শুষ্ক মৌসুমে পানির সমস্যা আর বর্ষায় কচুরিপানাতে ভরে থাকে পুরো ফসলের মাঠ। কৃষকের সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেই কৃষিবিভাগের।
এই সুযোগে স্থানীয় একটি চক্র ফসলের মাঠে খনন করছে পুকুর। উপজেলার দুটি ইউনিয়ন ও পাঁচটি গ্রামের প্রায় কয়েক হাজার কৃষকের চাষাবাদের এই ফসলি মাঠে জলাবদ্ধতা নিরসনে খাল খনন ও সড়কের দাবি কৃষকদের।
কৃষি অঞ্চল হিসেবে বেশ পরিচিত পাবনা জেলা। এই অঞ্চলের কৃষি ফসল দেশের চাহিদার অনেকাংশ পূরণ করে থাকে। এ অঞ্চলের বিলগুলোতে পেঁয়াজ, পাঠ, ধানসহ বিভিন্ন ধরনের ফসল ব্যাপকভাবে উৎপাদন হয়ে থাকে। উপজেলার গাজনার বিলের শেষ প্রান্তে অবস্থিত আহম্মেদপুর ও রানীনগর ইউনিয়নের মধ্যে অবস্থিত এই পশ্চিমচক বিল। বিলের চারপাশে প্রায় পাঁচটি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষের আয়ের একমাত্র উৎস এই ফসলের মাঠ। এই বিলের সবচাইতে বেশি জমি রয়েছে সৈয়দপুর গ্রামের মানুষদের।
বর্তমানে কৃষকদের ফসল স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা দলিল উদ্দিন মিঞা দুলালের দেওয়া জায়গার উপর দিয়ে আনা-নেওয়া করতে হচ্ছে।
সম্প্রতি ওই অঞ্চলের কৃষকদের সমস্যার বিষয় জানতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়- প্রায় তিন কিলোমিটার দৈঘ্য ও চার কিলোমিটার প্রস্থ বিলের প্রায় চার থেকে পাঁচ হাজার হেক্টর ফসলি জমি রয়েছে। তিন ফসলি জমিতে এখন দুটি করে ফসল আবাদ হচ্ছে। শুকনা মৌসুমে পানির সমস্যা আর ভরা মৌসুমে বর্ষায় জলাবদ্ধতা সৃস্টি হয়ে পানিবন্দি হয়ে থাকছে ফসলের মাঠ। আর জলাবদ্ধ ফসলের মাঠ কচুরিপানায় ভরে থাকছে।
শুষ্ক মৌসুমে কচুরিপানা সরিয়ে অনেক কষ্ট করে ফসল উৎপাদন করতে হচ্ছে কৃষকদের। আর এ কারণে ফসল উৎপাদনে কৃষকদের গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত টাকা। ফসল আনা-নেওয়ার জন্য বিলে নেই কোনো যাতায়াতের ব্যবস্থা। ফসলের মাঠের আইল ধরে অনেক কষ্ট করে ফসল আনতে হয় তাদের। সম্প্রতি একটি চক্র কৃষকদের অসহায় অবস্থার সুযোগ নিয়ে ফসলের মাঠে মাছ চাষের জন্য পুকুর খনন করছেন অবৈধভাবে। এ কারণে আরও বিপাকে পড়েছেন ওই ওই অঞ্চলের কৃষকরা।
স্থানীয় কৃষক মো. আফজাল হোসেন খান বলেন, আমাদের কষ্টের শেষ নাই। অনেক কষ্ট করে ধান কেটে বাড়িতে নিতে হয়। ধান আনা-নেওয়ার কষ্টের কারণে আমার মত অনেক কৃষক ওই ক্ষেতে শুধু পাট চাষ করছেন। বর্ষার সময় কচুরিপানার কারণে পতিত থাকছে অনেক ফসলের মাঠ। তিন ফসলি ওই ক্ষেতে বর্তমানে এক থেকে দুই ফসল আবাদ করছেন এই অঞ্চলের কৃষকরা।
স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা কৃষক মো. দোলিল উদ্দিন মিঞা বলেন, আমাদের সৈয়দপুর গ্রামের পাশে এই বিশাল বিল অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে নানা ধরনের ফসলের আবাদ হয়ে থাকে। এই বিল গাজনার বিলের পাশেই অবস্থিত। আজ থেকে ২০ বছর আগে এই বিলের পানি বের হয়ে যেত। কিন্তু চারপাশে রাস্তা হওয়াতে বদ্ধ জায়গায় পরিণত হয়েছে বিলটি। পরিকল্পিতভাবে বিলের মাঝ দিয়ে খাল খনন ও রাস্তা করে দিলে কৃষকদের বেশ উপকার হয়। বর্তমান সরকারের কাছে মুক্তিযোদ্ধা ও কৃষক হিসেবে এই বিল অঞ্চলের কৃষকদের বাঁচানোর দাবি করছি।
পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আজহার আলী বলেন, কৃষকদের সমস্যা সমাধানের জন্য আমরা সব সময় কাজ করছি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পরে দেশে আর কোনো ফসলি জমি পতিত রাখা যাবে না। ওই বিল এলাকা আমি পরিদর্শন করেছি। সংশ্লিষ্ট উপজেলার কৃষি কর্মকর্তাসহ সংসদ সদস্যর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। বিলের পানি নিষ্কাশনসহ ফসল আনা-নেওয়ার জন্য একটি খাল খনন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। সরকারিভাবে অর্থ বরাদ্দ হলে বিলের কাজ করা হবে।
পাবনা সুজানগর-২ আসনের সংসদ সদস মো. আহম্মেদ ফিরোজ কবির (এমপি) বলেন, সমস্যা সমাধানের জন্য ১১০ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। আপনারা জানেন এই সুজানগর উপজেলা দেশের মধ্যে কৃষি ফসল বিশেষ করে পেঁয়াজ, রসুন ও পাটের জন্য বেশ সমৃদ্ধ অঞ্চল। উর্বর এই ফসলের জমিতে ধানও হয়ে থাকে বেশ ভালো। এই অঞ্চলের কৃষকদের বাইরে থেকে চাল কিনতে হয় না। চেষ্টা করছি কৃষকদের সমস্যা সমাধানের জন্য।
এ অর্থ বছরে প্রকল্পটি অনুমোদন হলে বিল উন্নয়নসহ শহর রক্ষার মুজিব বাঁধ সংস্কার করা হবে বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৪৮ ঘণ্টা, জুন ১৫, ২০২০
আরএ