এলাকাবাসীর মতে, তাদের মরদেহ দেখে মনে হচ্ছে এটি আত্মহত্যা নয় হত্যা। দুই বান্ধবী একই স্থানে একটি সিঁড়িতে ফাঁসিতে ঝুলে থাকা নিয়ে তাদের মনে এই প্রশ্নের জন্ম নিয়েছে।
সরেজমিন ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, নিহত দুই কিশোরীর বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। কোনভাবে তাদের করুণ মৃত্যু মেনে নিতে পারছে না পরিবারের লোকজন। দুই মেয়ে হারানোর শোকে তাদের মা বার বার অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছেন। মানুষজন দেখলে হাউ মাউ করে কেঁদে উঠছেন। কোন প্রকার সান্ততনাই তাদের কাজে আসছে না।
কান্না জড়িত কন্ঠে নিহত সোনিয়ার মা মিনু বেগম বাংলানিউজকে বলেন, আমার মেয়ের মরদেহ যারা দেখেছে কেউ বলবে না সে নিজে ফাঁসিতে ঝুলে মরেছে। পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে মারা হয়েছে। আমার মেয়ে হত্যার সঠিক বিচার চাই।
কথা হয় নিহত সুমাইয়ার বাবা বাবুল মিয়ার সাথে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমি পরিবার রেখে জীবিকার তাগিদে কুমিল্লা জেলায় থাকি। মেয়ের মৃত্যু খবর শুনে দ্রুত চলে আসি। ঘটনা শুনে বুঝলাম আমার মেয়েকে ষড়যন্ত্র করে হত্যা করা হয়েছে। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিচার চাই। এ ঘটনার পেছনে যারাই জড়িত তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হোক।
নিহত সোনিয়া কুটি গার্লস স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী ছিল। আর সুমাইয়া কুটি প্রাইমারি স্কুলের পঞ্চম শ্রেণিতে পড়তো।
পোস্ট অফিসের পেছন থেকে মরদেহ উদ্ধারের বিষয়ে জানতে চাইলে পোস্ট মাস্টার আব্দুল হাই বাংলানিউজকে বলেন, অফিসের পিছনে একটি জাম গাছ রয়েছে। প্রায় সময়ই ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা জাম টুকাতে আসে। ওই দিন বিকেলে অফিসে কাজ নিয়ে আমরা ব্যস্ত। এ সময় হঠাৎ প্রচণ্ড বৃষ্টি শুরু হয়। বৃষ্টি কমে গেলে দু,তিনজন বালক জাম টুকাতে এসে চিৎকার করে চলে যায়। এর কিছুক্ষণ পর দু-তিন জন নারী এসে বলে পোস্ট মাস্টার কোথায় দুই মেয়ে ফাঁসিতে ঝুলে মরে আছে। তখন আমি কক্ষ থেকে বের হয়ে দেখি দুই কিশোরীর মরেদহ লোহার সিঁড়িতে ঝুলে আছে। তারপর স্থানীয় লোকজনকে অবহিত করলে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে মরদেহ দুইটি উদ্ধার করে। যে ভাবে মরদেহ দুটি ঝুলে ছিল মনে হচ্ছে কেউ মেরে ঝুলিয়ে রেখেছে।
স্থানীয় লোকজন জানায়, ওই দুই কিশোরী বান্ধবী ছিল। একই বাসায় ভাড়া থাকত। সারাদিন এক সাথে চলাফেরা করত এবং স্কুলে যেত। এত অল্প বয়সে দু,জন এক সাথে আত্মহত্যা করেছে পুরোটাই রহস্যজনক। তবে আবার কেউ কেউ প্রেম গঠিত ঘটনার দিকেও ইঙ্গিত করছেন।
কুটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছাইদুর রহমান স্বপন প্রেম জনিত ঘটনার ইঙ্গিত দিয়ে বাংলানিউজকে বলেন, গত কয়েকদিন আগে মেয়েগুলোকে ছেলের সাথে কথা বলতে দেখে মেয়েগুলো বাবা- মা তাদেরকে শাসায়। হয়তো বা এ থেকেও মেয়ে দুটি অভিমান করে থাকতে পারে। তবে যাই হোক ঘটনাটির সঠিক তদন্ত করে মূল রহস্য উদঘাটন এবং এর পেছনে কেউ জড়িত থাকলে তাদের আইনের আওতায় আনা হোক।
কসবার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ লোকমান হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, এ ঘটনায় দু’টি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করছি। ঘটনাটির রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা চলছে।
গত বুধবার ১৭ জুন বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া কসবা উপজেলার কুটি এলাকায় পোস্ট অফিসের লোহার সিঁড়িতে দুই কিশোরী ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
বাংলাদেশ সময়: ০৪০০ ঘণ্টা, জুন ১৯, ২০২০
এমএমএস