ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

পাবনায় ওসির বিরুদ্ধে ৪ চেয়ারম্যানের অভিযোগ, তদন্ত কমিটি

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১৬ ঘণ্টা, জুন ২, ২০২০
পাবনায় ওসির বিরুদ্ধে ৪ চেয়ারম্যানের অভিযোগ, তদন্ত কমিটি ওসি এস এম মঈনুদ্দিন।

পাবনা: অর্থের বিনিময়ে নির্বাচিত চার জন চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত ফোন কললিষ্ট তুলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে পাবনার বেড়া উপজেলার আমিনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম মঈনুদ্দিনের বিরুদ্ধে।

ওসি এস এম মঈনুদ্দিনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন সংশ্লিষ্ট চার নির্বাচিত চেয়ারম্যান।

এ ঘটনায় এসব এলাকায় সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

আইন অমান্য করে ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করার কাজে আমিনপুর থানার ওসি চার জন বর্তমান চেয়ারম্যানের বিগত তিন মাসের ফোন কললিষ্ট ও কল রেকর্ড মোবাইল ফোন কোম্পানির কাছ থেকে উত্তোলন করেছেন বলে জানা গেছে।

অভিযোগকারী চার চেয়ারম্যান হলেন- পুরান ভারেঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) এম এ রফিকুল্লাহ, জাতসাখিণী ইউপির মো. রেজাউল হক মিয়া, রূপপুর ইউপির মো. আবুল হাশেম উজ্জ্বল ও মুসুনদিয়া ইউপির মিরোজ হোসেন।

মঙ্গলবার (২ জুন) সকালে জেলা পুলিশ সুপার ও জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে পুলিশের আইজি ও ডিআইজি বরাবর তারা লিখিতভাবে বিষয়টি অবহিত করেছেন বলে জানা গেছে।

এ ঘটনার সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধিরা জানান, আমাদের প্রত্যেকের ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনের কললিষ্টের গত মাসের শনিবার (২৯ মে) আমিনপুর থানার ওসি বেআইনিভাবে ফোন কোম্পানির কাছে থেকে সংগ্রহ করেছেন বলে আমরা জানতে পেরেছি। কোনো মামলা সংক্রান্ত বা অপরাধী শনাক্ত করা কাজে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সদস্যরা সেটি উত্তোলন করতে পারেন। ব্যক্তি কারো স্বার্থ রক্ষার জন্য অর্থের বিনিময়ে ওই ওসি এই কাজ করেছেন বলে অভিযোগ করেন তারা। এ ধরনের ঘটনা সারা বাংলাদেশে প্রথম ঘটলো। আমরা শুধু জনপ্রতিনিধিরা প্রত্যেকে স্ব-স্ব ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছি।

এ ঘটনার সঙ্গে পাবনা বেড়া উপজেলার পৌরমেয়র সদ্য চাল চোরের পক্ষ নেওয়ায় দল থেকে অব্যহতি প্রাপ্ত উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল বাতেন ও সুজানগর-২ আসনের সংসদ সদস্যের গোপন সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে অভিযোগ করেন ওই চেয়ারম্যানরা।  

তারা আরো জানান, ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে সংশ্লিষ্ট থানা থেকে প্রত্যাহারসহ বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি আমরা। এর পরবর্তীতে দলীয়ভাবে আমরা তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের প্রস্তুতি নিয়েছেন বলে জানান তারা।

অভিযোগকারী চেয়ারম্যানরা আরো জানান, কি কারণে কার জন্য আর কত অর্থের বিনিময়ে ওই ওসি এই বেআইনি কাজ করেছেন সেই বিষয়টি অবশ্যই খতিয়ে দেখবেন প্রশাসন।

আমরা প্রত্যেক চেয়ারম্যান দীর্ঘদিন ধরে সুনামের সঙ্গে জনসেবা করে আসছি। এ বিষয়ে সুষ্ঠু সমাধান না পেলে অবশ্যই জনগণকে সঙ্গে এই অন্যায়ের প্রতিরোধ করবো।

এই বিষয়ে পাবনা আমিনপুর থানার ওসি এস এম মঈনুদ্দিন বলেন, এই ধরনের কোনো ঘটনার সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) অফিসের মাধ্যমে এই ফোন কলের তথ্য পাওয়া যায়। আমি এই ধরনের কোনো কাজ করিনি।

ঘটনার বিষয়ে পাবনা জেলা এসপি শেখ রফিকুল ইসলাম বলেন, এই ঘটনা তদন্তের জন্য পাবনা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গৌম কুমার বিশ্বাসকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে এ ঘটনার প্রকৃত তথ্য ও প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। তদন্ত শেষে দোষী প্রমাণিত হলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

জেলা প্রশাসক কবীর মাহামুদ বলেন, এই বিষয়ে আমার কাছে চারটি আবেদন জমা পড়েছে। আইজি ও ডিআইজি বরাবর তারা আবেদন করেছেন।

এ বিষয়ে পাবনা সুজানগর-২ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আহম্মেদ ফিরোজ কবির বলেন, এই কথাটি তাদের মনগড়া। ফোন কললিষ্ট দিয়ে আমি কি করবো। এই তথ্যটি সত্য নয়। এই ঘটনার সঙ্গে আমার সম্পৃক্ততার কথাই আসে না।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পাবনা সদর-৫ আসনের সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক প্রিন্স বলেন, এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যানরা আমাদের কাছে লিখিতভাবে না জানালেও মৌখিকভাবে বলেছেন। বিষয়টি যেহেতু প্রশাসনিক তাই পুলিশ সুপারকে দেখার জন্য বলা হয়েছে। যেহেতু অভিযোগকারী ও অভিযুক্ত নাম যাদের শোনা যাচ্ছে তারা সবাই আমাদের দলীয় নেতাকর্মী। লিখিত অভিযোগ পেলে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে দলীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯০০ ঘণ্টা, জুন ০২, ২০২০
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।