ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ছাদটি যেন এক টুকরো ‘গ্রাম’

সোলায়মান হাজারী ডালিম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৩০ ঘণ্টা, জুন ১৯, ২০২০
ছাদটি যেন এক টুকরো ‘গ্রাম’

ঢাকা: গ্রামের কথা মনে পড়লেই স্মৃতির ক্যানভাসে ভেসে উঠে সবুজ-শ্যামল, শান্ত, ছায়াঘেরা, মনোরম পরিবেশ। খাল, বিল, আর পুকুরে পদ্ম ফুল। গাছে গাছে পাখিদের কোলাহল। 

বন্দে আলী মিয়া কবিতায় যেমনটা বলছিলেন ‘আমাদের ছোট গ্রাম মায়ের সমান, আলো দিয়ে, বায়ু দিয়ে বাঁচাইছে প্রাণ।

ফুল-ফলসহ বিভিন্ন গাছপালায় নিবিড় ছায়াঘেরা একেকটি গ্রাম।

শহুরে জীবনে এমন চিত্র দেখা দুষ্কর।  

সেই চিত্রটিই বাড়ির ছাদে ফুটিয়ে তুলেছেন রাজধানীর মিরপুর ১৩ নম্বর কাফরুল থানার বাসিন্দা মিরাজ মিজু ও কাজল দম্পতি।  

মিরাজ মিজু পেশায় সাংবাদিক, কাজল ব্যাংকার। আপাদমস্তক ব্যস্ত এ দুই মানুষ তাদের বাসার ছাদে গড়ে তুলেছেন এক টুকরো গ্রাম।

কী নেই তাদের বাড়ির ছাদে। ফুল-ফলের নানা প্রজাতির গাছ, বিভিন্ন রকমের পাখি এবং ছাদ পুকুরে নানা রংয়ের মাছ। বাড়ির ছাদটি যেন গ্রামীণ ক্যানভাস। আর সে কারণেই আত্মীয় স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী ও সহকর্মীরা তাদের ছাদে আসেন ছবি তুলতে এবং সময় কাটাতে।  

গৃহকর্তী কাজল জানালেন, তাদের বাড়ির আসলে ওভাবে কোনো নাম নেই। তবে তার দেওয়া একটি নামটা হলো ‘গ্রিন স্টেশন’। বাড়িটা মূলত টিনশেড। একটা অংশে দোতলা। ওই অংশেই তাদের বসবাস। বাগানের সম্পূর্ণ রূপ তৈরি হতে মোটামুটি দুই বছরের মতো সময় লেগেছে। আর ছাদপুকুর হতে লেগেছে ছয় মাসের মতো।

ফুল-ফল গাছের সমাহার

ফুটে আছে নানা প্রজাতির ফুল।

ছাদটা দুইটা অংশ নিয়ে। একটা নিচে আরেকটা ওপরে। নিচের ছাদে আছে গাছ আর পাখি। এই অংশে এলেই যে কারোর মন জুড়িয়ে যাবে। সবুজ শ্যামল আবহ যেকোনো মানুষের মনকে আকৃষ্ট করবে। গ্রামের কথা মনে পড়লে এখানে এলে গ্রামের আবহ পুরোটাই মিলবে।  

এখানে রয়েছে ডালিম, করমচা, কামরাঙা, আমড়া, জাহটিকাবা (ব্রাজিলের একটা ফল), লেবু, কমলা, জাম্বুরা, রামভুটান, তুলসী, পুদিনা, পেয়ারা, সাজনা, নয়নতারা, বাগানবিলাশ, বেলি, হাজারি গোলাপ, ক্যাকটাস, হাসনাহেনা, ট্যাঙ্গ ফল, কাঠগোলাপ, ইউফোরবিয়া, ম্যান্টেভিলা, আলমান্ডাসহ নানা প্রজাতির ফুল-ফলের গাছ।

কাজল বলেন, মিজুর গাছ-পাখি ও মাছ এগুলোর প্রতি অনেক দুর্বলতা। ও চায় ওর চারপাশটা থাকবে সবুজ, যতটুকু সম্ভব গ্রামের ফ্লেভার থাকবে। তাই দিনরাত পরিশ্রম করে এগুলো করেছে।

ছাদ পুকুর

ছাদ পুকরে মাছের সমারোহ।

ছাদ পুকুরে এ ধারণাটা বলতে গেলে অভিনব। এখনো ঠিক এভাবে প্রচলন হয়ে উঠেনি। যেভাব ছোট্ট ছোট্ট পুকুরগুলো তৈরি করা হয়েছে দেখলে মনে হবে যেন গ্রামের পুকুরই। পুকুরে রয়েছে কচুরিপানাসহ অন্যান্য জলজ উদ্ভিদও। শখের এ উদ্যোগটা এখন আয়ও দিচ্ছে। ছোট্ট পুকুরগুলোতে চাষ হচ্ছে অ্যাকুরিয়ামের নানা জাতের দামী মাছ।  

কাজল জানালেন, বাড়তি পাওনা হিসেবে এখন ছাদপুকুরের মাছ বাইরে বিক্রি হচ্ছে। স্বামী মিজুর সময়টা সারাদিন ভালোই কেটে যায় এগুলো নিয়ে। সারাক্ষণ কোনো না কোনো কাজে ব্যস্ত থাকেই।
কাজল আরও জানালেন, পুকুরের যে অংশটা সিমেন্ট দিয়ে তৈরি সেটার খরচ পড়েছে প্রায় ১৫ হাজার টাকা। যে অংশটা প্লাস্টিকের ড্রামে সেটার খরচ পড়েছে প্রায় ৫ হাজার টাকা। মাছ কেনার খরচ আলাদা। মাছে ইনভেস্ট হয়েছে প্রায় ২২ হাজার টাকা। মাছ বিক্রি শুরু হয়েছে ২/৩ মাস ধরে। মাসে এভারেজে প্রায় ১০ হাজার টাকা মাছ বিক্রি হয় এখন। পরিস্থিতি ভালো হলে বিক্রি বাড়বে আসা করি।

ছাদপুকুর নামে একটি ফেসবুক পেইজ ও গ্রুপ খুলেছেন এই দম্পতি।

পাখিদের কোলাহল

নানা রংয়ের দেশি-বিদেশি পাখিরা।

শহুরে জীবনে বাড়ির ছাদে তৈরি করা ছোট্ট এই গ্রামে শুধু ফুল-ফল আর পুকুরে মাছ নয় আছে নানা প্রজাতির পাখিও। দিনভর তাদের কোলাহল আর কিচিরমিচির শুনলে মনে হয়ে যেন গ্রামেই আছেন আপনি। এখানে রয়েছে বাজরিগার, লাভবার্ড, ফিঞ্চ, ককাটিয়েল, কবুতসহ নানা প্রজাতির দেশি-বিদেশি পাখ-পাখালি।  

অনুভূতি

এই দম্পতি তাদের বাড়ির ছাদে তৈরি করেছেন এক টুকরো গ্রাম।

ছোট্ট এই গ্রামের কারিগর মিরাজ মিজু ও কাজল দম্পতি জানান, অনুভূতি তো চরম ভালো। বিশেষ করে করোনার লকডাউনের এ সময়টাতেও বাসায় থাকতে বোরিং লাগে না মোটেও। বৃষ্টি হলে চারদিক আরও সুন্দর লাগে।

সকাল থেকেই পাখির কিচিরমিচির শুরু হয়ে যায়। আমাদের একটা মোরগ আছে। ওর নাম লালী। ফজরের আজানের পর লালীও ডাকাডাকি শুরু করে। আর যখন কোনো মানুষ বাসায় এসে আমাদের বাগান আর পুকুরের প্রশংসা করে তখন তো আরও ভালো লাগে।

বাংলাদেশ সময়: ০৮২৬ ঘণ্টা, জুন ১৯, ২০২০
এসএইচডি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ