ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ঘনবসতি এলাকায় অটো রাইস মিল 

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫৮ ঘণ্টা, জুন ১৭, ২০২০
নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ঘনবসতি এলাকায় অটো রাইস মিল 

দিনাজপুর: দিনাজপুর সদর উপজেলার আউলিয়াপুরে জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ঘনবসতি এলাকায় নির্মাণ করা হচ্ছে অটো রাইস মিল। মিলটি চালু হলে আশপাশের পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হবে উল্লেখ করে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসক বরাবর একটি অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। 

এছাড়াও মিলটি চালুর ফলে দেশের সেরা লিচু উৎপাদনকারী এই এলাকায় লিচু ও আম গাছের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। অপরদিকে বিষয়টি প্রয়োজনীয় তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন জেলা প্রশাসক।

 

জানা গেছে, ২০১৯ সালের আগস্ট মাসে দিনাজপুর সদর উপজেলার পুলহাট এলাকার ৬ নম্বর আউলিয়াপুর ইউনিয়নের আউলিয়াপুর গ্রামে ঘনবসতি এলাকায় রাইস মিল নির্মাণের কাজ শুরু করেন মাশিমপুর গ্রামের আইয়ুব আলীর ছেলে মো. ওহিদুল ইসলাম।  

পরবর্তীকালে ওই বছরের ৪ সেপ্টেম্বর এলাকাবাসীর পক্ষে আব্দুছ ছালামের ছেলে মো. গোলাপ জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম, দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক, পরিবেশ অধিদপ্তর, সদর উপজেলা পরিষদ, বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ কেন্দ্র-২, দিনাজপুর পৌরসভা বিভিন্ন দপ্তরে একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। অভিযোগটিতে ওই এলাকার ৮৩ জন স্বাক্ষর করেন।  

লিখিত অভিযোগ হাতে পাওয়ার পর জেলা প্রশাসক দিনাজপুর পরিবেশ অধিদপ্তর সহকারী পরিচালককে বিষয়টি সরেজমিন তদন্ত করে রিপোর্ট দেওয়ার নির্দেশ দেন। পরে ২০১৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ওই রাইস মিলটি নির্মাণে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক মো. মাহমুদুল আলম সই করা একটি চিঠি সংশ্লিষ্টদের পাঠিয়ে দেন।  

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়- অটো রাইস মিল নির্মাণের ব্যাপারে বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ এবং পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা, ১৯৯৭ অনুযায়ী রাইস মিলটির অনুকূলে অবস্থানগত/ পরিবেশগত ছাড়পত্র গ্রহণ করা হয়নি। অবৈধভাবে মিলটির নির্মাণ কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। এছাড়াও ওই স্থানে অটো রাইস মিলটির কার্যক্রম পরিচালনা করা হলে স্থানীয় পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের উপর একটি বিরূপ প্রভাব পড়বে মর্মে তদন্তকারী কর্মকর্তা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। এমতাবস্থায় অটো রাইস মিলটির স্থাপনার কার্যক্রম বন্ধ রাখার জন্য অনুরোধ করা হলো। অন্যথায় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।  

এছাড়াও দিনাজপুরের পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. মিজানুর রহমানের সই করা একটি চিঠিতেও অটো রাইস মিল নির্মাণ বন্ধের নোটিশ দেওয়া হয়।  

এ ব্যাপারে চলতি বছরের ১০ জুন ওই এলাকার বাসিন্দা আব্দুল মজিদের ছেলে আব্দুস সাত্তার দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক বরাবর মিলটির ব্যাপারে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়- মিলটি নির্মাণের ব্যাপারে ইতোপূর্বে জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। সম্প্রতি করোনা ভাইরাসের কারণে লকডাউন চলাকালীন প্রশাসনের চোখের আড়ালে অটো রাইস মিলটি নির্মাণ কাজ অব্যাহত রেখেছেন ওহিদুল ইসলাম। অটো রাইস মিলটি নির্মাণ করা হলে দিনাজপুরের প্রসিদ্ধ লিচু বাগান ও আম উৎপাদন কমে যাবে। এছাড়াও এলাকাটি বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়বে।  

কিন্তু জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের নিষেধাজ্ঞার পরও সম্প্রতি মিলটির নির্মাণকাজ শুরু করেছেন ওহিদুল ইসলাম। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে- যেই স্থানে মিলটি নির্মাণ করা হচ্ছে সেটির দেয়াল ঘেঁষা রয়েছে ঘনবসতি এলাকা।  

এছাড়াও মিলটির সঙ্গেই রয়েছে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের শাখা। মিলটি যে এলাকায় অবস্থিত হচ্ছে সেই এলাকার লিচু দেশজুড়ে বিখ্যাত। এই এলাকার চায়না থ্রি, বেদেনা, মাদ্রাজি লিচু দেশ ও দেশের বাইরে সরবরাহ করা হয়। মিলটি নির্মাণের ফলে আশপাশের লিচু ও আমের বাগানের ব্যাপক ক্ষতি হবে। মিলটি নির্মাণের পর চালু হলে ওই এলাকাটি বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়বে।  

মিলের সত্ত্বাধিকার ওহিদুল ইসলাম প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে অটো রাইস মিল নির্মাণের কথা স্বীকার করে বাংলানিউজকে বলেন, মিলটি নির্মাণ করতে আমার প্রচুর টাকা খরচ হয়েছে। মিলটি সম্পূর্ণ ইস্পাত দিয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে, কিন্তু মিলটি নির্মাণ বন্ধ রাখলে আমার অনেক ক্ষতি হবে। আমি মিলটির নির্মাণকাজ শেষ করে প্রশাসনের কাছ থেকে চালুর অনুমতি চাইব। যদি চালুর অনুমতি পাই তাহলে চালাব, না হলে বন্ধ রাখা ছাড়া আমার করার কিছু নেই।  

তিনি আরও বলেন, এই মিলটির স্থানে এর আগে হাসকিং মিল ছিল। কিন্তু বর্তমানে হাসকিং মিল বন্ধ হওয়ায় আমি অটো রাইস মিল গড়ে তুলতেছি।  

দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক মো. মাহমুদুল আলম বাংলানিউজকে জানান, ইতোপূর্বে মিলটির নির্মাণকাজ বন্ধ করে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি লকডাউন চলাকালীন গোপনে অটো রাইস মিলটির নির্মাণকাজ শুরু করেছেন। সম্প্রতি আমার কাছে এলাকাবাসীর পক্ষে মিলটির ব্যাপারে আরও একটি অভিযোগ এসেছে। বিষয়টি তদন্ত করে মিল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৫ ঘণ্টা, জুন ১৭, ২০২০
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।