যশোর সরকারি সিটি কলেজে অনার্স প্রথম বর্ষের পড়াশুনা ছেড়ে দিয়ে দালালের প্রলোভনে বাবার জমিজমা বিক্রি আর গচ্ছিত টাকায় চারমাস আগে লিবিয়া পৌঁছালেও সে দেশের মানবপাচারকারীদের গুলিতে নির্মমভাবে খুন হন রাকিব।
শুক্রবার (২৯ মে) রাতে রাকিবের মৃত্যু সংবাদ তার বাড়িতে পৌঁছালে স্বজনদের আর্তনাদে এলাকায় নেমে আসে শোকের ছায়া।
>>>মুক্তিপণ দিতে রাজি হলেও লিবিয়ায় খুন হয় যশোরের রাকিবুল
শনিবার (৩০ মে) মৃত রাকিবের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ছেলেকে হারিয়ে মা মাহেরুন নেছা বিলাপ করে বলছেন, ‘আমাগের ছাদ দেওয়া বাড়ি লাগবে না, টাকা-পয়সাও লাগবে না, বাজান তুই বাড়ি ফিরে আয়’।
আদরের ছোট ছেলেকে হারিয়ে হতবিহ্বল বাবা ইসরাইল হোসেন ও মা মাহেনুর নেছা। ছেলেকে দেখার আকাঙ্ক্ষায় তাদের আহাজারি যেন কিছুতেই থামছে না। এলাকার শত শত নারী-পুরুষ ছুটে এসেছেন তাদের সান্তনা দেওয়ার জন্য। কিন্তু এ দৃশ্য দেখে কেউ শান্তনার ভাষা হারিয়ে ফেলছেন। চার ভাইবোনের মধ্যে রাকিবুল সবার ছোট। যে কারণে তার মৃত্যুর খবরে মা-বাবা, ভাই-বোন মুষড়ে পড়েছেন। তাদের বাড়িতে এখন চলছে শোকের মাতম।
নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, দালালের মাধ্যমে সাড়ে চার লাখ টাকায় রাকিবুল লিবিয়ায় পৌঁছায়। কিন্তু দালাল চক্র লিবিয়ার একটি শহরে রাকিবকে আটকে রেখে নির্যাতন শুরু করে। গত ১৭ মে লিবিয়ার ওই চক্রটি পরিবারের লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করে মোবাইলে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। জিম্মিকারীরা ওই টাকা দুবাই থেকে নিতে চেয়েছিল। বাধ্য হয়ে মুক্তির জন্য ওই টাকা দিতে রাজিও হয়েছিলেন তারা। আগামী ১ জুন পর্যন্ত তাদের কাছ থেকে সময় নিয়েছিলেন। কিন্তু এরই মধ্যে মৃত রাকিবুলের লিবিয়া প্রবাসী চাচাতো ভাই ফোন করে জানান, ২৬ বাংলাদেশিকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, তার মধ্যে রাকিবুলও রয়েছেন।
গৃহযুদ্ধ কবলিত দেশ লিবিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় মিজদা শহরে বৃহস্পতিবার ২৬ বাংলাদেশিসহ ৩০ অভিবাসীকে খুন করা হয়। তাদেরই একজন এই রাকিবুল।
রাকিবুলের বাবা ইসরাইল হোসেন বাংলানিউজকে জানান, রাকিবুলের চাচাতো ভাই ফিরোজ লিবিয়া প্রবাসী। চার মাস আগে ফিরোজ লিবিয়ায় থাকা এক বাংলাদেশি দালাল আব্দুল্লাহ সঙ্গে যোগাযোগ করে সাড়ে চার লাখ টাকার বিনিময়ে রাকিবুলকে লিবিয়ায় নিয়ে যান।
লিবিয়ায় অবস্থানরত বাংলাদেশি দালাল আব্দুল্লাহর মাধ্যমে প্রথমে ভারত থেকে দুবাই তারপর মিশর হয়ে রাকিবুল লিবিয়ার ত্রিপুরায় পৌঁছায়। এরপরে লিবিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় মিজদা শহরে নিয়ে রাকিবুলকে জিম্মি করে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ চাওয়া হয়। টাকা দিতে রাজি হওয়ার শর্তেও মানব পাচারকারীদদের গুলিতে ২৬ বাংলাদেশির মধ্যেও রাকিব নিহত হয়।
তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন এনজিও ভিটেবাড়ি বিক্রি করেও রাকিবের মুক্তিপণের টাকা জোগাড় করা হয়েছিল। আগামী ১ জুন পর্যন্ত তাদের কাছ থেকে সময় নিয়েছিলেন। কিন্তু এরমধ্যে পাচারকারীদের গুলিতে নিহত হয়। সরকারের কাছে তাদের দাবি দ্রুত আইনিপ্রক্রিয়া শেষে সন্তানের মরাদেহ বাড়িতে আনতে চাই।
রাকিবুলের মা মাহেরুন নেছা বাংলানিউজকে বলেন, মুক্তিপণের দাবিতে রাকিবুলকে প্রতিনিয়ত নির্যাতন করতো। মুক্তিপণের টাকা জোগাড় করাও হয়েছিল। আমার ছেলেকে হত্যা করেছে এর বিচার চাই। আমার ছেলের মরদেহ যেন দ্রুত দেশে এনে গ্রামেই কবর দিতে পারি। জীবিত ছেলেকে তো আর দেখতে পাবো না ! ছেলের কবর দেখেই শান্তনা নিবো।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৫ ঘণ্টা, মে ৩০, ২০২০
ইউজি/এনটি