একদম শুরু থেকে নিজের সক্ষমতার সবটুকু দিয়ে লড়ে যাচ্ছিলেন তিনি। সম্প্রতি তিনি নিজেই করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।
“কেবল সেবা নয়, মানুষকে দাও তোমার হৃদয়। হৃদয়হীন সেবা নয়, তারা চায় তোমার অন্তরের স্পর্শ’- মাদার তেরেসার এই উক্তিকে বুকে ধারণ করে নিরলস সেবা দিয়ে যাচ্ছিলেন ইনসাফি হান্না। বাংলাদেশের নার্সিং পেশায় নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন। দীর্ঘ সময় ধরে তিনি চট্টগ্রাম নার্সিং কলেজে শিক্ষকতাও করেছেন। তার দক্ষ হাত ধরে তৈরি হয়েছে অনেক নার্স, যারা দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দিয়ে আসছেন নিয়মিত।
করোনাকালে অফিস সময়ের বাইরেও এমনকি ছুটির দিনগুলোতেও কাজ করেছেন নিরলস। যারা তার সঙ্গে কাজ করে আসছিলেন তাদেরও উৎসাহিত করছিলেন সৈনিকের মতো মনোবলে। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত নার্সিং পেশায় নিয়োজিত সবার সুরক্ষা, রোগীদের সুবিধা এসব নিয়ে নিবেদিত প্রাণ কাজ করেছেন। যতদিন মেডিক্যালের সব নার্স যোদ্ধাদের সুরক্ষা সরঞ্জাম নিশ্চিত করতে পারেননি ততদিন নিজেও সুরক্ষা সরঞ্জামাদি ব্যবহার করেননি।
কর্মক্ষেত্রে সেবা ব্যবস্থাপনায় ইনসাফি হান্না এতোটাই ব্যস্ত ছিলেন যে, বুঝতে পারেননি কখন এই ভয়াল ভাইরাস তার শরীরেও বাসা বেঁধেছে। ঈদের আগের দিন থেকে শরীরে হালকা জ্বর অনুভব করছিলেন সঙ্গে কাশিও। ডাক্তারের পরামর্শে নমুনা পরীক্ষা করতে দিয়ে রিপোর্ট আসে করোনা পজিটিভ। হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন কিন্তু বেঁকে বসল শরীর। গত তিন মাসের ধকলে অনেকটা দুর্বল এই মানুষটিকে শেষ পর্যন্ত ভর্তি হতে হলো তারই কর্মস্থলের আইসোলেশান ইউনিটে। সবার সেবা নিশ্চিত করতে করতে সেবা-দলের সেনাপতি আজ নিজেই আক্রান্ত হয়ে আইসোলেশানে ভর্তি। যুদ্ধ করছেন করোনার সঙ্গে। এই যুদ্ধে পাশে আছে তার পরিবার, বন্ধু, ছাত্র-ছাত্রী আর তার প্রতিষ্ঠান এবং নানা পর্যায়ের মঙ্গলকামীরা।
এই মহৎপ্রাণ মানুষটির চিকিৎসার সন্তুষ্টি প্রকাশ করে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের বর্তমান পরিচালক মহোদয়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন তার পরিবার। করোনা যোদ্ধাদের সেনাপতি সুস্থ হয়ে আবার রণাঙ্গনে ফিরে আসবেন এটাই প্রত্যাশা তার ছাত্র-ছাত্রী, সহকর্মী ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের।
উল্লেখ্য, তিনি পেশার পাশাপাশি জড়িত আছেন অনেক সেবামূলক কাজে। রোটারি ক্লাব অব চিটাগং রোজ গার্ডেনের পরবর্তী সভাপতির দায়িত্ব জুলাই থেকে পালন করার জন্য ইতোমধ্যে তিনি মনোনীত হয়েছেন। চট্টগ্রামের রোটারি ক্লাবগুলোর সঙ্গে দারুন সমন্বয় করে করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জন্য সংগ্রহ করেছেন পিপিই, ফেসশিল্ড, মাস্ক, হট ওয়াটার পিউরিফায়ার ও অন্যান্য কার্যকরী সরঞ্জাম। এই যোদ্ধা সুস্থ হয়ে দ্রুত ফিরে আসুক রনাঙ্গণে।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩২ ঘণ্টা, জুন ০৫, ২০২০
আরএ