বৃহস্পতিবার (০৪ জুন) সকালে দুঃখ-ভারাক্রান্ত মলিন মুখে কথাগুলো বলছিলেন ঘূর্ণিঝড় আম্পানে বিধ্বস্ত কয়রার ঘাটাখালী এলাকার গৃহিনী হালিমা খাতুন।
উত্তর বেদকাশি গ্রামের বাসিন্দা খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের সাবেক ছাত্র ইব্রাহিম হোসেন বলেন, কপোতাক্ষ নদ পাড়ের গাজীপাড় ও হাজতখালী এলাকায় রিং বাঁধ দেওয়ার চেষ্টা করেছিল এলাকাবাসী।
তিনি জানান, দুর্গত কয়রার মানুষের দুঃখের কোনো শেষ নাই। নদীর জোয়ার-ভাটা মেনে এদের জীবন চলছে। এ অঞ্চলের জীবন-জীবিকা রক্ষায় সরকারিভাবে দ্রুত বাঁধ নির্মাণের দাবি জানান তিনি।
এদিকে আম্পান পরবর্তী গৃহহারা অনেকেই রাস্তার, বেড়িবাঁধের উপরে জীর্ণশীর্ণ ঘর তুলে বাস করছেন। এদের পায়ে জুতা নাই, পরনের কাপড়টাও ময়লায় ভরা, চুল শুকনো এলোমেলো, মুখের ওপর শান্ত গভীর বিষাদের ছায়া, এ যেন কোনো বহুদূরের তীর্থযাত্রী, রোদে পুড়ে, পানি ভিজে, অনাহারে অনিদ্রায় দিন-রাত চলছে। ঘরে পানি তাই তারা রাস্তায় বা গাছের উপর খুপড়ি ঘর করে বাস করছেন।
এলাকাবাসী জানান, ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের তাণ্ডবে অনেক স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে ঘরবাড়ি, মৎস্য ঘের, ফসল পানিতে তলিয়ে যায়। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোনো ভূমিকা না থাকায় দুর্ভোগে পড়া মানুষ নিজেরাই স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে বেড়িবাঁধ মেরামতের কাজ শুরু করেছে। কয়েকটি স্থানে তারা মেরামত করলেও তা আবার জোয়ারের পানির তোরে ভেঙে গেছে।
তারা আরও জানান, ঘূর্ণিঝড় আম্পানের তাণ্ডবে খুলনার উপকূলীয় কয়রা এলাকার বিভিন্ন স্থানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বেড়িবাঁধ ১৪টি বাঁধ ভেঙে মাছের ঘের ও ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। এছাড়া কয়রার সাতটি ইউনিয়নের হাজার হাজার গাছপালা উপড়ে পড়েছে। বেড়িবাঁধ ভেঙে কয়রায় লবণ পানি ডুকে পুকুর ও ঘেরের মাছ ভেসে গেছে। প্রতিদিন জোয়ারে পানি উঠে যাওয়ায় বানভাসিদের বেঁচে থাকাতে সংগ্রাম করতে হচ্ছে।
কয়রার মানুষের সমস্যা, জীবন যন্ত্রণা ও জীবনের নানাবিধ কষ্টের কথা তুলে ধরে নির্মাণ শ্রমিক এমএম সাইফুল ইসলাম বলেন, উত্তর বেদকাশির গাজীপাড়াসহ বেশ কিছু গ্রামের আম্পানে বিধ্বস্ত পরিবার গুলো রাস্তা কিংবা উঁচু স্থানে খুপড়ি ঘর করে আশ্রয় নিয়েছেন।
কয়রা সদর ইউনিয়নের তিন নম্বর ওয়ার্ডের ঘাটাখালি গ্রামের বাসিন্দা শেখ আশিক বিল্লাহ বলেন, আম্পানের পর থেকে দুর্গত এলাকার অনেকে ঘর-বাড়ি ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছেন উঁচু বাঁধের ওপরে খোলা আকাশের নিচে। অনেকে আবার এখনো আশ্রয় কেন্দ্রেই রয়ে গেছেন। ঝড়ে ঘর পড়ে গেছে। আর জোয়ারের পানি এখনো গ্রামে ঢুকছে। খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে তাদের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গাববুনিয়া এলাকার এক ব্যক্তি বলেন, গাববুনিয়া, গাজীপাড়া, কাশির হাটখোলা, হাজতখালী এই এলাকাগুলো আইলার পর একবারও ভালো করে মেরামত করা হয়নি। যে পরিমাণ বাজেট হয়েছে সে পরিমাণ কাজ হয়নি। সামান্য মেরামত করে লোক দেখানো কাজ করে টাকা তোলা হয়েছে।
কয়রা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইমতিয়াজ উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, ২০ মে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের তাণ্ডবে বেড়িবাঁধ ভেঙে নোনা পানিতে তলিয়ে গেছে কয়রার বিস্তীর্ণ এলাকা। কয়রার বিভিন্ন স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে কমপক্ষে ৪০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় ভুক্তভোগীরা নামের বাঁধ মেরামতে। গত কয়েকদিন ধরে কয়রার জোড়সিং, খাশিটানা, আংটিহারা স্লুইস গেট, গোলখালি, ছোট আংটিহারা বেড়িবাঁধ মেরামতের কাজ করেন হাজার হাজার গ্রামবাসী। পুরুষের পাশাপাশি হাঁটু সমান কাদাপানিতে দাঁড়িয়ে নারীও বাঁধ মেরামতে কাজ করেন। কিন্তু জোয়ারের তীব্রতায় অনেক জায়গায় বাঁধ আবার ভেঙে গেছে। বিফলে গেছে তাদের কষ্ট।
তিনি মাস্টার প্লান অনুযায়ী দ্রুত টেকসই বাঁধ নির্মাণের দাবি জানান।
বাংলাদেশ সময়: ১২০১ ঘণ্টা, জুন ৪, ২০২০
এমআরএম/এএটি