হয়ে উঠছে। সেখানে সরকারি হিসেবে এখন পর্যন্ত মারা গেছে ৩ হাজার ২২৯ জন। শনাক্ত হয়েছে ১ লাখ ৬৫ হাজার ৬২ জন।

বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার এই পরিস্থিতি প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য বিশেজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশ ও ভারত বিশাল জনসংখ্যার দেশ। এ অঞ্চলে জনবসতিও অনেক বেশি ঘনত্বপূর্ণ। এ দুই দেশে একই সঙ্গে সংক্রমণ শুরু হয়। বর্তমানে তা কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের পর্যায়ে। পাকিস্তানেও সমান তালে আক্রান্ত বাড়ছে। তাদের মৃত্যু হারও বেশি দেখা যাচ্ছে। এসার্বিক বাস্তবতায় এ অঞ্চলের পরিস্থিতি যদি নিয়ন্ত্রণে আনা না যায়, তাহলে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরির আশঙ্কা রয়েছে। এটা আরও বিস্তার লাভ করে বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে।  

বর্তমান পরিস্থিতি প্রসঙ্গে বাংলাদেশের বিশিষ্ট মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের প্রাক্তন চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক প্রফেসর এবিএম আব্দুল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, অনেকে বলেছিল শীতে করোনা বেশী হয়, গরমে কমতে পারে। আবার বাতাসের আর্দ্রতা বেশি হলে কমতে পারে। অনেকেই অনেক কথা বলেছেন। এসব নিয়ে এখনও রিসার্চ চলছে। কিন্তু এ ভাইরাসের ধরন সম্পর্কে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত এখনও নেওয়া সম্ভব হয়নি। আবহাওয়ার ব্যাপারটিই যাই হোক, ঘনবসতিপূর্ণ দেশ ও এলাকায় এটি বেশি সংক্রমিত হচ্ছে। বাংলাদেশ, ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়া ঘনবসতিপূর্ণ ও জনসংখ্যা বেশি। আমাদের দেশে মানুষ গাদাগাদি করে থাকে। বাসা-বাড়ি, মেস, বস্তিতে মানুষের দূরত্ব থাকে না। এসব কারণে এ অঞ্চলে এখন সংক্রমণ বেশি। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের মধ্যে না রাখা গেলে আরও ব্যাপক বিস্তার ঘটতে পারে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালের চেয়ারম্যান ডা. এমএইচ চৌধুরী লেলিন বাংলানিউজকে বলেন, বাংলাদেশ, ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ায় একসঙ্গে করোনার সংক্রমণ শুরু হয়েছে এবং একই রকম করে বাড়ছে। এখন এই এলাকা করোনার হট স্পট হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে বাংলাদেশ ও ভারত। এখানে করোনার সংক্রমণ ও ভাইরোলজিক্যাল মিল আছে। সব মিলিয়ে এ অঞ্চলের পরিস্থিতি উদ্বেগজনক অবস্থায়।

আইইডিসিআর-এর প্রাক্তন প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও বর্তমান উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ভারত ও বাংলাদেশে জনসংখ্যার ঘনত্ব, সমাজ কাঠামো, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, মানুষের আচরণে মিল আছে। দক্ষিণ এশিয়ার শ্রীলংকা ও দুই একটি দেশ ছাড়া অন্যান্য দেশগুলোর অবস্থাও কাছাকাছি। এ কারণে এ অঞ্চলে সংক্রমণের গতি সমান তালে চলছে। ভারত ও বাংলাদেশে এখন কমিউনিটি ট্রান্সমিশন চলছে। যদিও ভারত এটা বলতে চাচ্ছে না। পাকিস্তানে মৃত্যুর হার বেশি। সব মিলিয়ে আমাদের এলাকায় এখন যে পরিস্থিতি এটা নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারলে একটা বড় বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। সেটা দেশ বা দেশের কোনো শহর বা অঞ্চল ধরে হতে পারে। যেটা আমরা নিউইয়র্কে দেখেছি।

বাংলাদেশ সময়: ২০২১ ঘণ্টা, জুন ১৯, ২০২০
এসকে/এইচজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।