ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

অনিয়মের অভিযোগে আরও ১১ জনপ্রতিনিধি বরখাস্ত

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১২ ঘণ্টা, জুন ২, ২০২০
অনিয়মের অভিযোগে আরও ১১ জনপ্রতিনিধি বরখাস্ত

ঢাকা: কর্মস্থলে অনুপস্থিতি, প্রধানমন্ত্রী প্রদত্ত মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে নগদ অর্থ সহায়তা ও ত্রাণ বিতরণে অনিয়মের অভিযোগে আরও ১১ জনপ্রতিনিধিকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়।

এদের মধ্যে ৪ জন ইউপি চেয়ারম্যান ও ৬ জন ইউপি সদস্য এবং ১ জন পৌর কাউন্সিলর রয়েছেন। স্থানীয় সরকার বিভাগ হতে মঙ্গলবার (০২ জুন) এ সংক্রান্ত পৃথক প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।

নতুন করে সাময়িকভাবে বরখাস্তকৃত ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানগণ হলেন- কিশোরগঞ্জ জেলার নিকলী উপজেলার সিংপুর ইউপি’র  মো. আনোয়ারুল হক, বাজিতপুর উপজেলার হালিমপুর ইউপির হাজী মো. কাজল ভূইয়া, বরগুনা জেলার সদর উপজেলাধীন এম বালিয়াতলী ইউপি’র শাহনেওয়াজ এবং নলটোনা ইউপি’র হুমায়ুন কবীর।

সাময়িকভাবে বরখাস্তকৃত ইউনিয়ন পরিষদ সদস্যগণ হলেন- ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সদর উপজেলাধীন মজলিশপুর ইউপি’র ২নং ওয়ার্ডের সদস্য হারিছ মিয়া এবং ৭নং ওয়ার্ডের সদস্য হাছান মিয়া, বরগুনা জেলার সদর উপজেলাধীন নলটোনা ইউপি’র ৭নং ওয়ার্ডের সদস্য হারুন মিয়া, ৮নং ওয়ার্ডের সদস্য মো. হানিফ, ১, ২ ও ৩ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা আসনের সদস্য মোসা. রানী এবং ৭, ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা আসনের সদস্য মোসা. ছাবিনা ইয়াসমিন (পলি)।

সাময়িকভাবে বরখাস্তকৃত পৌরসভার কাউন্সিলর হলেন- চট্টগ্রামের জেলার বোয়ালখালী পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সোলাইমান বাবুল।

প্রজ্ঞাপনগুলোতে উল্লেখ করা হয়, কিশোরগঞ্জ জেলার নিকলী উপজেলার সিংপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ারুল হক করোনো ভাইরাস (কোভিড-১৯) প্রাদুর্ভাবের সময় ত্রাণ কাজে সহায়তা না করে সরকারী নির্দেশনা অমান্য করে কর্মস্থলে অনুপস্থিত আছেন। একই জেলার বাজিতপুর উপজেলার হালিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাজী কাজল ভূইয়া স্থানীয় সরকার বিভাগের নির্দেশনা অমান্য করে দীর্ঘদিন যাবত কর্মস্থলে অনুপস্থিত, করোনো ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ বাস্তবায়নে বিঘ্ন সৃষ্টি, এপ্রিল মাসের ভিজিডি খাদ্যশস্য বিতরণ না করা, প্রধানমন্ত্রী প্রদত্ত মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে নগদ অর্থ সহায়তা কর্মসূচির সুবিধাভোগীদের তালিকা প্রণয়নে ব্যর্থ এবং কারণ দর্শানোর প্রেক্ষিতে নিজে জবাব প্রদান না করে অন্যের মাধ্যমে জবাব প্রদান করেছেন।  

প্রজ্ঞাপনগুলোতে আরও উল্লেখ করা হয়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সদর উপজেলাধীন মজলিশপুর ইউনিয়ন পরিষদের ২নং ওয়ার্ডের সদস্য হারিছ মিয়া এবং ৭নং ওয়ার্ডের জনাব হাছান মিয়ার বিরুদ্ধে সরকারি নিয়মনীতির ব্যত্যয় ঘটিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রদত্ত মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে নগদ অর্থ সহায়তা কর্মসূচির সুবিধাভোগীদের তালিকা প্রণয়নে ব্যাপক অনিয়মের মাধ্যমে নিজেদের নাম অন্তর্ভুক্ত করার অভিযোগ স্থানীয় তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে।  

বরগুনা জেলার সদর উপজেলাধীন এম বালিয়াতলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহনেওয়াজের বিরুদ্ধে নিয়ম বহির্ভূতভাবে মৎস্য ভিজিএফ চাল ৮০ কেজির স্থলে ৬০ কেজি প্রদান, তালিকার বাইরেও অন্যান্যদের চাল প্রদানসহ দুই জন গ্রামপুলিশকে চাল প্রদানের অভিযোগ স্থানীয় তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে। একই উপজেলার নলটোনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবীর ও একই ইউনিয়ন পরিষদের ৭নং ওয়ার্ডের সদস্য হারুন মিয়া, ৮নং ওয়ার্ডের সদস্য  হানিফ, ১, ২ ও ৩ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা আসনের সদস্য মোসা. রানী এবং ৭, ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা আসনের সদস্য ছাবিনা ইয়াসমিন (পলি)-এর বিরুদ্ধে জেলেদের তালিকা প্রণয়নে অনিয়ম, ভুয়া টিপসইয়ের মাধ্যমে চাল উত্তোলনপূর্বক আত্মসাত এবং চাল ওজনে কম দেওয়ার অভিযোগ স্থানীয় তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে।

চেয়ারম্যান ও সদস্য কর্তৃক সংঘটিত অপরাধমূলক কার্যক্রমের প্রেক্ষিতে তাদের দ্বারা ইউনিয়ন পরিষদের ক্ষমতা প্রয়োগ প্রশাসনিক দৃষ্টিকোণে সমীচীন নয় মর্মে সরকার মনে করে। কাজেই স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন ২০০৯ এর ৩৪(১) ধারা অনুযায়ী তাদের নিজ পদ হতে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।

সাময়িকভাবে বরখাস্তকৃত চেয়ারম্যান ও সদস্যদের পৃথক পৃথক কারণ দর্শানো নোটিশে কেন তাদেরকে চূড়ান্তভাবে তাদের পদ থেকে অপসারণ করা হবে না তার জবাবপত্র প্রাপ্তির ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার বিভাগে প্রেরণের জন্য অনুরোধ করা হয়।

পৃথক আরেকটি প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, চট্টগ্রাম জেলার বোয়ালখালী পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সোলাইমান বাবুল এর বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর মানবিক সহায়তা কার্যক্রমে অনিয়মের অভিযোগ জেলা প্রশাসক কর্তৃক তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।  

স্থানীয় সরকার বিভাগের জনসংযোগ কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান জানান, করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হবার পর এ নিয়ে মোট ৮৫ জন জনপ্রতিনিধিকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হলো। এদের মধ্যে ২৮ জন ইউপি চেয়ারম্যান, ৫১ জন ইউপি সদস্য, ১ জন জেলা পরিষদ সদস্য, ৪ জন পৌর কাউন্সিলর এবং ১ জন উপজেলা ভাইস-চেয়ারম্যান।

বাংলাদেশ সময়: ১৯১২ ঘণ্টা, জুন ০২, ২০২০
এমআইএইচ/জেআইএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।