ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

নির্ধারিত সময়েই শেষ হচ্ছে রূপপুর এনপিপির কাজ

শামীম খান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২৪ ঘণ্টা, জুন ৬, ২০২০
নির্ধারিত সময়েই শেষ হচ্ছে রূপপুর এনপিপির কাজ

ঢাকা: করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও নির্ধারিত সময়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া শেষ করার চ্যালেঞ্জ নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণ কাজ। চলতি বছরের ডিসেম্বরের শেষ দিকে এ প্রকল্পের মূল যন্ত্র রিয়্যাক্টর প্রেসার ভ্যাসেল স্থাপনের টার্গেট রয়েছে।

বিশ্বব্যপাী নোভেল করোনা ভাইরাসের (কোভিড-১৯) মহামারি চলছে। এর থেকে বাংলাদেশও বিচ্ছিন্ন নয়।

তবে এই পরিস্থিতিতেও রাশিয়ার সার্বিক সহযোগিতা ও তত্ত্বাবধানে নির্মাণাধীন বাংলাদেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের (আরএনপিপি) নির্মাণ কাজ থেমে নেই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) ও বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য বিধি মেনে এই দুই ইউনিট বিশিষ্ট প্রকল্পের নির্মাণ কাজ অব্যাহত রয়েছে। দেশি-বিদেশি সাত থেকে আট হাজার ইঞ্জিনিয়ার, বিশেষজ্ঞ, কর্মকর্তা-কর্মচারী বর্তমানে এই প্রকল্পে কাজ করছেন।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাস্তবায়নাধীন এ প্রকল্পের কাজে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নির্ধারিত সিডিউল অনুযায়ী কাজ অব্যাহত রয়েছে। শনিবার (৬ জুন) থেকে শুরু হচ্ছে প্রথম ইউটের রিয়্যাক্টর ভবনের ইনার কন্টেইনমেন্ট (আইসিডাব্লিউ) এর ২০ থেকে ৩৪.৫ মিটার পর্যন্ত ঢালাই কাজ শুরু হবে। ইনার কন্টেইনমেন্টের (অভ্যন্তরীণ কন্টেইনমেন্ট) এটা তৃতীয় ধাপ এবং জুনের মধ্যে এ ধাপের কাজ শেষ হবে। এর পর চার ধাপের এই ইনার কনটেনমেন্টের চতুর্থ ধাপ অর্থাৎ শেষ ধাপ ৩৪.৫ মিটার থেকে ৩৮.৫ মিটারের কাজ শুরু হবে। প্রথম ইউনিটের এই ইনার কন্টেইনমেন্টের কাজ শেষ হওয়ার পর এর উপরে ডুমস স্ট্যাকচার স্থাপন করা হবে। এই ডুমস স্ট্যাকচার স্থাপনের কাজ চলতি বছরের ২০ ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করার টার্গেট রয়েছে। এর পরপরই এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রথম ইউনিটের মূল যন্ত্র রিয়্যাক্টর প্রেসার ভ্যাসেল স্থাপন করা হবে। এই রিয়্যাক্টর প্রেসার ভ্যাসেলকে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের হার্ট বলা হয়।

এছাড়া প্রকল্পের মাউন্টিং ব্লক স্থাপনের কাজও চলছে। এই ধাপে প্র-স্ট্রেসড মাউন্টিং ব্লক রয়েছে ১২টি। এখন তৃতীয় ধাপে ১৪.৫ মিটার নির্মাণের কাজ শেষ পর্যায়ে। এর পাশাপাশি দ্বিতীয় ইউনিটের কাজও সিডিউল অনুযায়ী এগিয়ে চলছে বলেও ওই সংশ্লিষ্টরা জানান।

এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান বাংলানিউজকে বলেন, স্বাভাবিক সময়ে যে গতিতে কাজ চলার কথা সেই গতিতেই প্রকল্পের সিডিউল অনুযায়ী কাজ এগিয়ে চলছে। করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও প্রতিটি বিষয়ে স্বাস্থ্য বিধি মেনে কাজ হচ্ছে। যখন যেটা বসানোর কথা তখন সেটাই আমরা করছি। এখনও কাজ চালিয়ে যেতে পারছি এবং কাজের অগ্রগতি রয়েছে। দেশি-বিদেশি সাত থেকে আট হাজার ইঞ্জিনিয়ার, বিশেষজ্ঞ, কর্মকর্তা-কর্মচারী বর্তমানে এই প্রকল্পে কাজ করছেন। স্বাস্থ্য বিধি মেনে সব কাজ চালানো হচ্ছে।

এদিকে এই প্রকল্পে বর্তমানে রাশিয়ার দুই হাজারের বেশি ইঞ্জিনিয়র, কর্মকর্তা-কর্মচারী কাজ করছেন। এদের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার জন্য আরও ১৯৬ জনের একটি দল গত ৪ জুন বাংলাদেশে এসেছেন। তাদেরকে স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী রূপপুর প্রকল্পের কোয়ারেন্টিনে ১৪ দিন কাটানোর পর কাজে যুক্ত করা হবে। রাশিয়ায় প্রশিক্ষণ কোর্স শেষ হওয়ার পর বাংলাদেশের ৭০ জনের একটি দলও এদের সঙ্গেই ৪ জুন দেশে ফিরেছেন। কোয়ারেন্টিনে থাকার পর এরাও কাজে যুক্ত হবেন।

রাশিয়ায় এই প্রকল্পের যন্ত্রপাতি নির্মাণ কাজও এগিয়ে চলেছে। রুশ রাষ্ট্রীয় পরমাণু শক্তি করপোরেশনের (রোসাটম) যন্ত্রনির্মাণ শাখা এটমএনার্গোমাশ’তে আরএনপিপি’র যন্ত্রপাতি নির্মাণ হচ্ছে। রোসাটম সূত্রে জানা যায়, এরইমধ্যে প্রথম বাষ্প জেনারেটরে এসজি টিউবের ফিডিং কাজ সম্পন্ন হয়েছে। রূপপুর প্রকল্পটির দুইটি ইউনিটের প্রতিটিতে এ ধরনের চারটি জেনারেটর থাকবে। প্রথম ইউনিটের জন্য রিয়্যাক্টর প্রেসার ভেসেলের ‘কোর ব্যারেলের’ প্রস্তুত কাজও সম্পন্ন হয়েছে। সম্প্রতি রিয়্যাক্টর প্রেসার ভেসেলের গুরুত্বপূর্ণ দু'টি অংশের চূড়ান্ত ওয়েল্ডিংয়ের কাজও সম্পন্ন হয়েছে।

এদিকে রাশিয়ায় নির্মিতি যন্ত্রপাতিগুলোও প্রতিনিয়ত দেশে আসছে। জাহাজে মংলা বন্দরে আসার পর সেখান থেকে নদী পথে রূপপুর আনা হচ্ছে বলেও সংশ্লিষ্টরা জানান। রাশিয়ার সর্বাধুনিক প্রযুক্তির (৩ জি+ প্রজন্মের) ভিভিইআর ১২০০ মডেলে রিয়্যাক্টর স্থাপন করা হবে এই প্রকল্পে। প্রথম ইইনিট ২০২৩ এবং দ্বিতীয় ইউনিট ২০২৪ সালে উৎপাদনে যাবে।

এ বিষয়ে আরএনপিপির প্রকল্প পরিচালক ড. শৌকত আকবার বাংলানিউজকে বলেন, নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করার চ্যালেঞ্জ নিয়েই প্রকল্পের কাজ অব্যাহত রয়েছে। রাশিয়ার নতুন একটি টিমও এসেছে, কোয়ারেন্টিন শেষে তারা কাজে যোগ দেবে। সব কাজ এগিয়ে চলছে। এভাবে চলতে থাকলে চলতি বছরের ২০ ডিসেম্বরের মধ্যে ডুমস স্ট্রাকচার স্থাপনের কাজ শেষ করার টার্গেট রয়েছে। এর পর পরই এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রথম ইউনিটের মূল যন্ত্র রিয়্যাক্টর প্রেসার ভ্যাসেল স্থাপনের আশা করছি।

বাংলাদেশ সময়: ২১২২ ঘণ্টা, জুন ৬, ২০২০
এসকে/এজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।