ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

উল্টো নির্যাতিতাকেই জরিমানা করলেন ইউপি চেয়ারম্যান

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩২৮ ঘণ্টা, জুন ১১, ২০২০
উল্টো নির্যাতিতাকেই জরিমানা করলেন ইউপি চেয়ারম্যান

নাটোর: নাটোরে নির্যাতিতা এক গৃহবধূকে সালিশ বৈঠকে এক লাখ জরিমানা করেছে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও গ্রাম প্রধানরা। একই সঙ্গে ওই গৃহবধূর বাবা সালিশে আসতে দেরি করায় তাকেও এক হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। 

মঙ্গলবার (০৯ জুন)  দিনগত রাতে সদর উপজেলার তেবাড়িয়া ইউনিয়নের বালিয়াডাঙ্গা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। ওই গৃহবধূ গ্রামের এক প্রবাসীর স্ত্রী।

আর চেয়ারম্যান ওমর আলী প্রধান জেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য ও তেবাড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি।  

এদিকে ওই সালিশ বৈঠকে গৃহবধূকে লাখ টাকা জরিমানা করার ঘটনায় রুহুল আমিন ও সোবহান আলী নামে দুই গ্রাম প্রধানকে আটক করেছে পুলিশ। তবে ঘটনার মূল নায়ক তেবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. ওমর আলী প্রধান আছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। এ নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

নাটোর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহাঙ্গীর আলম বাংলানিউজকে জানান, গত ২৯ মে রাতে সদর উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের ওই গৃহবধূকে ধর্ষণ করেন অমর কুমার (২২) নামে এক তরুণ। ঘটনার সময় তাকে স্থানীয় লোকজন হাতেনাতে আটক করে পুলিশে সোর্পদ করে। ৩০ মে থানায় অমর কুমারের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা করেন ওই গৃহবধূ। পরে ওই মামলায় তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।

এরপর মঙ্গলবার (০৯ জুন) দিনগত রাতে গ্রামে সালিশ বৈঠক ডেকে অন্য ধর্মের ছেলের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার অপবাদ দিয়ে ভুক্তভোগী গৃহবধূকে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। এসময় ওই গৃহবধূর বাবা সালিশে আসতে দেরি করার অপরাধে তাকেও এক হাজার টাকা জরিমানা করে চেয়ারম্যান ওমর আলী প্রধান এবং অন্যান্য প্রধানগণ।

খবর পেয়ে রাত ১১টার দিকে বালিয়াডাঙ্গা গ্রামে অভিযান চালিয়ে রুহুল আমিন এবং সোবহান আলী নামে দুই প্রধানকে আটক করা হয়। তবে তেবাড়িয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ওমর আলী প্রধান এবং বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের বড় প্রধান আব্দুল হাকিম পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যান।

ওসি আরও বলেন, ওই সালিশে চেয়ারম্যানসহ পাঁচজন গ্রাম প্রধান উপস্থিত ছিলেন বলে জানতে পেরেছি। অভিযান চালিয়ে তাদের দু'জনকে আটক করতে সক্ষম হয়েছি। অন্যদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।  

ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান ওমর আলী প্রধান বাংলানিউজকে বলেন, ওই গৃহবধূর স্বামী বিদেশে থাকেন। তিনি যেহেতু মুচি সম্প্রদায়ের ছেলের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কের অপরাধ করেছেন। তাই দুবাই প্রবাসী তার স্বামী মসজিদ নির্মাণের জন্য এক লাখ টাকা জরিমানা দিতে চেয়েছেন। সেই টাকাই সালিশে বসে তারা রায় দিয়েছেন। এটাকে জরিমানা বলা ঠিক হবে না।

নাটোরের পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা বাংলানিউজকে বলেন, ধর্ষণের মতো অভিযোগ নিয়ে সালিশ করার কোনো সুযোগ নেই। ঘটনার সঙ্গে চেয়ারম্যানও জড়িত কি না তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। জড়িত থাকলে তাকেও আইনের আওতায় আনা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৩২৬ ঘণ্টা, জুন ১১, ২০২০
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।