ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

অবশেষে চাল পাচারের ঘটনায় থানায় মামলা

উপজেলা করসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২০২ ঘণ্টা, জুন ১০, ২০২০
অবশেষে চাল পাচারের ঘটনায় থানায় মামলা চাল

মধুপুর (টাঙ্গাইল): দুই উপজেলায় রশি টানাটানির দু’দিন পর সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির (ফেয়ার প্রাইস) চাল পাচারের অভিযোগে টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী থানায় মামলা হয়েছে। মামলার আসামী করা হয়েছে মধুপুরের গোলাবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুস সাত্তার এবং ভাইঘাটের চাল ব্যবসায়ী নুরুল ইসলামকে।

মঙ্গলবার (০৯ জুন) রাত ৯টার দিকে মধুপুর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আনিসুর রহমান বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন। মধুপুর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আনিসুর রহমান অভিযোগ দাখিলের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

উল্লেখ্য, অভিযোগ পেয়ে রোরবার (০৭ জুন) সন্ধ্যা রাতে অভিযান চালিয়ে মধুপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফা জহুরা পাশের উপজেলা ধনবাড়ীর বাঘিলের রজনীগন্ধা নামক এক রাইস প্রসেসিং মিল থেকে ওই চাল উদ্ধার করেন। পরে ধনবাড়ী উপজেলা প্রশাসনের জিম্মায় ওই রাইস প্রসেসিং মিলে রেখে দিয়ে তদন্ত প্রক্রিয়া শুরু করেন। এ নিয়ে সোমবার (০৮ জুন) বাংলানিউজে  প্রতিবেদন প্রকাশ হয়।

সরকারি বিভিন্ন ত্রাণ তথা খাদ্য বান্ধব ও সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির জব্দ হওয়া সাড়ে তিন টনের অধিক এই চাল নিয়ে টাঙ্গাইলের মধুপুর ও ধনবাড়ী উপজেলায় গত দু’দিনের প্রায় ৫০ ঘন্টা তোলপাড় চলছিল। সোমবার ও মঙ্গলবার দিনভর মধুপুর ও ধনবাড়ী প্রশাসনে ব্যাপক জল্পনা-কল্পনা হয়েছে। বসেছে কয়েক দফা বৈঠকও। অভিযোগ উঠেছে বিষয়টি প্রভাবশালীরা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছিল।  

একটি বিশেষ সুত্র মতে, সরকারের বিভিন্ন ত্রাণ তৎপরতা তথা সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির ওই চাল (৭১ বস্তা) প্রসেস করতে ধনবাড়ী সীমায় অবস্থিত রজনীগন্ধা রাইস প্রসেসিং মিলে রাখার অভিযোগের ভিত্তিতে রবিবার রাতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও মধুপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফা জহুরা পুলিশ ফোর্স নিয়ে অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করেন। বস্তা পরিবর্তন করে ওই চাল প্রসেসিং করার প্রক্রিয়া চলছিল।

অভিযোগে আরও জানা যায়, মধুপুরের গোলাবাড়ী ইউনিয়নের আব্দুস সাত্তার নামের জনৈক ইউপি সদস্যের বাড়ি থেকে ২৪ বস্তাসহ একাধিক স্থান থেকে ধনবাড়ীর ভাইঘাট বাজারের চাল ব্যবসায়ী ধোপাখালীর জনৈক নুরুল ইসলাম ওই ৭১ বস্তা চাল প্রসেস করতে ওই মিলে জমা করেন।

মধুপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফা জহুরা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে সাংবাদিকদের জানান,  অভিযান চালিয়ে জব্দ করা ৭১ বস্তা চাল ধনবাড়ী উপজেলা প্রশাসনের জিম্মায় দেয়া হয়। ধনবাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরিফা সিদ্দিকা জানান, জব্দ চাল ধনবাড়ী উপজেলা খাদ্য পরিদর্শক মাহমুদুল হাসানের জিম্মায় রাখা হয়। মাহমুদুল হাসান জানান, তিনি ওই চাল মিল মালিক সাদিকুল ইসলাম আমিনের জিম্মায় রাখেন।

এরপর জব্দ হওয়া চাল নিয়ে চলে নানা জল্পনা-কল্পনা। চাল মধুপুর উপজেলার। অভিযুক্ত আব্দুস সাত্তার মধুপুর উপজেলার গোলাবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য। ক্রেতা নুরুল ইসলাম ধনবাড়ীর ধোপাখালীর বাসিন্দা। ধনবাড়ী সীমায় অবস্থিত রাইস প্রসেসিং মিলটি মধুপুর উপজেলা হতে রেজিষ্ট্রিকৃত। চাল জব্দ করেন মধুপুর উপজেলা প্রশাসন। কাজেই  কে তদন্ত করবে, কোন থানায় মামলা হবে এসব নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়। কিন্তু ঘটনাস্থল ধনবাড়ী উপজেলার অর্ন্তভূক্ত হওয়ায় ধনবাড়ী উপজেলা দেখভাল করবেন বলে জানান মধুপুর উপজেলা প্রশাসন।

এদিকে প্রভাবশালী মহল বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার জন্য তদবির চালায়। অবশেষে মধুপুর উপজেলা প্রশাসনই আইনগত ব্যবস্থা নেবে এমন সিদ্ধান্ত হয়। পরে জেলা প্রশাসক মো. শহীদুল ইসলামের হস্তক্ষেপে চাল চুরি ও পাচারের অভিযোগে ধনবাড়ী থানায় মামলা দায়ের হলো।

মধুপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরিফা জহুরা জানান, ৭১ বস্তা চালের মধ্যে ২৪ বস্তা ফেয়ার প্রাইসের। বাকিটা ত্রাণসহ অন্যান্য খাতের। ঘটনাস্থল ধনবাড়ী উপজেলাধীন হওয়ায় জব্দকৃত চাল  নিয়ে ধনবাড়ী থানায় মামলা হয়েছে।  একটু জটিলতা থাকায় তদন্তে বেশি সময় লেগেছে।

ধনবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) চান মিয়া বাদির অভিযোগ পাওয়ার কথা নিশ্চিত করেছেন।  তিনি বলেন, অভিযোগে কিছুটা ভুলত্রুটি আছে। আগামীকাল এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসক মো. শহীদুল ইসলাম  সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, চাল নিয়ে নয়-ছয়ে কাউকে ছাড় দেওয়া হবেনা।

বাংলাদেশ সময়: ০২০১ ঘণ্টা, জুন ১০, ২০২০
ইউবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।