প্রশাসনের পক্ষে গ্রামের ক্ষতিগ্রস্তদের পুর্নবাসন করা হলেও ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে কোনো সাহায্য সহযোগিতা মেলেনি। ফলে এসব শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানগুলো ঘুরে দাঁড়ানোই বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে।
যশোর জেলা শিক্ষা অফিস সূত্রমতে, ঘূর্ণিঝড় আম্পানের আঘাতে জেলায় ৩৭৩টি শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের ৫ কোটি ২১ লাখ ৯৬ হাজার টাকা ক্ষতি হয়েছে। এরমধ্যে অধিকাংশ শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের টিনের চাল উড়ে গেছে। সেসঙ্গে পাকা দেওয়ালের ওপর বড় বড় গাছ ভেঙে গেছে। আবার কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানে আধা পাকা দেওয়ালে ফাটল ধরেছে। সংস্কার না করা হলে এসব শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান খুললেও শিক্ষার্থীদের ক্লাস করানো যাবে না। ক্ষতিগ্রস্ত ৩৭৩টি শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৬৭টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৩ কোটি ১১ লাখ ৩৬ হাজার টাকা, ৬১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ২৭টি কলেজে ৪৮ লাখ ২৫ হাজার, ১১৩টি মাদ্রাসায় ১ কোটি ৭ লাখ ৮৫ হাজার টাকা ও ৫টি কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্ষতি হয়েছে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
জেলার ৩৭৩টি শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের মধ্যে যশোর সদর উপজেলায় ৪০টি শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে ৮৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে ৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১১ লাখ টাকা, ১৫টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৪৬ লাখ টাকা, ২টি কলেজে ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা ও ১৬টি মাদ্রাসায় ক্ষতি হয়েছে ২৪ লাখ টাকা। ঝিকরগাছায় ৭৫টি শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে ১ কোটি ৮২ লাখ ৩ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে ২৫টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ১ কোটি ৩৪ লাখ টাকা, ২৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৯ লাখ ৩ হাজার টাকা, ৩টি কলেজে ৫ লাখ টাকা ও ২৩ মাদ্রাসায় ক্ষতি হয়েছে ৩৪ লাখ ১০ হাজার টাকা। অভয়নগরে ৪০টি শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে ক্ষতি হয়েছে ৩৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এর মধ্যে ৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১১ লাখ টাকা, ১৫টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৪৬ লাখ টাকা, ২টি কলেজে সাড়ে ৪ লাখ টাকা ও ১৬টি মাদ্রাসায় ক্ষতি হয়েছে ২৪ লাখ টাকা। কেশবপুরে ১২১টি শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে ক্ষতি হয়েছে ক্ষতি হয়েছে ১ কোটি ২৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে ২টা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দেড় লাখ টাকা, ১১ টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ৬টি কলেজে ১৪ লাখ টাকা ও ৭টি মাদ্রাসায় ক্ষতি হয়েছে ১০ লাখ ৫০ হাজার টাকা। চৌগাছায় ৩১ শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে ক্ষতি হয়েছে ৪৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এর মধ্যে ৯টা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১০ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ১১টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ২২ লাখ টাকা, ২টি কলেজে ৩ লাখ ও ৯টি মাদ্রাসায় ক্ষতি হয়েছে ৯ লাখ টাকা। মণিরামপুরে ৩৮টি শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে ক্ষতি হয়েছে ১ কোটি ১৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এর মধ্যে ৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ২০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৬৪ লাখ টাকা, ৪টি কলেজে ৫ লাখ টাকা,৪টি মাদ্রাসায় ২১ লাখ টাকা ও ১টি ভোকেশনাল স্কুলে ক্ষতি হয়েছে ১ লাখ টাকা। বাঘারপাড়ায় ১০টি শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে ক্ষতি হয়েছে ৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে ২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২০ হাজার টাকা, ৫টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ৩টি মাদ্রাসায় ৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা ও ১টি ভোকেশনাল স্কুলে ক্ষতি হয়েছে ১ লাখ টাকা। শার্শায় ১৮টি শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে ক্ষতি হয়েছে ২১ লাখ ২৬ হাজার টাকা । এর মধ্যে ৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১০ লাখ টাকা, ১২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ১০ লাখ ৫১ হাজার টাকা, ১টি কলেজে ক্ষতি হয়েছে ৭৫ হাজার টাকা। কিন্তু ঝড়ের প্রায় মাস পার হতে চললেও ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানগুলো এখনো অর্থের অভাবে মেরামত করতে পারেনি। ফলে শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান খুললে শিক্ষার্থীদের ক্লাস করানো যাবে না বলে অভিযোগ করেছেন ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা।
ঝিকরগাছা পারবাজার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফজলুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ঝড়ে তার স্কুলের অনেক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতি পরিমাণ তালিকা করে শিক্ষা অফিসে পাঠানো হয়েছে। তবে প্রায় মাস পার হতে চললো তবে এখনো কোন সাহয্য সহযোগিতা পেলাম না। ফলে শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান খুললে শিক্ষার্থীদের ক্লাস করাতে পারবো না।
যশোর জেলা শিক্ষা অফিসার এ এস এম আব্দুল খালেক বাংলানিউজকে বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের নাম ও ক্ষতির পরিমাণ মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা অধিদফতরে পাঠানো হয়েছে। সেই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে তালিকা পাঠানো হয়েছে। কবে এসব শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে আর্থিক সহায়তা দেবে, সেটা এখন বলা যাচ্ছে না।
যশোর জেলা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) শাম্মী ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, যশোর জেলায় ঘূর্ণিঝড় আম্পানে প্রতিটি সেক্টরে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। জেলায় অনেক শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানেও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের তালিকা প্রস্তুত করে এসব ক্ষতি পুষিয়ে নিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে দপ্তরে চাহিদা পাঠিয়েছি।
বাংলাদেশ সময়: ২১২০ ঘণ্টা, জুন ১৭, ২০২০
ইউজি/এএটি