যাত্রীচাপ বাড়ার সাথে সাথে পরিবহন অর্থাৎ বাসের ট্রিপ সংখ্যাও বাড়ানো হচ্ছে, সেই সাথে চলছে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার চেষ্টা। তবে এ ক’দিনে বাস ব্যতিত স্বাস্থ্যবিধি মানা নিয়ে তেমন কোন তৎপরতা দেখা যায়নি অন্যকোন যাত্রীবাহী পরিবহনে।
বরিশাল নগরের চক বাজার এলাকার বাসিন্দা নুরুল আমিন বাংলানিউজকে বলেন, সরকার কিছু নির্দিষ্ট শর্তে গণপরিবহন চলাচলের অনুমতি দিয়েছে। যাত্রীবাহী বাসগুলো বেশি ভাড়া নিলেও স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রতি দুই সিটে তারা ১ জন যাত্রী নিচ্ছে, এমনকি মাস্ক ছাড়া বাসে উঠতে দিচ্ছে না যাত্রীদের। কিন্তু এর বিপরীত চিত্র দেখা গেছে বরিশাল নগর ও আন্তঃজেলা সড়কগুলোতে চলাচলরত থ্রি-হুইলারগুলোতে। এরমধ্যে রয়েছে ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সা, গ্যাসচালিত অটোরিক্সা, সিএনজি ও ডিজেলচালিত মাহিন্দ্রা নামে পরিচিত থ্রি হুইলারগুলো।
তিনি বলেন, সাধারণ সময়ে এসব থ্রি হুইলারের মধ্যে ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সায় চালকসহ ৬-৭ জন, গ্যাসচালিত অটোরিক্সায় চালকসহ ৭-৮ জন, সিএনজিতে চালকসহ ৫-৬ জন ও ডিজেল চালিত মাহিন্দ্রায় চালকসহ ৭-৯ জন আরোহী উঠছেন। তবে স্বাস্থ্যবিধি মানলে আকার অনুযায়ী এসব থ্রি হইলারে ৩ থেকে ৫ জনের বেশি ওঠার সুযোগ নেই।
নগরের শিকদার পাড়া এলাকার বাসিন্দা আরিফুর রহমান বলেন, সুযোগ বুঝে বেশিরভাগে থ্রি হুইলারেই গাদাগাদি করে মানুষ তোলা হচ্ছে, অনেক ক্ষেত্রে বাড়তি ভাড়া নিয়েও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা হয় না। শুধু তাই নয়, ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলে যে যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে, সেখানেও এক মোটরসাইকেলে গাদাগাদি করে চালকসহ তিনজন বহন করা হচ্ছে। তার ওপর কে মাস্ক পরছে কে পরছে না তাও দেখছে না কেউ। সড়কে কোন প্রতিবন্ধকতা বা বিষয়টি নিয়ে জিজ্ঞাসা করার কেউ না থাকায় সুযোগ পেয়ে গেছেন এসব যানবাহনের চালকরা।
তিনি বলেন, নথুল্লাবাদ থেকে বানারীপাড়া কিংবা বাবুগঞ্জের উদ্দেশ্যে যাত্রাকরা মাহিন্দ্রাগুলোতে অনেক সময় দেখা যায় সিটে গাদাগাদি করে ৮ জন যাত্রী তোলা হয়েছে। তার ওপর আবার পেছনের বাম্পারেও একজনকে দাঁড়িয়ে নেয়া হচ্ছে। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে কেউ কোন প্রতিবাদ করছেন না।
তবে এখানকার শ্রমিকরা বলছেন, যারা সিরিয়াল নিয়ে চলাচল করছেন কিংবা নির্ধারিত টার্মিনাল বা স্টপেজ পর্যন্ত যাচ্ছেন, তাদের নিয়মানুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি মেনেই চলাচল করতে হচ্ছে। কারণ, মালিক সমিতি থেকে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা দেয়া রয়েছে। তবে যারা টার্মিনালে না এসে মধ্যপথ দিয়ে চলাচল করছেন তারাই নিয়ম ভাঙছেন।
আর নিয়মানুযায়ী চলাচলরত মাহিন্দ্রা চালকরা বলছেন, তারা নির্দেশনা অনুযায়ী ভাড়া বাড়িয়ে নিয়ে কম সংখ্যক যাত্রী পরিবহন করছেন। এতে করে নিজেরা যেমন নিরাপদে থাকবেন তেমনি যাত্রীরাও। আর প্রায় গাড়িতেই বোতলে করে রাখা হচ্ছে জীবাণুনাশক স্প্রে।
সার্বিক বিষয়ে থ্রি হুইলার মালিক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান দুলাল বাংলানিউজকে বলেন, সরকারি নির্দেশনা তাদের জন্য না থাকলেও স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে তারা থ্রি হুইলারে যাত্রী কমিয়ে নেয়ার জন্য চালক ও শ্রমিকদের আগেই নির্দেশনা দিয়েছেন। চালক-শ্রমিকদের মাস্ক দেয়া হয়েছে, যানবাহনে বোতলজাত জীবাণুনাশক তরল দেয়া হচ্ছে। কারণ স্বাস্থ্যবিধি না মানলে চালকই যদি অসুস্থ হয়, তবে যানবাহন কে চালাবে।
তিনি বলেন, দূরের যাত্রার ক্ষেত্রে যাত্রী কমিয়ে কিছুটা ভাড়া বাড়িয়ে সমন্বয় করেও দেয়া হয়েছে মালিক সমিতির পক্ষ থেকে। যেমন বানারীপাড়ার ভাড়া ৩৫ টাকার স্থলে ৫০ টাকা করা হয়েছে। তারপরও যারা স্বাস্থ্যবিধি মানছে না, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। আর টার্মিনাল থেকে মাহিন্দ্রা ও সিএনজি চলাচল করার বিষয়টি সবসময় মনিটরিং করা হয়। তবে মাঝপথে গিয়ে অনেকেই তা মানছে তা। আবার যাত্রীরাও সচেতন নন, গাড়িতে ওঠার আগে আমরা মাস্ক ও হাতে জীবাণুনাশকের ব্যবহার নিশ্চিত করছি কিন্তু কিছুদূর গিয়ে তারা মাস্ক খুলে ফেলছেন।
তিনি বলেন, মাঝপথে যাত্রীরা যদি গাদাগাদি করে থ্রি হুইলারে না ওঠে তাহলে চালকরা তো কাউকে নিতে পারবে না, এতে সবাই নিরাপদ থাকবে। তাই চালক-শ্রমিকদের পাশাপাশি যাত্রীদেরও সচেতন হতে হবে।
তবে ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল চালকরা বলছেন, স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে তারা অবগত, তবে যাত্রী তোলায় তাদের কোন বিধি নিষেধ জুড়ে দেননি কেউ, সড়কে নেই কোন বাধাও।
এদিকে বরিশালের জেলা প্রশাসক এস এম অজিয়র রহমান যাত্রীসাধারণকে নিজ থেকে সতর্ক থাকার আহবান জানিয়ে এক বার্তায় বলেন, সমস্ত বরিশাল জেলাতেই করোনা রোগী ছড়িয়ে আছে। ফলে বাইরে বের হওয়ার আগে সকলকে চিন্তা করতে হবে ঝুঁকিমুক্ত আছেন কিনা। ঝুঁকি নিয়ে কখনোই চলাফেরা করবেন না, নাহলে আপনি ও আপনার পরিবার একটি মহাবিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে পারেন। আমরা চাই সবার সহযোগিতায় বরিশালকে করোনামুক্ত করতে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩১০ ঘণ্টা, জুন ০৩, ২০২০
এমএস/এমকেআর