ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

উপকূলীয় বাঁধ নির্মাণে ৩০৫৬ কোটি টাকার প্রকল্প

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৩৬ ঘণ্টা, জুন ৪, ২০২০
উপকূলীয় বাঁধ নির্মাণে ৩০৫৬ কোটি টাকার প্রকল্প ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ।

ঢাকা: খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরাসহ বিভিন্ন উপকূলীয় বাঁধগুলো দুর্যোগে আর শতভাগ নিরাপত্তা দিতে পারছে না। প্রথমত এগুলোর উচ্চতা কম। দ্বিতীয়ত চিংড়ি চাষিরা লবণাক্ত পানি প্রবেশ করানোর জন্য বিভিন্নভাবে বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত করেছেন।

এছাড়া ঘূর্ণিঝড় আইলায় খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরাসহ উপকূলের বিভিন্ন স্থানে প্রায় ৬০০ কিলোমিটার বাঁধ পানির তোড়ে ভেসে যায়। প্রায় ১০ বছর পেরিয়ে গেলেও বাঁধগুলো পুনঃনির্মাণ সংস্কার বা উঁচু করা হয়নি।

ফলে ঝুঁকিতে রয়েছে এসব উপকূলের বাসিন্দারা।

জানা গেছে, খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরাসহ বিভিন্ন উপকূলীয় বাঁধগুলোর নকশা ১৯৬০ থেকে ৬৫ সালের। সমতল থেকে বাঁধগুলোর উচ্চতা ১০ ফুট। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় আম্পানের সময় ১২ থেকে ১৫ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস ছিল। ফলে বাঁধগুলো শতভাগ পানি আটকাতে পারেনি।

পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বাঁধ পুনঃনির্মাণের প্রয়োজন, অনেক বাঁধ উঁচু করতে হবে। তা না হলে আম্পানের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে আবার বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে উপকূলীয় এলাকা। এজন্য খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাটে মোট তিনটা প্রকল্প প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। উপকূলীয় বাঁধ উন্নয়ন প্রকল্প ফেজ আকারে প্রকল্প তিনটি বাস্তবায়িত হবে সমন্বিতভাবে।

তিনটি প্রকল্পের মোট ব্যয় হবে ৩ হাজার ৫৬ কোটি টাকা। প্রথম ফেইজে ১২শ’, দ্বিতীয় ফেইজে ৯শ’ ও তৃতীয় ফেইজে ৯৫৬ কোটি টাকা প্রাথমিক ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে।

পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম প্রধান মন্টু কুমার ঘোষ বাংলানিউজকে বলেন, আম্পানে দুর্বল হয়ে পড়া বাঁধ পুনঃনির্মাণ দরকার। এই জন্য খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাটে তিনটা প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। প্রকল্প তৈরির কাজ প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। একটি প্রকল্পের ব্যয় ১২শ’ কোটি টাকা। অপর দুটি ৯০০ ও ৯৫৬ কোটি টাকা। এসব এলাকার মানুষের জানমাল রক্ষা করতেই প্রকল্পগুলো হাতে নেওয়া হচ্ছে।

সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, উপকূলের মানুষের দাবি ছিল, টেকসই বেড়িবাঁধ। ২০০৯ সালে আইলার পর ১০ বছরেও তা নির্মিত হয়নি। উপরন্তু, জোড়াতালি দিয়ে বাঁধ সংস্কারে অর্থের অপচয় হচ্ছে।

শ্যামনগর ও আশাশুনির বেড়িবাঁধ এখনও বিধ্বস্ত অবস্থা রয়েছে। সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার গাবুড়া, পদ্মপুকুর, বুড়িগোয়ালিনী, মুন্সীগঞ্জ ও আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর, আনুলিয়া ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষ আজও তাদের ভিটায় পা রাখতে পারেনি। সাতক্ষীরা শহরসহ বিভিন্ন এলাকায় ভাড়াবাড়িতে জীবন যাপন করছেন তারা। এখনও আকাশে মেঘ ডাকলেই কপোতাক্ষ, খোলপেটুয়া ও শাকবাড়ীয়া নদীর তীরবর্তী মানুষরা আঁতকে ওঠেন। পানি একটু বাড়লেই ঘুম বন্ধ হয়ে যায় তাদের। আম্পানে সাতক্ষীরায় ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে ভেসে গেছে ১২ হাজার ২৫৭টি ঘের ও পুকুর। এতে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ১৭৬ কোটি ৩ লাখ টাকা।

১৫১ কিলোমিটার গতিবেগে সাতক্ষীরা উপকূলে আঘাত হানে আম্পান। এ সময় ১২ থেকে ১৫ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস ছিল।

শ্যামনগর, আশাশুনি, কালীগঞ্জ এবং সদর উপজেলায় ক্ষতি বেশি হয়েছে। এসব জায়গার কমবেশি ২০টি বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। কাঁচা ঘরবাড়ি ভেঙেছে অনেক। প্লাবিত হয়েছে চিংড়ি ঘের। মূলত চিংড়ি ঘের এবং আমের ক্ষতি বেশি হয়েছে। যেসব এলাকা ফাঁকা সেসব জায়গায় বেশি ভেঙেছে। আর ঘনবসতি এলাকায় গাছ পড়ে ঘরবাড়ি ভেঙেছে। ৩৫ দশমিক ৫ কিলোমিটার বাঁধ ঝুঁকিতে। এ বাঁধগুলোর উচ্চতা ১০ মিটার।

সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল খায়ের বাংলানিউজকে বলেন, আম্পানে সাড়ে ৩৫ কিলোমিটার বাঁধ ক্ষতির সম্মুখীন। এসব বাঁধ ১৯৬০ থেকে ৬৫ সালের নকশায়। বর্তমানে এসব বাঁধ একেবারেই অকার্যকর। নতুন নকশায় বাঁধ পুনঃনির্মাণ করা হবে। আমরা মন্ত্রণালয়ে চাহিদা পত্র পাঠিয়ছি। বাঁধগুলো ১৫ থেকে ১৬ ফিট উঁচু করার কথা বলেছি। এছাড়া বাঁধগুলোর ওপরে নানা ধরনের গাছ লাগানো হবে।

বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, ঘূর্ণিঝড় আম্পানের জোয়ারের জলোচ্ছ্বাস ও অতিবর্ষণে উপকূলীয় বাগেরহাটে সাড়ে চার হাজারের অধিক মাছের ঘের ভেসে গেছে। এতে মাছ চাষিদের প্রায় তিন কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। মাছের ঘের ভেসে যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছে জেলার হাজার হাজার চাষি।

জলোচ্ছ্বাসে জেলার রামপাল, মোংলা, বাগেরহাট সদর, মোরেলগঞ্জ ও শরণখোলাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। নতুন প্রকল্পের আওতায় বাঁধ পুনঃনির্মাণের পাশাপাশি নদীর তীর সংরক্ষণ করা হবে।

বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আরিফ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, আম্পানে বাগেরহাটে ৪২০ মিটার বাঁধ ভেঙে গেছে। ৬ কিলোমিটার বাঁধ উঁচু করা জরুরি। ৯৫০ মিটার নদীর তীর সংরক্ষণ কাজ বাকি রয়েছে। এসব কাজ দ্রত বাস্তবায়ন জরুরি অন্যথায় যে কোনো দুর্যোগে বড় ক্ষতি হবে বাগেরহাটে।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৩৬ ঘণ্টা, জুন ০৪, ২০২০
এমআইএস/এজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।