ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বিশ্বে ৭ কোটি ৯৫ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত: ইউএনএইচসিআর

ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩০ ঘণ্টা, জুন ১৮, ২০২০
বিশ্বে ৭ কোটি ৯৫ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত: ইউএনএইচসিআর

ঢাকা: জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) বৈশ্বিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ২০১৯ সালের শেষে সারা পৃথিবীতে ৭ কোটি ৯৫ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত অবস্থায় ছিলেন। ইতিহাসে এর আগে এত মানুষ কখনো গৃহহারা ছিলেন না।

বৃহস্পতিবার (১৮ জুন) ইউএনএইচসিআর এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়।

প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমান বিশ্বের এক শতাংশেরও বেশি মানুষ– প্রতি ৯৭ জনে ১ জন বলপূর্বক বাস্তুচ্যুতির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত।

আর স্বেচ্ছা প্রত্যাবাসনের সুযোগও দিনদিন কমে আসছে। বিশ্ব শরণার্থী দিবসের দু’দিন আগে প্রকাশিত ইউএনএইচসিআরের বার্ষিক গ্লোবাল ট্রেন্ডস রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১৯ সালের শেষে সারা পৃথিবীতে ৭ কোটি ৯৫ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত অবস্থায় ছিলেন। ইতিহাসে এর আগে এত মানুষ কখনও গৃহহারা ছিলেন না।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, শরণার্থীদের দুর্দশার দ্রুত সমাপ্তির আশাও দিনদিন কমে আসছে। ৯০-এর দশকে, প্রতি বছর গড়ে ১৫ লাখ মানুষ প্রত্যাবাসনের মাধ্যমে নিজ দেশে ফিরতে পারতেন। গত দশকে এ সংখ্যা কমে ৩ লাখ ৯০ হাজারে পৌঁছেছে। এতে বোঝা যায় বাস্তুচ্যুতির পরিমাণ এখন টেকসই সমাধানকে কত দূরে নিয়ে গেছে।

জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাই কমিশনার ফিলিপো গ্র্যান্ডি বলেন, ‘পরিবর্তিত বাস্তবতায় আজ বলপূর্বক বাস্তুচ্যুতির পরিমাণই যে শুধু বেড়েছে তা নয়; বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সমস্যাগুলো দীর্ঘমেয়াদী। নিজ দেশে প্রত্যাবাসন কিংবা নতুন কোথাও ভবিষ্যত গড়ে তোলার কোনো আশা ছাড়া এসব মানুষ বছরের পর বছর কাটিয়ে দিচ্ছে অনিশ্চয়তায়, এটা মেনে নেওয়া যায় না। শরণার্থীদের জন্য প্রয়োজন একেবারে নতুন ও উদার দৃষ্টিভঙ্গি। এর সঙ্গে সঙ্গে তাদের দুর্ভোগের মূলে থাকা বছরের পর বছর ধরে চলতে থাকা সংঘাতগুলোর সমাধানে চাই দৃঢ় প্রত্যয়। ’

ইউএনএইচসিআরের গ্লোবাল ট্রেন্ডস রিপোর্ট অনুযায়ী, এ ৭ কোটি ৯৫ লাখ মানুষের মধ্যে ৪ কোটি ৫৭ লাখ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন নিজ দেশের ভেতরে। বাকিরা বাধ্য হয়েছেন দেশ ছাড়তে, যার মধ্যে ২ কোটি ৯৬ লাখ শরণার্থী, আর ৪২ লাখ মানুষ অন্য কোনো দেশে আশ্রয়ের আবেদন করে ফলাফলের অপেক্ষা করছেন।

২০১৮ সালের শেষে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা ছিল ৭ কোটি ৮ লাখ, যা এক বছরে বেড়েছে মূলত দু’টি কারণে। প্রথমটি হলো নতুন বাস্তুচ্যুতির বিভিন্ন ঘটনা- বিশেষত গণপ্রজাতন্ত্রী কঙ্গো, পশ্চিম আফ্রিকার সাহেল অঞ্চল, ইয়েমেন ও সিরিয়ার সংঘাত। সংঘাতপূর্ণ নয় বছর পর আজ ১ কোটি ৩২ লাখ সিরিয়ান হয় শরণার্থী, কিংবা আশ্রয়প্রার্থী, অথবা আভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত। এ সংখ্যা বৈশ্বিক বাস্তুচ্যুতির ছয় ভাগের এক ভাগ। দ্বিতীয় কারণ হিসেবে আছে নিজ দেশের বাইরে অবস্থানরত ভেনেজুয়েলার মানুষের পরিস্থিতি সম্পর্কে গত এক বছরে পাওয়া বিশদ তথ্য। তাদের অনেকেই আইনত শরণার্থী বা আশ্রয়প্রার্থী হিসেবে নিবন্ধিত নন, কিন্তু সুরক্ষা ও সহায়তা তাদেরও প্রয়োজন।

এসব শুধুই সংখ্যা নয়, এর মধ্যে জড়িয়ে আছে অনেক মানুষ ও তাদের দৈনন্দিন সংগ্রাম। অস্ট্রেলিয়া, ডেনমার্ক ও মঙ্গোলিয়ার মোট জনসংখ্যার যোগফলের চেয়েও বেশি সংখ্যক শিশু আজ বাস্তুচ্যুত। তাদের সংখ্যা প্রায় ৩ কোটি থেকে ৩ কোটি ৪০ লাখ, যার মধ্যে লাখ লাখ শিশু অভিভাবকহীন। বাস্তুচ্যুত প্রবীণ জনসংখ্যা (৪ শতাংশ) বৈশ্বিক প্রবীণ জনসংখ্যার (১২ শতাংশ) চেয়ে অনেক কম। এ পরিসংখ্যানের পেছনে আছে অসংখ্য হৃদয়বিদারক হতাশা, আত্মত্যাগ ও বিচ্ছেদের কাহিনী।

বলপূর্বক বাস্তুচ্যুতির ব্যাপারে এ ৮টি বিষয় জানা দরকার- ১০ কোটি মানুষ গত এক দশকে বাস্তুচ্যুত হয়ে নিজ দেশের অন্যত্র অথবা দেশের বাইরে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন। এ সংখ্যা মিশরের জনসংখ্যার চেয়েও বেশি, যা কিনা বিশ্বের ১৪তম বৃহৎ জনসংখ্যা। বলপূর্বক বাস্তুচ্যুতির পরিমাণ গত ১০ বছরে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে (২০১০ সালে ছিল ৪ কোটি ১০ লাখ, যা এখন ৭ কোটি ৯৫ লাখ)। ৮০ শতাংশ বাস্তুচ্যুত মানুষ এমন দেশে রয়েছেন, যেসব দেশ তীব্র খাদ্য সংকট ও অপুষ্টি সমস্যায় জর্জরিত। এর মধ্যে অনেক দেশ জলবায়ু ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকিতে রয়েছে। বিশ্বের তিন-চতুর্থাংশেরও বেশি শরণার্থী (৭৭ শতাংশ) দীর্ঘমেয়াদী সংকটে আটকে আছে। উদাহরণস্বরূপ- আফগানিস্তান সংকটের এখন পঞ্চম দশক চলছে। প্রতি ১০ জনে গড়ে আট জনেরও বেশি (৮৫ শতাংশ) শরণার্থী এখন আছে উন্নয়নশীল দেশে। সাধারণত প্রতিবেশী দেশেই তারা আশ্রয় নেন।

প্রকাশিত রিপোর্টে বিশ্বের সব দেশকে শরণার্থী এবং সংঘাত, নিপীড়ন বা অন্য হুমকির কারণে উদ্বাস্তুদের নিরাপদ আশ্রয় ফিরে পেতে সাহায্য করার জন্য আবারও আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩০ ঘণ্টা, জুন ১৮, ২০২০
টিআর/এফএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।