যমুনা নদী বিধৌত সদর, কাজিপুর, চৌহালী, শাহজাদপুর, বেলকুচি এবং চলনবিল অধ্যুষিত উল্লাপাড়া ও তাড়াশ উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় পাট, সবজি এবং তিলের পাশাপাশি তলিয়ে গেছে শত শত বিঘা জমির পাকা ধান। পানিতে নিমজ্জিত ধান কেটে ঘরে তুলতে কৃষকেদর বেশি শ্রমিক লাগাতে হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কাজিপুরের নিশ্চিন্তপুর, মনসুর নগর, চালিতাডাঙ্গা, ও গান্ধাইল, সদরের মেছড়া ও কাওয়াকোলা, বেলকুচির সদর ও বড়ধুল, চৌহালীর ঘোরজান, স্থল, খাস কাউলিয়া, বাগুটিয়া, শাহজাদপুরের জালালপুর, কৈজুরী, সোনাতনী ইউনিয়নের চরাঞ্চলের শত শত বিঘা জমির পাকা ধান পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে।
অপরদিকে চলনবিল অধ্যুষিত তাড়াশ ও উল্লাপাড়া উপজেলার নিম্নাঞ্চলের ধানও ডুবে গেছে। তলিয়ে যাওয়া ধান ডিঙি নৌকা ও এক ধরনের কড়ই ব্যবহার করে ডুব দিয়ে কাটছে কৃষকেরা। এসব ক্ষেত্রে অতিরিক্ত শ্রমিক লাগাতে হচ্ছে।
কাজিপুরের নিশ্চিন্তপুর গ্রামের কৃষক মোজাম্মেল হক বলেন, কয়েকদিন আগে ধান পাকলেও বৃষ্টির কারণে কাটতে পারিনি। এরই মধ্যে যমুনায় পানি বৃদ্ধির ফলে ধান তলিয়ে গেছে। বাধ্য হয়েই অতিরিক্ত শ্রমিক লাগিয়ে ধান কেটে ঘরে তুলছি।
গাড়াবেড় গ্রামের কৃষক লাল মিয়া বলেন, কাটবো কাটবো করেও সময় পাইনি। হঠাৎই বৃষ্টি হওয়ায় এখন বিপদে পড়েছি।
সদর উপজেলার কাওয়াকোলা ইউনিয়নের বয়রা গ্রামের কৃষক আমজাদ হোসে বলেন, যমুনায় পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আমাদের এলাকার নিচু জমিগুলো তলিয়ে গেছে। এতে সবজি, পাট ও তিলের পাশাপাশি পাকা ধানও পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে।
এদিকে কাজিপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রেজাউল করিম জানান, ১০ দিন আগেই পাকা ধান কাটার জন্য এলাকায় মাইকিং করা হয়েছে। মাইকিং শুনে অনেকেই ধান কেটে ঘরে তুলেছেন। যারা নির্দেশনা শোনেননি তাদের ধান পানিতে তলিয়ে গেছে।
তাড়াশ উপজেলা কৃষি অফিসার লুতফুন্নাহার লুনা বলেন, চলনবিলের নিম্নাঞ্চলের ধানগুলো পানিতে তলিয়ে গেছে। তবে বেশিরভাগ ধানই কাটা হয়ে গেছে। এখন প্রায় ১শ বিঘার মতো ধান পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী এ কে এম রফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, গত ৮ দিনে তীব্রগতিতে যমুনার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। গত কয়েক বছরে এমন হারে যমুনার পানি বৃদ্ধি দেখা যায়নি। মাত্র ৮ দিনে ৪ দশমিক ২৩ মিটার পানি বৃদ্ধি পেয়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. হাবিবুল হক জানান, জেলায় মোট এক লাখ ৪১ হাজার ৪০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১ লাখ ১৩৮ হেক্টর অর্থাৎ ৭১ ভাগ জমির ধান কাটা শেষ হয়ে গেছে। এখনও ২৯ ভাগ জমির ধান মাঠে রয়ে গেছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সেগুলোও কাটা শেষ হয়ে যাবে।
তিনি বলেন, যমুনার পানি বৃদ্ধি ও বর্ষণের ফলে সবজি, তিল ও পাটের ক্ষতি হয়েছে। নিচু অঞ্চলের বোরো ধান তলিয়ে গেলেও সেগুলোর কোনো ক্ষতি হয়নি। এ কারণে পাকা ধান নিমজ্জিত হওয়ার হিসাব আমাদের কাছে নেই। তবে এসব ধান ঘরে তুলতে কৃষকদের খরচ বেড়ে গেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৬ ঘণ্টা, মে ৩০, ২০২০
আরএ