সম্প্রতি মুক্তিপণের দাবিতে লিবিয়ায় মানব পাচারকারীদের গুলিতে মারা যায় সুজন মৃধা (২০) নামে এক যুবক। ওমর শেখ (২২) নামে আরেক যুবক গুলিবিদ্ধ হয়ে লিবিয়ার ত্রিপলি হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন।
নিহত সুজন মৃধার বাবা জানান, গোহালা ইউনিয়নের যাত্রাবাড়ী গ্রামের মানব পাচার চক্রের সদস্য রব মোড়লের মাধ্যমে ছেলেকে লিবিয়া পাঠান। আর এর জন্য তাকে ৩ লাখ ৯০ হাজার টাকা দেন।
আহত ওমর শেখের বাবা মো. কালাম শেখ জানান, রাঘদী ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার সুন্দরদী গ্রামের লিয়াকত মোল্লার মাধ্যমে ৪ লাখ ৫ হাজার টাকা দিয়ে তার ছেলেকে লিবিয়া পাঠান। বর্তমানে সে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় লিবিয়ার ত্রিপলি হাসপাতালে মৃত্যুর প্রহর গুনছে।
নিহত ও আহতের পরিবার আরো জানান, এই অঞ্চলের প্রধান দালাল মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার হোসেনপুর ইউনিয়নের শ্রীরামপুর গ্রামের জুলহাস শেখ। স্থানীয় দালালদের মাধ্যমে তিনি বিভিন্ন এলাকা থেকে বিদেশ পাঠানোর জন্য কাস্টমার ও টাকা সংগ্রহ করেন। এর মাধ্যমে স্থানীয় দালালও কমিশন পান।
মুকসুদপুরের বামনডাঙ্গা গ্রামের জয়নাল সরদার (৬৫) ও আকিজুল ইসলাম বাবুল (৬৮) বলেন, এই দালাল চক্র মুকসুদপুরসহ গোপালগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা থেকে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে মানুষ পাঠানোর কথা বলে তাদের কাছ থেকে টাকা নেয়। মধ্য প্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে ৪ থেকে ৮ লাখ এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ১২ থেকে ১৪ লাখ টাকা নেন। পরে সমুদ্র পথে তাদের ইউরোপে ও সড়ক পথে মধ্যপ্রাচ্যে পাঠানো হয় দালালদের মাধ্যমে। তখন ওই সব দালালরা আবার বিদেশগামী সদস্যদের পরিবারগুলোর কাছে বিভিন্ন পন্থায় মুক্তিপণ দাবি করে। এতে অনেক যুবকের স্বপ্ন পূরণ তো দূরের কথা বরং মানব পাচারকারী হাতে অথবা অবেধ পথে নৌকায় করে ইতালিসহ বিভিন্ন দেশে যাওয়ার সময় অথৈ সমুদ্রে জীবন দিতে হচ্ছে।
রাঘদী ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার সুন্দরদী গ্রামের লিয়াকত মোল্লা তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ওমর শেখকে আমি লিবিয়া পাঠাইনি। আমার মামাতো ভাই নুর আলম লিবিয়া থাকেন। তার মাধ্যমে আমার আপন চাচাতো ভাই ইমন মোল্লাকে লিবিয়া পাঠিয়েছি।
এরা লিবিয়া যাওয়ার জন্য ঢাকার আবুল হোসেন নামে এক লোকের কাছে টাকা দেন। টাকা দেওয়ার সময় তিনি সেখানে উপস্থিত ছিলেন বলে জানান। আর লিবিয়ায় তার চাচাতো ভাই ভাল আছেন বলেও তিনি জানান।
ওই মেম্বার আরো জানান, তিনি এখানে মেম্বার হলেও ৬ মাস মালেশিয়া থাকেন আর ৬ মাস বাংলাদেশে থাকেন। সেখানে তার ব্যবসা আছে। আর তিনি যখন মালেশিয়া থাকেন তখন তার ভাই তার মেম্বারী চালান।
এ ব্যাপারে রব মোড়লের ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে (০১৭১২৩৬০৯১৪) ফোন দিলে তার নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।
গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা জানান, আমরা বিষয়টি বিভিন্ন গণমাধ্যম থেকে জেনেছি। বিষয়টি খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে ইউএনও-কে পাঠানো হয়েছে। আমরা দালাল চক্র ধরতে চেষ্টা চালাচ্ছি।
বাংলাদেশ সময়: ২১৪২ ঘণ্টা, মে ৩০, ২০২০
আরএ